advertisement
advertisement
advertisement

পূর্বাচলের নাগরিক পরিসেবা দিতে চায় রাজউক

পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প

শাহজাহান মোল্লা
২৭ নভেম্বর ২০২২ ১২:০০ এএম | আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০২২ ১২:১০ এএম
advertisement

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও গাজীপুরের কালীগঞ্জ থানার ৬ হাজার ১৫০ একর জায়গাজুড়ে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প। পুরো এলাকাটি সমতল ভূমি থেকে কিছুটা উঁচু, টিলার মতো অনেকটা। নগর বিশেষজ্ঞরা বরাবরই বলে আসছিলেন, আধুনিক একটি শহর গড়ে তোলার প্রায় সব উপাদানই এখানে বিদ্যমান। ১৯৯৫ সালে এ প্রকল্পের কাজ শুরু করে রাজধানী উন্নয়ন কর্র্তৃপক্ষ (রাজউক)। এরপর একের পর এক জটিলতায় পেরিয়ে গেছে ২৭ বছর। সর্বশেষ, রাজউক বলছে, আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।

এর পরও জটিলতা কিন্তু থেকেই যাচ্ছে। প্রকল্প এলাকাটি সিটি করপোরেশন বা পৌরসভার সীমানার বাইরে। তাই এ এলাকার নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে নতুন সিটি করপোরেশন করতে হবে নতুবা বর্তমান সিটি করপোরেশনের সীমানা বাড়াতে হবে। কিন্তু সেটি মোটেও সহজ নয়। তাই প্রকল্প বাস্তবায়নকারী রাজউক নিজেই এ দায়িত্ব নিতে চাইছে। রাজউক তাদের জনবল বাড়িয়ে সিটি করপোরেশনের আদলে সেবা দিতে চায় নতুন আধুনিক এ শহরবাসীর। এ দায়িত্ব

advertisement

নেওয়ার আরও একটি যুক্তি দেখিয়ে রাজউক বলছে, প্রকল্প এলাকায় সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা গঠন করা হলেই হবে না। সেখানে পূর্র্ণ বসতি স্থাপন না হওয়া পর্যন্ত সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা প্রয়োজনীয় রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হবে। তাই সেখানে পরিপূর্ণভাবে মানুষের বসতি স্থাপন না হওয়া পর্যন্ত অন্তত রাজউক পরিষেবা দিতে চায় তাদের জনবল বৃৃদ্ধি করে, একটি স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মাধ্যমে। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের অনুমতি চাইবে রাজউক, বলছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী উজ্জ্বল মল্লিক আমাদের সময়কে বলেন, ‘কাজ শেষ হওয়ার পর একসময় তো সিটি করপোরেশন বা পৌরসভার কাছে হস্তান্তর করতে হবে। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে কারা দেখভাল করবে? সে জন্য রাজউক থেকে মন্ত্রণালয়ে একটা প্রস্তাব পাঠানো হবে। রাজউকের নিজস্ব জনবল বৃৃদ্ধি করে একটা স্বতন্ত্র বডি করার পরিকল্পনা হয়েছে।

advertisement

উজ্জ্বল মল্লিক আরও বলেন, আগামী বছরের মধ্যে পূর্বাচল পূর্ণাঙ্গ শহরে রূপ নেবে। ইতোমধ্যে প্রকল্প এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। পানি সরবরাহ কাজের প্রথম ফেইস ডিসেম্বরের মধ্যে হয়ে যাবে। কাজ শেষ হলে প্লট মালিকদের কিছু বিষয়ে বাধ্যবাধকতার মধ্যে নিয়ে আসা হবে। প্রকল্প এলাকায় যাদের প্লট আছে, তাদের প্রত্যেকেরই সার্ভিস চার্র্জ দিতে হবে, প্লটে কোনো বাড়ি নির্র্মাণ না করলেও। রাজউকের নিয়মে আছে ৪ বছরের মধ্যে বসতি স্থাপন করতে হবে। যেহেতু নতুন শহর। তাই এত দিন শিথিল ছিল। এখন আমরা নির্দিষ্ট করে দেব।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. শামসুল হক আমাদের সময়কে বলেন, পৃৃথিবীর অন্যান্য দেশ তাদের শহরকে একবিংশ শতাব্দীর প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্র্ট সিটি হিসেবে গড়ে তুলতে রাজধানী শিফট করে ফেলেছে। অনেক আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে ধাপে ধাপে তারা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে।

তিনি বলেন, আজ হোক কাল হোক ঢাকাকে রক্ষা করতে হলে রাজধানী স্থানান্তর করতেই হবে। পূর্বাচল দারুণ একটা জায়গা ছিল। উঁচু, তাই বন্যার ঝুঁকিমুক্ত। চারদিক থেকেই যোগাযোগের ব্যবস্থা ছিল। লাল মাটির কারণে ভবনের ফাউন্ডেশন খরচ কম ছিল। নির্মাণযোগ্য ভূমি ছিল। কোথায় পুত্রজায়ার মতো একটু সুন্দর স্মার্র্ট নান্দনিক সিটি করতে পারতাম। তা না করে প্লট ব্যবসায় চলে গেলাম।

ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক ও নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান আমাদের সময়কে বলেন, নতুন একটা উপশহর হলেই যে সিটি করপোরেশন বা স্বতন্ত্র সংস্থা লাগবে বিষয়টি এমন না। প্রত্যেকটা উপশহরের জন্য যদি সিটি করপোরেশন করতে হয় সেটা ভালো হবে না। নাগরিক পরিষেবাগুলো নিশ্চিত না করে প্লট মালিকদের বাড়ি করতে বাধ্য করা সঠিক সিদ্ধান্ত হবে না।

রাজধানীর মাত্রাতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপ কমাতে এবং নাগরিক আবাসন সমস্যা দূূর করতে সরকার পূর্র্বাচল নতুন শহর প্রকল্প হাতে নেয়। নতুন এ শহরে প্রায় ১৫ লাখ মানুষের বাসস্থানের সংস্থান হবে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নের শুরুতেই দেখা দেয় একের পর এক জটিলতা, সীমাবদ্ধতাসহ নানা বাধা-বিপত্তি। এরই মধ্যে পেরিয়ে গেছে ২৭ বছর। এখনো এ প্রকল্প বাসযোগ্য নগরী হয়নি। রাজউক বলছে, সেখানে ইতোমধ্যে ৩শ বাড়ি নির্র্মাণ হয়ে গেছে। কিন্তু বাস্তবে তা দেখা যায়নি।

রাজউক সূত্রে জানা গেছে, পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ৩০টি সেক্টরে ২৬ হাজার ২১৩টি আবাসিক প্লট রয়েছে। এ ছাড়া ৪৭২টি প্রাতিষ্ঠানিক প্লট, ১ হাজার ৩৩টি বাণিজ্যিক প্লট। প্রকল্প এলাকার ভেতরে ৩১৯ দশমিক ২৮ কিলোমিটার রাস্তা, ৬৪০ কিলোমিটার সারফেস ড্রেন, ৬১টি ব্রিজ, ৪৩ কিলোমিটার লেক উন্নয়ন ও প্রোটেকশন, ৫ দশমিক ২ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণ ও ৫টি স্কুল ভবন নির্মাণের সংস্থান রয়েছে। প্রকল্পের ১৯নং সেক্টরে থাকবে ১৪০ তলার আইকনিক টাওয়ার। আর ১নং সেক্টরে শেখ হাসিনা ক্রিকেট স্টেডিয়াম নির্মাণের প্রস্তাবনা রয়েছে। তা ছাড়া ১৫নং সেক্টরে বঙ্গবন্ধু স্কয়ার নির্র্মাণের জন্য জায়গা বরাদ্দ রাখা আছে। তা ছাড়া প্রকল্পের বিভিন্ন সেক্টরে ১৪টি ব্লকে হাইরাইজ অ্যাপার্র্টমেন্ট ভবনে ৬২ হাজার ফ্ল্যাট নির্র্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।

প্রকল্প এলাকায় এরই মধ্যে ৩১৯ দশমিক ২৮ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে ২৮৫ কিলোমিটার রাস্তা, ৬১টি ব্রিজের মধ্যে ৪৩টি ব্রিজ। তা ছাড়া নারায়ণগঞ্জ অংশের ২২ কিলোমিটার লেক উন্নয়ন ও প্রটেকশন কাজ বর্র্তমানে চলমান রয়েছে।

রাজউক সূত্রে জানা গেছে এখন পর্যন্ত ২২ হাজার ২৭৭টি আবাসিক প্লটের দখল হস্তান্তর করা হয়েছে। যার মধ্যে ১৭৫টি প্লটে বাড়ি নির্মাণের নকশা অনুমোদন দিয়েছে রাজউক। বেশকিছু প্লটে বাড়ি নির্র্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ৮৩ শতাংশ, আর্থিক অগ্রগতি ৫৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ বা ৪ হাজার ২৯৭ কোটি ৩১ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। রাজউক প্রকল্পের অগ্রগতি ৮৩ শতাংশ দাবি করলেও বাস্তবে তা অনেক কম। সংশোধিত প্রকল্প বাস্তবায়ন মেয়াদকাল ২০২২ সালের জুন পর্র্যন্ত ছিল। পরবর্তী সময়ে প্রকল্পের মেয়াদকাল ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্র্যন্ত বৃৃদ্ধি করার জন্য দ্বিতীয় সংশোধিত ডিপিপি মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে রাজউক।

টাউন ইমপ্রুভমেন্ট অ্যাক্ট-১৯৫২ এর ধারা ৬৫ অনুযায়ী রাজউক কর্তৃক নির্র্মিত যে কোনো অবকাঠামো সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করার বিধান রয়েছে।