অগ্রহায়ণের শুরুতে প্রকৃতিতে নেমেছে শীতের আবহ, ধীরে ধীরে কমছে তাপমাত্রা। আবহাওয়ায় ঠাণ্ডা-ঠাণ্ডা ভাব জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী। শীতের প্রস্তুতি নিতে তাই শুরু হয়েছে গরম কাপড়ের কেনাকাটা। চাহিদা বাড়ায় রাজধানীর মার্কেট-শপিংমল এবং ফুটপাতগুলোতে জমে উঠেছে জ্যাকেট, সোয়েটার, বাহারি চাদর, ফুলহাতা গেঞ্জি ও হুডিসহ নানান শীতের কাপড়ের পসরা। এসব দোকানে প্রতিদিন বাড়ছে ক্রেতাদের ভিড়। তবে ফুটপাতের দোকানগুলোয় ক্রেতাদের ভিড় ও বিক্রি তুলনামূলক বেশি। অপরদিকে শীত পুরোপুরি না নামায় কম্বল ব্যবসায়ীদের বেচাবিক্রিতে এখনো ভাটা।
সাধ্যের মধ্যে গরম কাপড় কেনাকাটায় অনেকের পছন্দের গন্তব্য রাজধানীর গুলিস্তান এলাকা। পাইকারি ও ছোট-বড় খুচরা মার্কেটের পাশাপাশি, এ এলাকার ফুটপাতগুলোতে রয়েছে অসংখ্য শীতের কাপড় ও কম্বলের দোকান। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, দেশি-বিদেশি নানা ডিজাইনের শীতের কাপড় ও কম্বলে সাজানো হয়েছে দোকান। ফুটপাতে ভিড় বেশি। গুলিস্তান মাজার মোড়ের পাশে ফুটপাতে বাচ্চাদের ফুলহাতা গেঞ্জি ও পাজামা বিক্রি করেন মো. সিরাজ আলী। তিনি বলেন, বড়দের আগে বাচ্চাদের শীতের কাপড়ের ব্যবসা জমে উঠেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে ক্রেতাদের ভিড় ও বেচাবিক্রি বেড়েছে।
বিক্রি বাড়ায় মুখে হাসি হকার মো. হাফিজউদ্দিনের মুখেও। এ বিক্রেতা বলেন, এবার সময়মতোই বেচাবিক্রি শুরু হয়েছে। ব্যবসা ভালো যাচ্ছে। এবার গেঞ্জির দাম আগের চেয়ে পিসপ্রতি ৫০ টাকা পর্যন্ত বেশি।
শীতের কাপড় কিনতে আসা শাজাহান মোল্লা বলেন, রাতে শীত পড়ছে। বাচ্চাদের গরম জামা দরকার। তাই মার্কেটে এসেছি। কিন্তু মার্কেটের দোকানে যা দাম, তা আমাদের মতো অল্প আয়ের মানুষের পক্ষে কেনা কষ্টকর। তাই ফুটপাত থেকে কিনছি।
গুলিস্তানে পোশাকের পাইকারি মার্কেট ঢাকা ট্রেড সেন্টারের কোমফোর্ট জোনের ব্যবসায়ী মো. দুলাল হোসেন বলেন, শীতের কাপড়ের চাহিদা বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু আমরা সরবরাহ করতে পারছি না। কারখানা থেকে সরবরাহ কম আসছে। বিদ্যুৎ বিভ্রাট ও গ্যাস সংকটের কারণে কারখানায় উৎপাদন কমে গেছে। তাই সরবরাহও হচ্ছে কম। কাঁচামালের দাম ও আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় দাম কিছুটা বাড়তি রয়েছে। পাইকারিতে ফুলহাতা গেঞ্জি প্রতিপিস ২৩০ থেকে ২৬০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছি। সাধারণ মানের ১২০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি করছি।
একই মার্কেটের বুসরা ফ্যাশনের পাইকারি বিক্রেতা মো. বিল্লাল বলেন, ভালো অর্ডার পাচ্ছি। ঢাকার বাইরে থেকে বেশি অর্ডার আসছে। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী, পণ্য সরবরাহ করা যাচ্ছে না। কারণ কারখানা থেকে কম পরিমাণে পণ্য হাতে পাচ্ছি।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির তথ্যানুযায়ী, প্রতিবছর শীতের মৌসুমে সারাদেশে ৮ থেকে ১০ হাজার কোটি টাকার গরম কাপড়ের বাণিজ্য হয়। করোনার পর থেকে এ ব্যবসায় ভাটা পড়েছে। এবার বেচাবিক্রি একটু আগে শুরু হওয়ায় আশার আলো দেখছেন ব্যবসায়ীরা।
মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, এবার বেচাবিক্রি ভালো হলেও আশানুরূপ নয়। মার্কেটগুলোতে বিক্রি এখনো তুলনামূলক কম। পুরোপুরি শীত নামলে ব্যবসা জমে উঠতে পারে। তবে যেটুকু ব্যবসা হচ্ছে বা হবে বলে মনে হচ্ছে, তাতে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হলেও তা মন্দের ভালো।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎ বিভ্রাট ও গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় সরবরাহ কম হচ্ছে। এর সঙ্গে ডলারের বাজারে অস্থিরতা ও আমদানিতে খরচ বেড়ে যাওয়ায় আমদানিও কমেছে। সব মিলিয়ে পাইকারি বাজারে সরবরাহ কিছুটা কম রয়েছে।
রাজধানীর সাইনবোর্ডের পোশাক ও কম্বলের কারখানা হামজা গার্মেন্টসের কর্ণধার মো. বিলাল হাজী বলেন, বিদ্যুতের সমস্যা এখন অনেকটা কমে এলেও গ্যাস সংকট কমেনি। সব মিলিয়ে আমাদের উৎপাদন আগের চেয়ে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। অপরদিকে কাঁচামালসহ কারখানায় অন্যান্য খরচ বেড়ে যাওয়ায় দামও বাড়তি রয়েছে। গত বছর যে বাংলা কম্বল ২৬০ টাকা প্রতিপিস দরে বিক্রি করেছি, এখন তা ২৮০ টাকা দরে বিক্রি করতে হচ্ছে।
রাজধানীর আরেক মার্কেটপাড়া নিউমার্কেট এলাকার ব্যবসায়ীরাও বলছেন, শীতের পোশাকের বিক্রি শুরু হয়েছে। দাম এবার বাড়তি। এখানকার নিউ সুপার মার্কেটের টিএস ফ্যাশনের ব্যবসায়ী এআর সোহেল জানান, আমদানি খরচ বেশি হওয়ায় এবার চীন ও ইন্ডিয়াসহ বিদেশি শীতের কাপড়ের দাম বেড়েছে। তার থেকেও বেশি বেড়েছে দেশি গার্মেন্টসের জ্যাকেট, ওভারকোট ও সোয়েটারে। গতবারের চেয়ে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত দাম বেশি। তার ওপর অর্ডার দিয়েও চাহিদা অনুযায়ী পণ্য পাওয়া যাচ্ছে না।
শীতের পোশাকের বাজার গরম হলেও কম্বলের বিক্রিবাট্টা এখনো জমেনি। নিউমার্কেট ও বায়তুল মোকাররম এলাকার কম্বলের খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, কম্বল ও কমফোর্টারের চাহিদা এখনো বাড়েনি। তবে পুরোপুরি শীত পড়লে বিক্রি বাড়বে বলে আশা করছেন তারা।