ব্যাংক খাতে আবার জালিয়াতি
দেশে অনেক জালিয়াতচক্র তৈরি হয়েছে। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন ব্যাংকের কতিপয় কর্মকর্তা। কেবল ব্যাংক নয়, প্রশাসনেরও নানা স্তরে এসব মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। ফলে উভয়ের যোগসাজশে অপরাধী প্রকৃতির উচ্চাভিলাষী ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে এমন ঘটনা বারবার ঘটছে। সম্প্রতি স্যোশাল ইসলামী ব্যাংকের তিন কর্মকর্তা ও ভূমি অফিসের কয়েকজনের বিরুদ্ধে এমন একটি জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে এসেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তে। এ ঘটনায় ব্যাংকের ১৫ কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। এ নিয়ে দুদক একটি মামলা করেছে। তবে আমরা সবাই জানি, এ রকম ঘটনা এ একটিই ঘটেনিÑ অতীতেও এমন ঘটনা উদ্ঘাটিত হয়েছে, যথারীতি মামলাও হয়েছে এবং অনেকটিতে অপরাধীদের শাস্তিও হয়েছে। উদ্বেগের বিষয় হলোÑ গ্রেপ্তার, মামলা ও শাস্তি সত্ত্বেও আর্থিক কেলেঙ্কারি, জালিয়াতি, টাকাপাচার ও নানা অপরাধ কিছুতেই থামছে না।
বাংলাদেশে যে দুর্নীতি ব্যাপকভাবে চলছে, এ কথা আমরা সবাই জানি। বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে এবং শুরুর দিকের ঘোষণায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থানের কথা বলা হলেও আজকাল এ প্রসঙ্গে সরকারের শীর্ষপর্যায়ে যেন নীরবতাই বিরাজ করছে। বর্তমানে বিরোধী দলের রাজনৈতিক কার্যকলাপের চাপে নিজেরাও রাজনৈতিক বক্তব্য ও কর্মসূচিকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। জনসভা ছাড়াও বিভিন্ন সভায় প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং তার বক্তব্যে প্রতিপক্ষের সমালোচনাকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন। কিন্তু অতীতেও দেখা গেছে, কোনো সরকারের মেয়াদ শেষের পর্যায়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়তে থাকলে সেই সুযোগে বিভিন্ন খাতে দুর্নীতিও বাড়ে। অথচ জনগণ ভেবেছে, তিন মেয়াদে সরকার পরিচালনার পর বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার এ রকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে না। সবকিছুর ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ বজায় থাকবে। আশা করি, প্রধানমন্ত্রী এদিকে বিশেষভাবে নজর দেবেন।
দেশের প্রতিটি খাতেই দুর্নীতি ও অদক্ষতার খেসারত দিতে হয়। বর্তমান সরকার দেশকে এ অবস্থা থেকে উদ্ধারের যথেষ্ট সময় পেয়েছিল। কিন্তু বলতেই হবে, সে সুযোগ কাজে লাগানো হয়নি। সরকারের কাছ থেকে ব্যক্তি ও গোষ্ঠীবিশেষ প্রশ্রয় পেয়েছে এবং এভাবে দুর্নীতি ও অদক্ষতা লালিত হয়েছে। বুঝতেই হবেÑ দুর্নীতি ও অদক্ষতা এ পর্যায়ে রেখে কোনো দেশের পক্ষেই উন্নত দেশে উত্তরণ সম্ভব নয়। তাই সেই পথে যাত্রার সময় বাংলাদেশকে এ দুটি বিষয়ে অবস্থার গুণগত উন্নতি ঘটাতে হবে। আশা করি, সরকার এবং সব রাজনৈতিক ও নাগরিক গোষ্ঠী এ বিষয়ে আন্তরিক হবে এবং নিজেদের ভূমিকা সম্পর্কে সচেতন থাকবে।