জনবল ও চিকিৎসা যন্ত্রাংশ নেই
প্রায় ৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রংপুর মা ও শিশু হাসপাতাল তিন বছরেও চালু করা সম্ভব হয়নি। ফলে শিশুদের জটিল রোগের চিকিৎসার জন্য ছুটতে হচ্ছে রাজধানী ঢাকায়। এ ছাড়া প্রাইভেট হাসপাতালগুলোর ওপর বাড়ছে অভিভাবকদের নির্ভরতা। স্থানীয়রা জানান, যে প্রত্যাশা নিয়ে হাসপাতালটি নির্মাণ করা হয়েছে, দীর্ঘ সময়ে তা চালু না হওয়ায় তা অধরাই রয়ে গেছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, জনবল ও চিকিৎসা যন্ত্রাংশ পেলেই চালু হবে হাসপাতালটি।
জানা যায়, রংপুর বিভাগে প্রায় ২ কোটি মানুষের বসবাস। যার ৪৭ শতাংশই শিশু। বয়স্কদের জন্য সরকারি ও বেসরকারিভাবে ইউনিয়ন থেকে জেলা পর্যন্ত চিকিৎসার নানা সুযোগ-সুবিধা থাকলেও শিশুদের জন্য এই সুযোগ একেবারেই সীমিত। শিশুদের পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই বিশেষায়িত রংপুর মা ও শিশু হাসপাতালের দাবি
করে আসছিল রংপুরবাসী। সেই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ২১ নভেম্বর রংপুর সদর হাসপাতালের ১ দশমিক ৭৮ একর জমির মধ্যে শিশু হাসপাতাল নির্মাণের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ৩১ কোটি ৪৮ লাখ ৯২ হাজার ৮০৯ টাকা মূল্যে সেই কাজটি করেছে ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মল্লিক এন্টারপ্রাইজ ও মেসার্স অনিক ট্রেডিং করপোরেশন। ভবন নির্মাণের জন্য দুই বছরের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হলেও নির্ধারিত সময়ের আগেই ১০০ শয্যার এই হাসপাতালের নির্মাণকাজ শেষ হয়। এরপর করোনা মহামারী মোকাবিলায় হাসপাতালটি ব্যবহার হয় করোনা ডেডিকেটেট হাসপাতাল হিসেবে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও এখনো যন্ত্রাংশ ও জনবল নিয়োগ না হওয়ায় প্রাণ পাচ্ছে না রংপুর বিভাগবাসীর দীর্ঘ প্রত্যাশার এই শিশু হাসপাতালটি। তিনতলা মূল হাসপাতাল ভবনের প্রতি তলার আয়তন ২০ হাজার ৮৮২ দশমিক ৯৭ বর্গফুট। ভবনে রয়েছে সুপারিনটেনডেন্ট কোয়ার্টার, ছয়তলা ডক্টরস কোয়ার্টারের নিচতলায় গাড়ি পার্কিংয়ের স্থান, দ্বিতীয় তলা থেকে ডাবল ইউনিট, ছয়তলাবিশিষ্ট স্টাফ অ্যান্ড নার্স কোয়ার্টার ও দুইতলাবিশিষ্ট গ্যারেজ কাম ড্রাইভার কোয়ার্টার। এ ছাড়া বিদ্যুৎ সাবস্টেশন স্থাপনের জন্যও নির্মাণ করা হয়েছে একটি ভবন। শিশু হাসপাতালের মূল ভবনের প্রথম তলায় থাকবে ইমার্জেন্সি, আউটডোর, চিকিৎসকদের চেম্বার এবং ল্যাব। দ্বিতীয় তলায় অপারেশন থিয়েটার, ব্রোন ইউনিট এবং তৃতীয় তলায় ওয়ার্ড এবং কেবিন থাকবে। এই হাসপাতাল ভবনটি আনুষ্ঠানিকভাবে জেলা সিভিল সার্জনকে ২০২০ সালের ৮ মার্চ হস্তান্তর করা হয়।
এদিকে পুরো বিভাগে শিশুদের চিকিৎসার শেষ আশ্রয়স্থল রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। যার শিশু ওয়ার্ডের ৮৮টি বেডের বিপরীতে প্রতিদিন চিকিৎসা নিচ্ছে প্রায় ৫ শতাধিক শিশু। মাঝে মধ্যে এই সংখ্যা হাজার অতিক্রম করে। শিশু হাসপাতালটি চালু হলেই কেবল এই চাপ কাটিয়ে শিশু চিকিৎসা সেবায় স্বস্তি ফিরবে জানিয়েছেন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা।
রংপুর জেলা সিভিল সার্জন শামীম আহমেদ বলেন, করোনার কারণে হাসপাতালটি শিশু চিকিৎসার কেন্দ্র হিসেবে চালু করতে দেরি হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। কর্তৃপক্ষও এ বিষয়ে সার্বিকভাবে খবর নিচ্ছে। খুব শিগগিরই হাসপাতালটি চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
রংপুর বিভাগীর স্বাস্থ্য পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, আমরা ইতোমধ্যেই মন্ত্রণালয়ে প্রশাসনিক অনুমোদনসহ যন্ত্রাংশ ও প্রয়োজনীয় লোকবলের জন্য চিঠি পাঠিয়েছি। আশা করছি সব সংকট কাটিয়ে চিকিৎসাকেন্দ্রটি উদ্বোধন করা সম্ভব হবে।
রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান ডা. এমএ মোস্তাকিম বলেন, হাসপাতালটি চালু হলে বিনামূল্যে মিলবে শিশুদের জটিল সার্জারিসহ সব ধরনের রোগের চিকিৎসা। একই সঙ্গে প্রাইভেট হাসপাতালের ওপর নির্ভরশীলতাও কমে আসবে।
রংপুরের জেলা প্রশাসক ড. চিত্রলেখা নাজনীন বলেন, আমরা চেষ্টা করছি যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালটি চালু করার। তবে হাসপাতাল চালুর বিষয়টি স্বাস্থ্য বিভাগ দেখছে। সেখান থেকেই একটা ইতিবাচক সিদ্ধান্ত এলেই হাসপাতালটি উদ্বোধন করতে সক্ষম হব।