মৃত্যুপথযাত্রী মা
বয়স মাত্র ২২ বছর। পড়াশোনা লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের স্নাতক শ্রেণিতে। এ বয়সে কেবল কলেজ নয়, আদালতেও নিয়মিত দৌড়াতে হয় মাইন উদ্দিন মিশুকে। জমি সংক্রান্ত বিরোধে চাচাদের দায়ের করা একের পর এক মামলায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে তার জীবন। দুশ্চিন্তায় আগেই মারা গেছে তার বাবা শামছু উদ্দিন। আর ছেলের চিন্তায় রোগগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন তার মাও। গতকাল মঙ্গলবার কমলনগর প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ তোলেন মিশু। তবে অভিযুক্তরা তা অস্বীকার করেছেন। মিশুর সংবাদ সম্মেলনে তার বড় ভাই দিদার উদ্দিন, বড় বোন জেসমিন আক্তার ও ছোট বোন কলেজছাত্রী মরিয়ম বেগম ইতিসহ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। মিশু জানান, তাদের বাড়ি উপজেলার চরলরেন্স এলাকায়। দাদা মজিবল হক হাওলাদারের ছয় ছেলের মধ্যে তার বাবা ছিলেন তৃতীয়। দীর্ঘদিন ধরে জায়গা-জমি থেকে বঞ্চিত ছিলেন তিনি। ২০১৬ সালে এসএসসি
পাসের পর মিশু বাবার বেশ কিছু জমি উদ্ধার করেন। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন চাচারা।
মিশু জানান, ২০১৮ সালে এইচএসসিতে পড়ার সময় প্রথমবার মামলার আসামি হন। পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গেও তাকে আসামি বানানো হয়। লক্ষ্মীপুর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট
আদালতে মামলাটি স্ত্রীকে দিয়ে করিয়েছিলেন চাচা আব্দুর রব। মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় মামলাটি আদালতে খারিজ হয়ে যায়। ২০১৯ সালে মিশুর পরিবারের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা দায়ের হলেও সেটিও আদালতে খারিজ হয়ে যায়।
মিশুর দাবি, ওইসব ষড়যন্ত্রে কাজ না হওয়ায় আরেক চাচা মোহাম্মদ উল্যাহ ২০১৯ সালেই তাদের নামে কমলনগর থানায় জমি দখল, হামলা ও লুটপাটের অভিযোগ এনে আরও একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন। আরেক জ্যাঠা নুরুল হক ছেলে সোহেল রানাকে দিয়ে ২০২২ সালে থানায় একটি চুরির মামলা করেন। মামলায় প্রথমে অজ্ঞাত আসামি রাখা হলেও পরে মিশু ও তার বাবাকেও আসামি করা হয়। গত ১ জানুয়ারি পিবিআইর তদন্ত কর্মকর্তা ওই চুরির ঘটনার সঙ্গে আসামিদের কোনো সম্পৃক্ততা পাননি বলে প্রতিবেদন দিয়েছেন। তবে এর বিরুদ্ধে বাদী নারাজি আবেদন করলে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব জেলা ডিবি পুলিশকে দিয়েছেন আদালত।
সংবাদ সম্মেলনে মিশুর পরিবারের সদস্যরা দাবি করেন, লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের এক পেশকার নুর আলমের কাছে জ্যাঠাতো বোনের (নুরুল হকের মেয়ে) বিয়ে হওয়ার পর তার ইন্ধনেই মামলা শুরু হয়। মিশুর দাবি, মামলাগুলোর বাদী ও সাক্ষী ঘুরেফিরে একই থাকে। কেউ এক মামলায় বাদী হলে অন্যরা সাক্ষী হন। আবার অপর মামলায় আগের সাক্ষী বাদী হয়ে অন্যদের সাক্ষী করেন।
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পেশকার নূর আলম। তিনি বলেন, ‘এসব মামলা-মোকদ্দমার সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্তা নেই। সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্যই এসব মিথ্যা রটানো হয়েছে।’ চুরি মামলার বাদী সোহেল রানা দাবি করেন, ‘সন্দেহজনক কারণে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মিশুকে আটক করেছিল। এ জন্য তারা সম্পূরক এজাহারে মিশুকে আসামি করেছেন। হয়রানি করার উদ্দেশ্যে তারা এসব করছেন না। অন্যান্য মামলার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’
মামলার দুশ্চিন্তায় গত বছরের ১৩ আগস্ট স্ট্রোক করে মারা যান মিশুর বাবা শামছু উদ্দিন। ৫৫ বছর বয়সী মা রৌশনারা বেগমও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। এখন তিনি মৃত্যুপথযাত্রী। এ অবস্থায় হয়রানি থেকে মুক্তির দাবি জানিয়েছেন মিশু ও তার পরিবারের সদস্যরা।
কমলনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ সোলাইমান জানান, ‘অপরাধী না হয়েও কেউ মিথ্যা মামলায় হয়রানির শিকার হয়ে আমাদের কাছে সহযোগিতা চাইলে আমরা তখন বিষয়টি দেখব।’