বলিউড যে এত বাজে সময় পার করবে কেউ কল্পনাও করেনি। গত ছয়-সাত দশকে ভারতের জনপ্রিয় এই ইন্ডাস্ট্রি এরকম করুণ অবস্থার সাক্ষী হয়নি। একের পর এক ফ্লপ ছবি, বড় বাজেটের ছবি নির্মাণ করেও মুখ থুবড়ে পড়া, পর্দা থেকে দর্শকের মুখ ফিরিয়ে নেওয়া কী দেখেনি বলিউড! এমনকি ভারতীয় সিনেমার প্রভাবশালী শাহরুখ, সালমান, আমির খানও পারেননি বাজে সময়ের এ চিত্র পাল্টে দিতে। ব্যর্থ হয়ছেন হৃত্বিক, সাইফ, শাহীদ কাপুররাও। মাঝে মধ্যে দুই-একটা সিনেমা হালকা ঝলক দেখালেও সেগুলো ছিল প্রত্যাশার অনেক নিচে। অবশেষে সেই গেরো খুলতে যাচ্ছেন অজয় দেবগান। সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া অজয় দেবগন অভিনীত ‘দৃশ্যম ২’ বক্স অফিসে রীতিমতো ঝড় তুলেছে। মুক্তির প্রথম সপ্তাহেই ১০০ কোটির ঘর স্পর্শ করে বড় কিছুর আশা দেখাচ্ছে সংশ্লিষ্টদের। আর মাত্র দশ দিনে ভারতজুড়ে ২০৩ কোটি রুপি ব্যবসা করে বলিউডের এই বিশাল মন্দা বাজারে আলো দেখাচ্ছে ‘দৃশ্যম ২’। সিনেমা সমালোচকদের প্রশংসা থেকে শুরু করে বক্স অফিসে আয় সব দিক দিয়েই এই ছবির প্রাপ্তির ঝুলি ভরে উঠছে।
ঘটনা চক্রে স্ত্রী-কন্যার হাতে খুন হওয়া এক বড় পুলিশ কর্মকর্তার ছেলের লাশ গুম করা নিয়েই সিনেমার কাহিনি। সেই ঘটনা থেকে নিজের পরিবারকে বাঁচানোর জন্য ক্লাস ফাইভ পাস করা এক গৃহকর্তার নানা কৌশল আর বুদ্ধিমত্তার কাছে জাঁদরেল আর দুঁদে পুলিশ কর্মকর্তাদের নাস্তানাবুদ এমন গল্প নিয়েই ভারতজুড়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় ‘দৃশ্যম’। ২০১৫ সালে বলিউডে মুক্তির পর ভিন্ন ঘরানার এ সিনেমাটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।
‘দৃশ্যম’ শব্দের ইংরেজি অর্থ ‘ভিশন’। বাংলায় আনলে দাঁড়াবে দূরদর্শিতা বা দূরদৃষ্টি, যেটি সংযুক্ত কল্পনাশক্তির সাথে। কল্পনাশক্তির প্রখরতাতেই একজনের দূরদর্শিতা প্রকাশ পায়। খানিকটা ভূমিকা বাড়ানোর কারণ, দূরদর্শিতার ওপরই যে এই দুটি সিনেমা হয়ে গেল। তাই এ একপ্রকার নাটকীয় ভঙ্গিতে মঞ্চ সাজানোর চেষ্টা শুধু। ২০১৩ সালে যখন মোহনলাল অভিনীত ‘দৃশ্যম’ এলো, ভারতীয় সিনেমায় একটা নতুন মাত্রার থ্রিলার যেন যোগ হলো। যদিও নিয়তির পরিহাস তাতে মিশে আছে। তবে সম্পূর্ণ ‘পারফেক্ট কভার আপ’-এ নিহিত সিনেমার তালিকা খুব বেশি দীর্ঘ নয়। ‘দৃশ্যম’ একই নামের মালায়লাম ছবির হিন্দি রিমেক। একইভাবে মালায়লাম ‘দৃশ্যম ২’-এর রিমেক ছবিটি। মালায়লাম ছবিতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন মোহনলাল। জানা গেছে, রিমেক হলেও মালায়লাম ছবি থেকে কিছুটা আলাদা হিন্দি ‘দৃশ্যম ২’। মূল ‘দৃশ্যম ২’ অনেক বেশি বাস্তবঘেঁষা; কিন্তু হিন্দি রিমেকটিতে পাত্রপাত্রীদের নায়কোচিতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যা বলিউড দর্শকরা পছন্দ করেছেন। বলিউড নির্মাতারা জানেন, হিন্দি সিনেমার দর্শকেরা ড্রামা, ঝাঁ চকচকে ব্যাপার পছন্দ করেন, যা ভালোভাবেই আছে ‘দৃশ্যম ২’-এ। এ ছাড়া মূল মালয়ালম ‘দৃশ্যম ২’ অনেকটা ধীরগতির সিনেমা। যেখানে ধীরে ধীরে গল্প বুনে দ্বিতীয়ভাবে জট ছাড়ানো হয়; কিন্তু হিন্দি রিমেকটি প্রথম থেকেই ছোটে দুরন্ত গতিতে। এটিও অনেক দর্শকের ভালো লেগেছে।
‘দৃশ্যম’-এর মতো সিক্যুয়েলেও অজয় দেবগনের সঙ্গে দেখা যাবে টাবু, রজত কাপুর, শ্রিয়া সরণ, ঈশিতা দত্তা প্রমুখকে। এদের পাশাপাশি সিক্যুয়ালে নতুন সংযোজন অক্ষয় খান্না। ছবিতে বিজয় সালগাঁওকরের চরিত্রে অভিনয় করেছেন অজয়। সাত বছর আগে বিজয়ের বড় মেয়ের হাতে খুন হয় আইজি মীরা দেশমুখের (টাবু) ছেলে। পুরনো সেই কেসের তদন্তে ফের নামে গোয়া পুলিশ। টাবুর নাছোড় মনোভাব আর পুলিশের আপ্রাণ প্রচেষ্টার মাঝেও নিজের পরিবারকে সুরক্ষায় নিত্যনতুন বুদ্ধি বের হতে থাকে বিজয়ের (অজয়) মাথা থেকে। এবার দায়িত্বে নতুন আইজি, অক্ষয় খান্না। তবে কি এবার পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যাবে বিজয়ের পরিবার? এই রহস্যের জটই খুলবে কীভাবে, আর বিজয়ের পরিবারের শেষ পরিণতি কীÑ সব কিছুর সুন্দর পরিসমাপ্তি উপভোগ করা যাবে ‘দৃশ্যম ২’-এ।