গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা
বিদেশ থেকে দেশে ফেরার সময় প্রবাসীদের এইচআইভি পরীক্ষা বা স্ক্রিনিংয়ের কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে মধ্যপ্রাচ্য ও দূরপ্রাচ্যের এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত প্রবাসীরা অবাধে দেশে প্রবেশ করছেন। এভাবে দেশে এইডস রোগটি ছড়িয়ে পড়ছে। অথচ বিমানবন্দরে স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা থাকলে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। গতকাল শনিবার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে কমিউনিটি ফোরাম অব বাংলাদেশ আয়োজিত এইডসে আক্রান্ত
ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী শীর্ষক মিডিয়া অ্যাডভোকেসি গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন।
বক্তারা জানান, বাংলাদেশে ৩০ শতাংশ সাধারণ জনগোষ্ঠী এইডসের ঝুঁকিতে আছেন। যারা পূর্ববর্তী সময়ে এইচআইভি আক্রান্ত রোগীদের সংস্পর্শে এসেছিলেন। গত এক বছরে দেশে ১২ লাখ ৪১ হাজার পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৯ লাখ ৫৫ হাজারই ছিলেন বিদেশগামী। বিদেশে যাওয়ার সময় তাদের বাধ্যতামূলক এইচআইভি পরীক্ষা করাতে হয়। কিন্তু দেশে ফেরার সময় কোনো ধরনের পরীক্ষার বাধ্যবাধকতা নেই। এমনকি সরকারের এ ধরনের কোনো নিয়মনীতিও নেই। ফলে মোট আক্রান্তের ১৮ শতাংশই প্রবাসী। যাদের মাধ্যমে অন্যরাও আক্রান্ত হওয়া ঝুঁকিতে আছেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার ওয়েলফেয়ার বোর্ডের ডেপুটি ডিরেক্টর জাহিদ আনোয়ার বলেন, ‘কেউ যদি আক্রান্ত হয়ে দেশে আসেন, তা হলে আমরা তাদের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। এইচআইভি আক্রান্ত কেউ দেশে এলে আমরা তাকে হাসপাতালে ভর্তি করি। তাদের জন্য আমাদের একটা বিশেষায়িত অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসও আছে। তবে বিমানবন্দরে প্রবাস ফেরতদের এইচআইভি পরীক্ষা করাতে হলে একটি সমন্বিত নীতিমালা তৈরি করতে হবে।’
ইউনাইটেড ন্যাশনস অফিস অন ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইমের ন্যাশনাল প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর আবু তাহের বলেন, ‘এইডস আক্রান্তদের মধ্যে মাদকসেবীর সংখ্যা অনেক। আমাদের দেশে মাদকের পেছনে প্রতি বছর যে টাকা ব্যয় হয়, সেটি দিয়ে আরও এক-দুটা পদ্মা সেতু করা সম্ভব। এই টাকার অপচয় রোদ করা গেলে দেশের বোনদের বিদেশে গিয়ে বুয়ার কাজ করতে হবে না। এইডস আক্রান্তের আরেকটি গোষ্ঠী তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ। তাদের প্রতিও আমাদের অবহেলা রয়েছে। কিন্তু তারা অসুস্থ হলে আমরা তাদের হাসপাতালে ঢুকতে দিই না। এসব বিষয়ে আমাদের আরও ভাবতে হবে।’
ইউএনএইডসের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. সায়মা খান বলেন, ‘নারী কর্মীরা কাজ করতে গিয়ে যেসব সমস্যায় পড়েন, সেটি খুবই ভয়াবহ। তাদের মধ্যে এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত বাড়ছে। যৌনকর্মী, সমকামী, মাদকাসক্তদের মধ্যেও বাড়ছে এইডস আক্রান্ত। বিশ্বব্যাপী ৫ শতাংশ জনগোষ্ঠীর মধ্যে এইচআইভি সংক্রমণ রয়েছে। যৌনকর্মীদের মধ্যে ৭০ শতাংশ এইডসে আক্রান্ত। আমরা দেখেছিÑ দেশে নতুন করে ৯৭৪ জনের এইচআইভি শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে ৩০ শতাংশ সাধারণ মানুষ এবং ১৮ শতাংশ প্রবাসী।
জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় এইডস/এসটিডি প্রোগ্রামের সহকারী পরিচালক মাহবুবুর রহমান, বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি এমএম রাশেদ রাব্বি।