পার্বত্য শান্তিচুক্তির রজতজয়ন্তী
পার্বত্য শান্তিচুক্তি সম্পাদনের ২৫ বছর বা রজতজয়ন্তী পার হলো গত ২ ডিসেম্বর। আওয়ামী লীগ দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে এই চুক্তি সম্পাদন করেছিল। তখন সরকারের পক্ষে চিফ হুইপ ও প্রধান সমন্বয়কারী আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ এবং জনসংহতি সমিতির পক্ষে এর নেতা জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। ফলে প্রায় ২০ বছর পর জেএসএস সদস্যরা আত্মগোপন থেকে বেরিয়ে আসেন ও অস্ত্র সমর্পণ করেন। সে সময় উভয়পক্ষে বিপুল আশাবাদ তৈরি হয়েছিল পাহাড়ে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে। কিন্তু আজ ২৫ বছর পর মূল্যায়ন করলে দেখা যায়, চুক্তির প্রধান শর্ত পাহাড়িদের ভূমির মালিকানা নিশ্চিতের বিষয়টিসহ বহু ইস্যুর নিষ্পত্তি হয়নি; বরং নানা ক্ষেত্রে আরও জটিলতা এবং সামগ্রিকভাবে পাহাড়ের পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে।
শান্তিচুক্তির ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষটি সরকারের দিক থেকে কোনোভাবে উদযাপিত হয়নি। পাহাড়িদের পক্ষ থেকে এদিন আলোচনা সভার মাধ্যমে তাদের হতাশা ও ক্ষোভের কথাই ব্যক্ত হয়েছে। তারা ক্ষুব্ধ। কারণ পাহাড়ে সেই পাকিস্তান আমলে সূচিত ও জিয়ার আমলে অনুসৃত নীতি অনুযায়ী সমতলের অভিবাসীদের আবাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। জেএসএস নেতা বলেছেন, তাদের অমুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় মুসলিম জাতীয়তার রাজনীতি জোরদার হয়েছে। পত্রপত্রিকার সূত্রে সবাই জানেন, সেখানে দুর্গম এলাকায় নতুন জঙ্গি সংগঠনের প্রশিক্ষণের মতো ভয়ঙ্কর কাজও চলছে। এদিকে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মধ্যে একাধিক বিবদমান দল তৈরি হয়েছেÑ যারা প্রায়ই পরস্পর সংঘাতে লিপ্ত হচ্ছে এবং তাতে প্রাণহানিও ঘটছে। অথচ শান্তির দোহাই দিয়ে এ অঞ্চলে একের পর এক সেনা স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। সব মিলিয়ে পাহাড়ের আদিবাসিন্দা বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ একেবারেই ভালো নেই।
বর্তমান সরকারের কাছে দেশের ক্ষুদ্র জাতিগুলোর প্রত্যাশা ছিল অনেক। শান্তিচুক্তি তাদের মধ্যে অনেক আশার সঞ্চার করেছিল। বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকেই বোঝা গিয়েছিল যে, এই সমস্যা সামরিক পথে সমাধান করা যাবে না। তাই আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক সমাধানের পথ ধরেছিল। কিন্তু তা ব্যর্থ হতে যাচ্ছে। আর এটা ব্যর্থ হলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে এবং দেশ তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমরা মনে করি, ২৫ বছরের মাথায় সরকারের উচিত হবে শান্তিচুক্তির পুনর্মূল্যায়ন করা এবং প্রয়োজনে পাহাড়ি নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসে এটি নবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ। এ ব্যাপারে সরকারের আন্তরিক উদ্যোগ একান্ত প্রয়োজন। আশা করি, আমাদের দূরদর্শী সক্রিয় প্রধানমন্ত্রী জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ এ জরুরি কাজটির দিকে মনোযোগ দেবেন এবং যথাসময়ে এ সমস্যার স্থায়ী সমাধানের ব্যবস্থা নেবেন।