এবারের কাতার বিশ্বকাপ সত্যিই চমকে ভরপুর। প্রথম রাউন্ডের প্রতিটি ম্যাচই ছিল উত্তেজনায় ভরপুর। এই বিশ্বকাপেই দেখা গেল লাতিন-ইউরোপের ফুটবলের সঙ্গে দারুণভাবে পাল্লা দিয়ে লড়ছে এশিয়া-আফ্রিকার দলগুলো। ওই দুই মহাদেশের দলগুলোকে রীতিমতো কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছে এশিয়া-আফ্রিকার দলগুলো।
এবারের বিশ্বকাপে এশিয়া অঞ্চল থেকে অংশ নিয়েছে মোট ছয়টি দেশ। দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, ইরান, সৌদি আরব, অস্ট্রেলিয়া ও স্বাগতিক কাতার। একমাত্র স্বাগতিক কাতার ব্যতীত বাকি দলগুলো দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেছে এবারের টুর্নামেন্টে। আরও অবাক করার বিষয় হলো সুপার সিক্সটিনে লাতিন থেকে উঠেছে মাত্র দুটি দেশ। তাও ফেভারিট খ্যাত আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল। আর এশিয়া থেকে উঠেছে তিনটি। দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও অস্ট্রেলিয়া। এই দল তিনটি দল নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করেই উঠে এসেছে নক-আউট পর্বে। জাপান আর কোরিয়া তাদের গ্রুপ থেকে ছিটকে দিয়েছে জার্মানি আর উরুগুয়ের মতো দলকে। জাপান রীতিমতো অবিশ্বাস্য ফুটবল উপহার দিয়ে জার্মানি ও স্পেনকে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই শেষ ষোলোতে উঠে এসেছে। দক্ষিণ কোরিয়াও তো ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর পর্তুগালকে হারিয়ে গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে সেকেন্ড রাউন্ডে উঠে এসেছে। অবশ্য ২০০২ বিশ্বকাপ ফুটবলেও পর্তুগালকে হারানোর সুখস্মৃতি রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার। এশিয়ার প্রতিনিধিত্ব করা আরেক দেশ অস্ট্রেলিয়াও জায়গা করে নিয়েছে দ্বিতীয় পর্বে। ডেনমার্কের মতো গতিশীল দলকে হারিয়েছে তারা। কম যায়নি ইরান ও সৌদি আরবও। ইরান প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাজেভাবে হারলেও দ্বিতীয় ম্যাচে ঘুরে দাঁড়িয়ে ওয়েলসকে হারায় তারা। শেষ ম্যাচে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ড্র করলেই নক-আউটের টিকিট পেতে পারতো তারা, কিন্তু এক গোলে হেরে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিতে হয় তাদেরকে। সৌদি আরব নিজেদের প্রথম ম্যাচে ফেভারিট আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু পরের দুই ম্যাচে পোল্যান্ড-মেক্সিকোর বিপক্ষে তারা আর পেরে ওঠেনি। কাতারই বলতে গেলে ব্যর্থ হয়েছে নিজেদেরকে প্রমাণ করতে।
এ তো গেল এশিয়ার দলগুলোর গল্প। এবার অফ্রিকার দিক চোখ দেওয়া যাক। আফ্রিকা থেকে দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত করেছে সেনেগাল ও মরক্কো। এর মধ্যে মরক্কো তো অপরাজিত গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই সেকেন্ড রাউন্ডে উঠেছে। তারা বিদায় করে দিয়েছে বেলজিয়ামের মতো দলকে। সেনেগাল ২০০২-এর মতো এবারও সেকেন্ড রাউন্ডে উঠেছে। এছাড়া আফ্রিকার অদম্য সিংহ বলে খ্যাত ক্যামেরুন পাঁচবারের বিশ্বজয়ী ফেভারিট ব্রাজিলকে হারিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছে।
বলতে গেলে এবারের বিশ্বকাপে ইউরোপ আর লাতিনের দলগুলোর জন্য বড় হুমকিই হয়ে দাঁড়িয়েছে এই দুই মহাদেশের দলগুলো। দিনকে দিন এগিয়েই যাচ্ছে এশিয়া-আফ্রিকার ফুটবল। ইউরোপের লিগগুলোতে চোখ বুলালেই দেখা যায় এশিয়া আর অফ্রিকার খেলোয়াড়দের নৈপুণ্য।