advertisement
advertisement
advertisement

আমাদের উন্নয়ন চোখে পড়ে না অনেকের

বঙ্গবন্ধু টানেলের পূর্ত কাজের সমাপ্তি উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

চট্টগ্রাম ব্যুরো
২৭ নভেম্বর ২০২২ ১২:০০ এএম | আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০২২ ১২:১০ এএম
কর্ণফুলী দক্ষিণ টিউবের টানেলের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
advertisement

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কর্নফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু টানেল বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বাড়াবে। এটি দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম টানেল। এটি এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে অবদান রাখবে। টানেলের একটি টিউব উদ্বোধনের মতো অবস্থায় এসেছে। কিন্তু একটি টিউব দিয়ে গাড়ি চালানো সমীচীন হবে না।

গতকাল শনিবার সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের দক্ষিণ টিউবের পূর্ত কাজের সমাপ্তি উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বিরোধী দলের নাম উল্লেখ না করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের উন্নয়ন অনেকের চোখে পড়ে না। তারা চোখের ডাক্তার দেখাতে পারেন। দেশে একটি ভালো চক্ষু ইনস্টিটিউট করে দিয়েছি। বিরোধী দল নিজেরাও কিছু করেনি। অর্থ চোরাচালানি আর অস্ত্র চোরাচালানি ছাড়া কিছুই করতে পারেনি।’

advertisement

টানেলের পতেঙ্গা পয়েন্টে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তাতে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

চট্টগ্রামসহ সারাদেশের ব্যাপক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলাম নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু করব। আমরা দেখিয়ে দিয়েছি, বাংলাদেশও পারে। চীন আমাদের সহযোগী ছিল। তাদের ধন্যবাদ জানাই। এর মধ্যে আমরা একসঙ্গে অনেক সেতু উদ্বোধন করেছি। বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রামে অনেক সেতু একসঙ্গে

advertisement

উদ্বোধন করা হয়েছে। এতে ওই এলাকার চেহারাই পাল্টে গেছে। আগামীতে ঢাকায় মেট্রোরেলের উদ্বোধন হবে। চট্টগ্রামেও মেট্রোরেল স্থাপনের জন্য সমীক্ষা শুরু হয়েছে। চট্টগ্রামে যাতে মেট্রোরেল হয়, সেই ইচ্ছা আমার আছে। সমীক্ষার ওপর এটি নির্ভর করবে। চট্টগ্রামে অনেক পাহাড়-পর্বত, তবু ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়।’

টানেল নির্মাণের বিষয়ে চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মহিউদ্দিন চৌধুরী বারবার টানেল নির্মাণের কথা বলেছেন। তিনি বলতেনÑ একই নদীর ওপর অতিরিক্ত সেতুর কারণে নদীতে বেশি পলি জমে নাব্যতা নষ্ট হয়ে যায়। চীন প্রথমে এটি করে দিতে রাজি হয়নি। আমরা মধ্যরাতে খেতে খেতে চীনের প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাবটি তুলি। এর পর তিনি রাজি হয়ে যান। এর পর প্রকল্প সমীক্ষা, নকশাসহ সামগ্রিক কাজ একসঙ্গে হয়েছে। তিনি বলেন, একটি টিউবের কাজ শেষ হলো। আমার আগ্রহ আছে টানেলটি ঘুরে দেখব। আমার কাছে টানেলটি একটি বিস্ময়। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, আমি যেন শিগগির টানেলটি ঘুরে আসতে পারি। চট্টগ্রামে আমার মন পড়ে আছে।’

চট্টগ্রামের উন্নয়নের গুরুত্ব তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, চট্টগ্রামের ভৌগোলিক অবস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য আমরা চট্টগ্রামের উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করি। কর্নফুলী নদীর দুপাড়ে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও শিল্প বেল্ট হচ্ছে। বিভিন্ন দেশ থেকে বিনিয়োগ আসছে। দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামের সঙ্গে কক্সবাজারের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হয়নি। আমরা আশা করব জাইকা (জাপান আন্তর্জাতিক সহযোহিতা সংস্থা) দ্রুত এ মহাসড়কের উন্নয়নকাজ শুরু করবে। টানেলের দুই প্রান্তে দ্রুত উন্নয়ন হবে। শহর সম্প্রসারণ হবে। চট্টগ্রাম হবে ওয়ান সিটি টু টাউন। ভবিষ্যতে চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়কের দুপাশে আরও দুটি লেন হবে। এতে চট্টগ্রামের গুরুত্ব আরও বেড়ে যাবে। মহেশখালীতে গভীর সমুদ্রবন্দর হচ্ছে। ফলে কক্সবাজারের গুরুত্বও বেড়ে যাচ্ছে। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ সড়ক হবে। আমরা সমুদ্রের সীমানা বাড়িয়ে সমুদ্র সম্পদকে দেশের অর্থনীতির কাজে লাগাচ্ছি। চট্টগ্রাম বন্দরকেও সম্প্রসারণ করেছি। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি। এখন মানুষ ঘরে বসেই উপার্জন করছে। আমরা দারিদ্র্যের হার কমিয়েছি। দেশে আর দরিদ্র মানুষ থাকবে না।

বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনার কারণে উন্নত দেশও হিমশিম খাচ্ছে। আমরা নিজেদের সম্পদ ব্যবহার করে এগিয়ে যাচ্ছি। করোনার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পণ্যের দাম সারাবিশ্বেই বেড়েছে।

জনগণকে সাশ্রয়ী হওয়ার পরামর্শ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সাশ্রয়ী হোন, মিতব্যয়ী হোন, উৎপাদন বাড়ান, যার যেটুকু জমি আছে, সেটুকুতে চাষ করতে হবে। আপনারা উন্নয়নে নিজ নিজ এলাকায় অবদান রাখেন। কৃষিজমি রক্ষা করে আমরা শিল্পায়ন করছি। কোনো কোনো দেশে নতুন করে করোনা আঘাত হানছে। এ ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেন। এ ছাড়া পতেঙ্গা প্রান্ত থেকে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। পতেঙ্গা প্রান্তের অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, নৌপরিবহন উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।