advertisement
advertisement
advertisement

তিন যুগেও ভাগ্য বদলায়নি পেট্রল পাম্প শ্রমিকদের

মজুরি পাচ্ছেন ১৯৮৭ সালের গেজেটে

আব্দুল্লাহ কাফি
২৭ নভেম্বর ২০২২ ১২:০০ এএম | আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০২২ ১০:৩৯ এএম
advertisement

শ্রম আইন অনযায়ী পাঁচ বছর পরপর বিভিন্ন খাতের শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি বোর্ড গঠনের বিধান আছে। কিন্তু এখনো পেট্রল পাম্প শ্রমিক-কর্মচারীরা তাদের মাসিক মজুরি পাচ্ছেন ১৯৮৭ সালের গেজেট অনুযায়ী। এই গেজেট অনুযায়ী একজন শ্রমিকের মাসিক মজুরি আসে মাত্র ৭৯২ টাকা। যার মধ্যে আবার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে যাতায়াত ভাতা ২০ টাকা এবং বাড়ি ভাড়া ১১২ টাকা। অর্থাৎ এই দুই ভাতা বাদ দিলে তাদের মূল মাসিক বেতন দাঁড়ায় মাত্র ৬৬০ টাকা। তবে সময় পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পাম্প মালিকরা শ্রমিকদের বেতন বাড়িয়েছেন ঠিকই, কিন্তু সেটিও বর্তমান শ্রম বাজারমূল্যের তুলনায় অনেক কম। তাদের বেশিরভাগই এখনো কাজ করছেন গড়ে সাত থেকে আট হাজার টাকা বেতনে। দ্রব্যমূল্যের এই ঊর্ধ্বগতির সময়ে এই টাকা দিয়ে জীবন নির্বাহ করতে তারা হিমশিম খাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।

শ্রমিকদের অভিযোগ, ন্যূনতম মজুরি আপডেট না হওয়ায় মালিকপক্ষ যে যার খুশিমতো তাদের বেতন দিচ্ছেন। তাদের এই বঞ্চনা দেখার কেউ নেই। ভাগ্যের পরিবর্তন কবে হবে তাও কেউ নিশ্চয়তা দেয়নি। ফলে অনিশ্চিত এক ভবিষ্যৎ তাদের সবার সামনে।

advertisement

রাজধানীর কয়েকটি পেট্রল পাম্পের শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে শোনা যায় তাদের দুর্দশার চিত্র। ঢাকার কয়েকটি পেট্রল পাম্পের শ্রমিক জানান, তাদের মাসিক বেতন সর্বসাকল্যে ৭ হাজার টাকা। শুরুতে তারা অনেক কম টাকা বেতনে কাজ করেছেন। তবে বর্তমানে কিছুটা বেতন বাড়লেও তার পরিমাণ একেবারে কম। তেজগাঁও এলাকার মেসার্স সততা এন্টারপ্রাইজ নামক পাম্পের এক শ্রমিক বলেন, জীবন আর চলে না। সবকিছুর দাম বেড়েছে। বাজারে যাওয়া যায় না, আবার খালি হাতেও বাসায় ফেরা যায় না; যে বেতনে চাকরি করি তাতে সংসার চলে না।

একই অবস্থা মাতুয়াইলের টোটাল পেট্রল পাম্পের শ্রমিকদের। তারা জানান, এই প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ বছর ধরে কাজ করা শ্রমিকদের বেতন এখনো ১০ হাজার টাকায় ওঠেনি। তাই কোনো কোনো ক্ষেত্রে অল্প কিছু বকশিশ তাদের জীবন পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

advertisement

ন্যূনতম মজুরি বোর্ড সূত্র জানায়, পেট্রল পাম্প শ্রমিক-কর্মচারীদের মজুরি নির্ধারণ করা হয় ৩৫ বছর আগে ১৯৮৭ সালে। তাদের নতুন মজুরি পর্যালোচনার জন্য বেশ কয়েক বছর আগে বোর্ড গঠন করা হয়েছিল। তাতে মালিকপক্ষের প্রতিনিধিরাও ছিলেন। কিন্তু মালিকপক্ষের প্রতিনিধি একপর্যায়ে পদত্যাগ করেন। তখন থেকেই মূল নতুন মজুরি নির্ধারণের সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে আছে। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকেও কোনো নির্দেশনা আসেনি।

এ বিষয়ে জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আমিরুল হক বলেন, পেট্রল পাম্প শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করছেন মালিকরা। তারা যে যার ইচ্ছেমতো শ্রমিকদের মজুরি দিচ্ছে। এটা খুবই অন্যায়। শ্রমিকরাও বাধ্য হয়ে কাজ করছেন। শ্রম মন্ত্রণালয়ের উচিত হবে এসব দেখভাল করা। প্রতি পাঁচ বছর পরপর মজুরি বোর্ড গঠন করার কথা থাকলেও দীর্ঘ বছর পেট্রল পাম্প শ্রমিকদের নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই।

জানা গেছে, পেট্রল পাম্পের বাইরে রাবারশিল্প, পাটকল, বিড়ি, ম্যাচশিল্প, জুট প্রেস, সিনেমা হল, হোসিয়ারি, কোল্ড স্টোরেজ, আয়ুর্বেদিক কারখানা, আয়রন ফাউন্ড্রি, ওয়েল মিলস অ্যান্ড ভেজিটেবল প্রোডাক্টস, লবণশিল্প, ইত্যাদি খাতের মজুরি সর্বশেষ নির্ধারণ করা হয়েছিল বহু বছর আগে। কোল্ড স্টোরেজ ও ব্যক্তি মালিকানাধীন শিল্প খাতের শ্রমিকদের সর্বশেষ মজুরি নির্ধারিত হয়েছিল ২০১২ সালে। এ ছাড়া ম্যাচশিল্পে ২০১৩ সালে আর বিড়িশিল্পে ২০১৬ সালে সর্বশেষ মজুরি নির্ধারিত হয়। বাজারে মূল্যস্ফীতির সঙ্গে তাল রেখে সেগুলো পরে আর সমন্বয় করা হয়নি। যদিও কয়েকটি খাতের মজুরি পুনর্নির্ধারণের কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন মজুরি বোর্ডের কর্মকর্তারা।