ওমর খৈয়াম। সুদূর পারস্যের কবি হলেও কাজী নজরুল ইসলামের হাত ধরে মৃত্যুর ৮৮৮ বছর পরও বাঙালির হৃদয়ে দোর্দণ্ড প্রতাপে বেঁচে আছেন তিনি। গত শতকের ত্রিশের দশকে বাংলা ভাষায় তার অমর কাব্য রুবাইয়াৎ-ই-ওমর খৈয়াম অনুবাদ করতে শুরু করেন নজরুল। আর এর মাধ্যমে বাঙালিও
বিশদভাবে পরিচিত হয় পারস্যের এ কবির সঙ্গে। ১১৩১ সালের ৪ ডিসেম্বর ৮৩ বছর বয়সে ইরানের নিশাপুরে মৃত্যুবরণ করেন এই কবি।
ওমর খৈয়ামের সম্পূর্ণ নাম গিয়াসউদিন আবুল ফাতেহ ওমর ইবনে ইব্রাহিম আল-খৈয়াম নিশাপুরী। পঞ্চম শতকের শেষের দিকে ইরানের নিশাপুর শহরে তার জন্ম। একাধারে তিনি ছিলেন প্রেম ও বিরহের কবি, গণিতবিদ, দার্শনিক ও জ্যোতির্বিদ। আসলে ওমর খৈয়াম নিজ যুগে মূলত গণিতবিদ ও জ্যোতির্বিদ হিসেবেই খ্যাত ছিলেন এবং নিজেও তাই মনে করতেন। এ ছাড়া চিকিৎসা বিজ্ঞানী হিসেবেও তিনি বেশ সুনাম অর্জন করেছিলেন।
ওমর খৈয়াম সম্পর্কে ফিজরেন্ড বলেছেনÑ ‘কবিতা না লিখলে তিনি হয়তো গণিতজ্ঞ হিসেবেই অমর হয়ে থাকতেন।’ ওমর খৈয়াম তার বিখ্যাত ‘রুবাইয়াত’-এর জন্যই বিশ্বসাহিত্যে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। রুবাইয়াত হচ্ছে চার পঙ্ক্তির সুরেলা ফার্সি কবিতা। এ জাতীয় এক হাজারেরও বেশি কবিতা তিনি রচনা করেন। পৃথিবীর রূপরস, বুলবুলির গান, টিউলিপ ফুল, গোলাপের সুবাস, বসন্তের সমীরণ, উষার আলো, জ্যোৎস্নার রাত প্রভৃতি বিষয় তার কবিতায় ঘুরেফিরে এসেছে বারবার।
তবে অনেকেই মনে করেন, ওমর খৈয়ামের অবদান সবচেয়ে বেশি বীজগণিতে। তিনিই প্রথম এর সমীকরণগুলোর শ্রেণিবিন্যাসের চেষ্টা করেন। জ্যামিতির সমাধানে বীজগণিত আর বীজগণিতের সমাধানে জ্যামিতি পদ্ধতি তারই অভূতপূর্ব আবিষ্কার। আজ থেকে প্রায় এক হাজার বছর আগে বীজগণিতের যেসব উপপাদ্য এবং জ্যোতির্বিদ্যার তত্ত্ব ওমর খৈয়াম দিয়ে গেছেন সেগুলো এখনো গণিতবিদ এবং মহাকাশ গবেষক ও জ্যোতির্বিদদের গবেষণায় সূত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।