বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরেবাংলা হলের একটি কক্ষে মুখোশ ও হেলমেট পরে ঢুকে এক ছাত্রলীগ নেতাকে বেধড়ক পিটিয়ে ও কুপিয়ে গুরুতর জখম করেছে দুর্বৃত্তরা। আহতের নাম মহিউদ্দীন আহমেদ ওরফে সিফাত। একই কক্ষে থাকা তার দুই অনুসারীকেও মারধর করা হয়। তাদের বরিশাল শেরেবাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল ভোর পাঁচটা থেকে সাড়ে পাঁচটার মধ্যে এই ঘটনা ঘটে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে আছেন। নিরাপত্তার জন্য ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কোনো কমিটি নেই। তবে মহিউদ্দীন আহমেদ দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রলীগের একটি পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
ঘটনার বিষয়ে বরিশাল বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, হামলার পর তারা হলটি পরিদর্শন করেছেন। সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে হামলাকারী ব্যক্তিদের শনাক্তের চেষ্টা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে গ্রেপ্তারেও অভিযান চলছে। ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার জন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
শেরেবাংলা হলের কয়েক শিক্ষার্থী জানান, ভোর পাঁচটার কিছু পর হলের চারতলায় ডাক-চিৎকার শুনে ঘুম
ভাঙে। পরে দরজা খুলতে গিয়ে দেখেন বাইরে থেকে ছিটকিনি আটকে রাখা হয়েছে। হলের অন্য সহপাঠীদের কাছে ফোন করে সাহায্য চাইলেও তারাও একই অবস্থার কথা জানান। পরে অন্য হলের সহপাঠীদের ফোন করলে তারা এসে দরজা খুলে দেন। পরে চারতলার ৪০১৬ নম্বর কক্ষে গিয়ে দেখেন আহত অবস্থায় ছাত্রলীগনেতা মহিউদ্দীন আহমেদ, তার অনুসারী ফাহাদ হোসেন ও জিহাদ আহমেদ পড়ে আছেন। কক্ষটির মেঝে, দেয়ালে ছোপ-ছোপ রক্ষের দাগ। এর পর তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
ওই শিক্ষার্থীরা জানান, মহিউদ্দীন আহমেদ ও আহত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছেন, হামলাকারী সংখ্যায় ১৫ থেকে ২০ জন ছিল। তারা হেলমেট ও মুখোশ পরা ছিল। হাতে ছিল রড ও ধারালো অস্ত্র। ১৫ থেকে ২০ মিনিট ধরে হামলার পর তারা চলে যায়। তাদের ধারণা, হলের পকেটগেট দিয়ে হামলাকারীরা ভেতরে প্রবেশ করে এবং বাইরে ভোলা-বরিশাল মহাসড়কে তাদের বহনকারী গাড়ি ছিল।
আহত মহিউদ্দীনের অনুসারী ও শেরেবাংলা হলের আবাসিক ছাত্র সৈয়দ রুম্মান জানান, কক্ষের বাইরে থেকে ঠকঠক করলে মহিউদ্দীন দরজা খুলে দেন। এর পর সন্ত্রাসীরা মহিউদ্দীনকে এলোপাতাড়ি মারধর করতে শুরু করে। রড দিয়ে তার পায়ে উপর্যুপরি আঘাত করতে থাকে। এ সময় মহিউদ্দীন আত্মরক্ষার জন্য বারান্দায় গেলে সেখান থেকে ধরে এনে আবার পিটিয়ে ও কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। এ সময় তার কক্ষে থাকা অপর দুই শিক্ষার্থীকেও মারধর করা হয়। তবে তাদের অবস্থা তেমন গুরুতর নয়। মহিউদ্দীন আহম্মেদের দুই পা ও হাতের অবস্থা গুরুতর। হাত-পা পিটিয়ে গুরুতর জখম করার পাশাপাশি ছয় থেকে সাতটি স্থানে ধারালো অস্ত্রের জখম রয়েছে। হামালাকারীরা হেলমেট ও মুখোশ পরা থাকলেও মহিউদ্দীন কয়েকজনকে চিনতে পেরেছেন বলেও জানান তিনি। তবে এই হামলার পেছনে কারা জড়িত এবং কী কারণে এই হামলা হয়েছে, সে ব্যাপারে পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখনো কোনো তথ্য পায়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মো. খোরশেদ আলম বলেন, বিষয়টি তারা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। পুলিশকে ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্তে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে এ ঘটনা তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি করার প্রক্রিয়া চলছে।