প্রকৌশলীসহ আহত ৫
রাজধানীর মগবাজারে ময়লার ড্রামে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছেন প্রকৌশলীসহ পাঁচ জন। বিস্ফোরণের তীব্রতায় আশপাশের ভবনের জানালার কাচ ভেঙে পড়ে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে ওয়্যারলেস মোড়ে দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে এ বিস্ফোরণ ঘটে। পুলিশের ধারণা, কেউ আগে থেকে ওই ড্রামে বিস্ফোরক রেখে দিয়েছিল; ফেলে দেওয়ার সময় বিস্ফোরণ ঘটে। তবে কী ধরনের বিস্ফোরক ছিল, তা তাৎক্ষণিক নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
আহত পাঁচ জন হলেন- প্রকৌশলী মো. সাইফুল ইসলাম, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) কর্মী মো. তারেক, শাহিন, আবুল কালাম ও আকিলুর রহমান। তারা ঢাকা মেডিক্যাল
কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বিস্ফোরণের খবর পেয়ে ফায়ার সার্র্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ছয় তলা একটি ভবনের নিচে বিস্ফোরণ ঘটে। ভবনের এক পাশে সেন্ট ম্যারিস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল; আরেক পাশে রমনা কিডস কিন্ডারগার্টেন স্কুল। এর পাশেই ‘মেট্রো ডিপার্টমেন্টাল স্টোর’। আছে একটি ওষুধের দোকানও।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিস্ফোরণের তীব্রতায় স্কুলের জানালার কাচ ভেঙে পড়ে। দুই স্কুলে শতাধিক শিক্ষার্থী ছিল। বিস্ফোরণের পর আতঙ্কে পাঠদান বন্ধ রাখা হয়। ওষুধের দোকানের জানালা-দরজাও ভেঙে গেছে।
ঢামেক হাসপাতালে জরুরি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক আলাউদ্দিনের বরাত দিয়ে হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. বাচ্চু মিয়া জানান, আহতদের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় স্পিøন্টারের আঘাত রয়েছে।
আহত প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম জানান, তিনি পরিবার নিয়ে বাসাবোয় থাকেন। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ওয়্যারলেস গেটে উজ্জ্বল হোটেলের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় একটি ময়লার ড্রামে হঠাৎ বিস্ফোরণ ঘটে। এ সময় স্পিøন্টারে বিদ্ধ হয়ে রাস্তায় পড়ে যান তিনি। পথচারীরা তাকে হাসপাতালে নেন। কীভাবে এ বিস্ফোরণ ঘটেছে, তার ধারণা দিতে পারেননি ওই প্রকৌশলী।
আহত শাহীন জানান, তিনি সহকর্মীদের সঙ্গে ওয়্যারলেস মোড়ে ডিপিডিসির মাটি কাটার কাজ করছিলেন।
আহত আকিলুরের ভাই শাকিল বলেন, ‘আমার ভাই ভাঙাড়ির দোকানে কাজ করে। সকালে হেঁটে যাওয়ার সময় বিস্ফোরণে গুরুতর আহত হন আকিলুর। তার শরীরে অসংখ্য স্পিøন্টারের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।’
ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি) আসাদুজ্জামান জানান, ড্রাম থেকে অসাবধানতাবশত বিস্ফোরক দ্রব্য ফেলে দেওয়ার সময় বড় ধরনের বিস্ফোরণ ঘটে। সিটিটিসি আলামত সংগ্রহ করেছে। সম্ভবত আগে থেকেই ওই ড্রামে কেউ বিস্ফোরক রেখে দিয়েছিল। ফেলে দেওয়ার কারণে বিস্ফোরণটি ঘটে। এটা কী ধরনের বিস্ফোরক ছিল, তা জানার জন্য সিটিটিসি কাজ করছে।
আসাদুজ্জামান জানান, বিস্ফোরণের সঙ্গে কোনো জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে আপাতত মনে হচ্ছে না। তবে সব বিষয় সামনে রেখেই তদন্ত চলছে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) হারুন-অর রশীদ জানান, শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটেছে। বিস্ফোরক দ্রব্যটি ময়লার একটি প্লাস্টিকের ড্রামের মধ্যে ছিল। ভেতর থেকে ময়লা বের করার সময় হয়তো তা বিস্ফোরিত হয়। বিস্ফোরণের ঘটনাস্থল থেকে অসংখ্য স্পিøন্টার পাওয়া গেছে। কী উদ্দেশে ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের সামনে বিস্ফোরকটি রাখা হয়েছিল, তা জানতে তদন্ত চলছে। ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের সামনে বোমাটা কেন রাখা হয়েছিল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
বিকালে ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. শহিদুল্লাহ জানান, ময়লা রাখার বড় প্লাস্টিকের ড্রামটি বাড়ির মালিকের। মঙ্গলবার সকালে তার নির্দেশনা অনুযায়ী ঘটনাস্থলের পাশের একটি ভাঙাড়ি দোকানের কর্মচারী আকিল ড্রামটি হাত দিয়ে ধরে সরানোর সময় বিস্ফোরণ ঘটে।