আজ ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। হাজার বছরের ইতিহাসে বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন। ১৯৭১ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাঙালি জাতি তার ইতিহাসে মহামূল্যবান চিরন্তন গৌরবোজ্জ্বল অর্জনটি লাভ করতে সক্ষম হয়। যে কারণে বঙ্গবন্ধু আমাদের বাংলাদেশের জাতির পিতা এবং বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধু বঙ্গবন্ধুই। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। এই দিন বিশ্ব মানচিত্রে বাঙালি একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। এর মাধ্যমে বাঙালি তার নিজস্ব সংস্কৃতি, রীতি নীতি ধারণ ও লালন করা, নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা প্রকাশ করার পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ করাসহ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে এগিয়ে যাওয়ার চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে।
বাঙালি বিদেশি শাসন শোষণ থেকে মুক্ত হয়ে নিজেরাই দেশ শাসনের মর্যাদা লাভ করে। বিজয় দিবসই বাঙালির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন। বিজয় দিবস বাংলাদেশে বিশেষ দিন হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে দেশের সর্বত্র পালন করা হয়। ১৯৭২ সালের ২২ জানুয়ারি প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনে এই দিনটিকে বাংলাদেশে জাতীয় দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয় এবং সরকারিভাবে এ দিনটিতে ছুটি ঘোষণা করা হয়।
৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাকিস্তানি বাহিনীর ৯১,৬৩৪ সদস্য আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে। এর ফলে পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ নামে একটি নতুন স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। প্রতি বছর বাংলাদেশে এই দিবসটি যথাযথ ভাবগাম্ভীর্য এবং বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার সাথে বিজয় দিবস হিসেবে পালিত হয়। ১৬ ডিসেম্বর ভোরে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের সূচনা ঘটে। জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে অনুষ্ঠিত সম্মিলিত সামরিক কুচকাওয়াজে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ নৌবাহিনী এবং বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সদস্যরা যোগ দেন। কুচকাওয়াজের অংশ হিসেবে সালাম গ্রহণ করেন বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি। এই কুচকাওয়াজ দেখার জন্য অসংখ্য মানুষ জড়ো হয়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা নিহত হয়েছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের অংশ হিসেবে ঢাকার সাভারে অবস্থিত জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মী, বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে থাকেন। এ ছাড়া দেশের প্রতিটি উপজেলায় বিজয় দিবসের কুচকা ওয়াজ বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠান, মতবিনিময় সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়। দেশের প্রধান সড়কগুলো জাতীয় পতাকা দিয়ে সাজানো হয়।
বাঙালি জাতির জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ এই দিনে প্রতিবছর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগেও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে ও প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, স্বেচ্ছায় রক্তদান, বৃক্ষরোপণ, বিশেষ প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শনীসহ নানা কর্মসূচী পালন করা হয়।
এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলার দামাল ছেলেরা পাকিস্তানের তৎকালীন চৌকস সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ বিজয় অর্জন করেছে। বাংলাদেশ কারও দয়ায় স্বাধীন হয়নি বা কারও দয়ায় আমরা চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করিনি। রক্তের বিনিময়ে অর্জিত গৌরবগাঁথা বিজয়কে আরও মহিমান্বিত করতে আমাদেরকে অবশ্যই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও দর্শনকে ধারণ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে প্রত্যেককে নিজ নিজ অবস্থানে অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য সততা ও আন্তরিকতার সঙ্গে সঠিকভাবে পালন করতে হবে। আমাদের একটা কথা স্মরণে রাখতে হবে, বঙ্গবন্ধুর কারণেই বাংলাদেশের বিজয় অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। যে কারণেই আজ আমরা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বড় বড় কর্মকর্তা হতে পারছি। দেশ স্বাধীন না হলে আজও আমাদেরকে পাকিস্তানের গোলামী করতে হতো। আমাদেরকে সে কথা ভুলে গেলে চলবে না। আমাদেরকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে অবশ্যই ধারণ করতে হবে।
পরিশেষে বলবো, ২০২২ সালে বাংলাদেশ মহান বিজয়ের ৫১ বছর পূর্ণ করে ৫২ বছরে পদার্পণ করবে। এই সময়ে দেশ সর্বক্ষেত্রেই এগিয়েছে। তথ্য ও যোগযোগ প্রযুক্তিতে বাংলাদেশ বিস্ময়কর সাফল্য অর্জন করেছে। বিশ্বের বুকে পরিচিত ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এখন ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার স্বপ্নও অবশ্যই পূরণ হবে। তবে দুশ্চিন্তাও রয়েছে। কারণ দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও বাংলাদেশে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি বাংলাদেশকে পুনরায় গ্রাস করে। এখনো ওরা হায়েনার মতো ওঁত পেতে আছে। সুযোগ পেলেই ওরা আবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতির চিন্তাকে লালন করা ও অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধকে ধারণ করা স্বাধীনতার স্বপক্ষ জনগোষ্ঠীর উপর আঘাত হানবে। এই অপশক্তিকে আমাদেরকে চিনতে হবে। এরা হলো বিএনপি-জামায়াত জোট, তাদের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন এবং এদের সাথে যারা হাত মিলিয়ে চলে। এই বিএনপি জামায়াত জোটের সাথে বিদেশী শক্তিও রয়েছে। যে শক্তি বাংলাদেশকে তাদের পদানত করে রাখতে চায়। সে কারণেই বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা বারবার বলে চলছেন বিএনপি-জামায়াত জোট যেন বাংলাদেশে আর কোনো দিন ক্ষমতায় না আসে। কারণ বিএনপি জাময়াত জোট ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশ তার অর্জিত মর্যাদা হারিয়ে পাকিস্তানি চিন্তা চেতনায় অনগ্রসর ধারায় চলতে থাকবে। যা আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও অমর্যাদাকর। তাই আগামী জাতীয় নির্বাচনে দেশ স্বাধীনতার স্বপক্ষের দল বাংলাদেশ আওয়ামীলীকে বিজয়ী করে যে কোন মূল্যে চলমান বিজয়ের ধারা ও প্রগতি এবং উন্নয়নের যাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে।
অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান
কোষাধ্যক্ষ ও চেয়ারম্যান, বক্ষব্যাধি বিভাগ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়