চট্টগ্রাম সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৯টি প্রকল্প উদ্বোধন করবেন। নতুন করে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন চারটি প্রকল্পের। সব প্রকল্পের আর্থিক মূল্য ৩৩ হাজার কোটি টাকার বেশি। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। আজ রবিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম আসছেন।
প্রধানমন্ত্রী সকালে হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম আসবেন। তিনি প্রথমে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে একটি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হবেন। এর পর বিকালে হাজির হবেন পলোগ্রাউন্ডে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের জনসভায়।
জানা গেছে, তিনি যেসব মন্ত্রনালয়ের অধীন প্রকল্প উদ্বোধন করবেন সেগুলো হলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য, কৃষি, নৌপরিবহন ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। আর যেসব মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন সেগুলো হলো ধর্ম মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক ড. বদিউল আলম আমাদের সময়কে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অধীন ২৯টি প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। আর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন চারটি প্রকল্পের।
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী সরকারি মুসলিম উচ্চবিদ্যালয়ের অধীন লালদীঘি মাঠে নির্মিত ৬ দফা মঞ্চ উদ্বোধন করবেন। এর বাইরে তিনি চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলার ১৮টি স্কুল-কলেজের নতুন ভবন উদ্বোধন করবেন। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন জাতিসংঘ পার্ক সংস্কার, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের প্রধান ভবন নির্মাণ প্রকল্প, বাঁশখালী মডেল মসজিদ নির্মাণ প্রকল্প।
প্রধানমন্ত্রী সকালে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে করে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে আসবেন। সেখানে ভাটিয়ারিতে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির (বিএমএ) রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করবেন। দুপুরে হেলিকপ্টারে করে আসবেন চট্টগ্রাম এমএ আজিজ স্টেয়িামে। সেখান থেকে যাবেন পলোগ্রাউন্ড মাঠে আওয়ামী লীগের জনসভায়। জনসভা থেকেই প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। সমাবেশে বক্তৃতা শেষে বিকালে পুনরায় এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে ফিরবেন। সেখানে নামাজ আদায়সহ আনুষাঙ্গিক কাজ শেষে হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় ফিরে যাবেন।
এদিকে আজকের জনসভাকে কেন্দ্র করে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ। এ তথ্য জানিয়েছেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ.জ.ম নাছির উদ্দীন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার তিন বছর পর ২০১২ সালে এ পলোগ্রাউন্ডে সর্বশেষ জনসভায় এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। গত দশ বছরে চট্টগ্রাম নগরীতে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে আর কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি হয়নি।
গতকাল শনিবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, পৌনে ৫ লাখ বর্গফুটের পলোগ্রাউন্ড ময়দানের শেষ প্রান্তে নৌকার আদলে তৈরি করা হয়েছে মঞ্চ। সাড়ে তিন হাজার বর্গফুটের এ মঞ্চে ২০০ জনের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মূল মঞ্চ থেকে ৩০ মিটার সংরক্ষিত রেখে পশ্চিমে গুরুত্বপূর্ণ অতিথিদের বসার জন্য আলাদা মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। পূর্বদিকে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য এবং মাঝখানে নারীদের জন্য নির্দিষ্ট স্থান সংরক্ষিত রাখা হয়েছে।
ঢাকার কলরেডি থেকে আনা হয়েছে ৩০০ মাইক। জনসভাস্থল ছাড়াও নিউমার্কেট, সিআরবি, লালখানবাজার মোড়, টাইগারপাস, দেওয়ানহাট, আগ্রাবাদ হয়ে কদমতলী পর্যন্ত লাগানো হচ্ছে মাইক। জনসভাস্থলের বাইরে সড়কে লাগানো হচ্ছে বড় পর্দা, যারা ভেতরে ঢুকতে পারবেন না তারা এ পর্দায় দেখবেন প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য।
ইতোমধ্যে পলোগ্রাউন্ড ময়দানের পুরো নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা পুরো জনসভাস্থল এবং আশপাশের এলাকা। দলটির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পদবিধারী নেতার বাইরে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না সেখানে, ঢুকতে পারেননি গণমাধ্যম কর্মীরাও।
চট্টগ্রাম নগর পুলিশের কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় জানিয়েছেন, সাড়ে ৭ হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হচ্ছে। প্রথম ধাপের মোতায়েন শেষ হয়েছে। এ ছাড়া এসএসএফ, পিজিএফ, সাদা পোশাকের পুলিশ, ইউনিফর্মের পুলিশ, গোয়েন্দা সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। পুলিশ ও র্যাবের সদস্যরা মিলে পুরো জনসভাস্থল ঘিরে রেখেছে। সেখানে যারা ঢুকবেন তাদের অবশ্যই আর্চওয়ে পার হতে হবে। এর পর তল্লাশি শেষে সবাইকে ঢুকতে দেওয়া হবে।
নগর পুলিশ সূত্র জানায়, গুরুত্বপূর্ণ অতিথি যারা মঞ্চে উঠবেন, তাদের জনসভাস্থলে প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য মঞ্চের পেছনে আলাদা গেট করা হয়েছে। মঞ্চের পূর্বদিকে মহিলাদের জন্য আলাদা গেট আছে। আর মিছিল নিয়ে যারা আসবেন তাদের মূল গেট দিয়ে ঢুকতে হবে।
আজ রবিবার সকাল ৮টা থেকে নগরীর বিভিন্ন সড়কে যানবাহন চলাচলে জরুরি নির্দেশনা দিয়েছে সিএমপি। নগরীর এমএ আজিজ স্টেডিয়াম থেকে রেডিসন ব্লু গোলচত্বর, ইস্পাহানি মোড়, টাইগারপাস হয়ে পলোগ্রাউন্ড সমাবেশস্থল পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে, যা বলবৎ থাকবে প্রধানমন্ত্রীর চট্টগ্রাম ত্যাগের আগ পর্যন্ত। সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত আন্তঃজেলার কোনো যাত্রীবাহী বাস শহরে ঢুকতে পারবে না।
নগরীর হাইলেভেল রোড, ওয়াসার মোড়, জমিয়াতুল ফালাহ্ পশ্চিম গেট ইউটার্ন, লালখান বাজার ফ্লাইওভারের নামার মুখ, আলমাস মোড়, চানমারি রোড, ম্যাজিস্ট্রেট কলোনি রোডের মুখ, সিটি করপোরেশন অফিস গলির উভয় মুখ, দেওয়ানহাট ব্রিজের মুখ, টাইগারপাস মোড়, আমবাগান রেলক্রসিং, কাজির দেউড়ি, নেভাল এভিনিউ, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনিস্টিটিউট, রেলওয়ে অফিসার্স কলোনি মসজিদ, কুক আউট রেস্টুরেন্ট, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, কাঠের বাংলো, ফ্রান্সিস রোড, আটমার্সিং, এনায়েত বাজার, পুরাতন রেলস্টেশন, কদমতলী মোড়, নিউমার্কেট মোড়, সিটি কলেজ মোড়, অভয়মিত্র ঘাট, নতুন ব্রিজ, আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারে ওঠার মুখ, ষোলশহর ২ নম্বর গেট পুলিশ বক্সের সামনে, ফ্লাইওভারে ওঠার মুখ, পেনিনসুলা হোটেলের সামনে, শহীদ শাহজাহান মাঠের সামনে, পাঞ্জাবি লেনের মুখ, আগ্রাবাদ বাদামতলী মোড় সড়কে ব্লক ও ডাইভারশন দেওয়া থাকবে।
টাইগারপাস থেকে সব গাড়ি উল্টা পথে এসে ড্রপ করতে হবে এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের গাড়ি ইউটার্ন করে কাঠের বাংলো দিয়ে সিআরবিতে চলে যাবে। এক্ষেত্রে মন্ত্রী, মেয়র, সংসদ সদস্য, জিওসি২৪ পদাতিক ডিভিশন, বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশ কমিশনার ও রেঞ্জ ডিআইজির গাড়ি সোজা সামনে গিয়ে রেলওয়ে পাবলিক স্কুল মাঠে প্রবেশ করবে।
এ ছাড়া শাহ আমানত ব্রিজ গোল চত্বরের পশ্চিম পাশে, কদমতলী মোড়, ষোলশহর রেলস্টেশনের সামনের রাস্তা, শহীদ শাহজাহান মাঠ ও আগ্রাবাদ বাদামতলী মোড় এলাকায় ড্রপিং পয়েন্ট থাকবে। সমাবেশে আসা গাড়ি ব্রিজ থেকে কালামিয়া বাজার এক্সেস রোড, শুভপুর টার্মিনাল, ফরেস্ট গেট (বন গবেষণা উচ্চবিদ্যালয় মাঠ), বহদ্দারহাট টার্মিনাল, শহীদ শাহজাহান মাঠ (আমবাগান রোড), আগ্রাবাদ এক্সেস রোড ও অলঙ্কার আলিফ গলিতে পার্কিংয়ের জন্য বলা হয়েছে।
সমাবেশস্থলে পার্কিংয়ের জন্য মন্ত্রী, মেয়র, এমপি, কেন্দ্রীয় নেতা, জিওসি ২৪ পদাতিক ডিভিশন, বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশ কমিশনার ও রেঞ্জ ডিআইজির জন্য আলাদা ড্রপিং পয়েন্ট ও পার্কিংয়ের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। মহানগর ও জেলার নেতাদের গাড়ি পুরাতন রেলস্টেশন ও প্যারেড গ্রাউন্ড এবং গণমাধ্যমের গাড়ি নগরীর জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদ মাঠে পার্কিংয়ের জন্য বলা হয়েছে।