আবার গ্যাসের সন্ধান
দেশে দিন দিন প্রকট হয়ে উঠছে গ্যাসের সংকট। আন্তর্জাতিক বাজারেও বেড়েছে জ্বালানির মূল্য। উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার। এমন সংকটময় সময় এলো সুসংবাদÑ আবারও গ্যাসের সন্ধান মিলেছে দ্বীপজেলা ভোলায়। এতে নতুন করে সম্ভাবনার দ্বার খুলছে এ জেলায়। জাতীয় ক্ষেত্রে এ খনিজসম্পদকে সঠিকভাবে ব্যবহারের পাশাপাশি ভোলায় আবাসিক সংযোগের নিশ্চয়তা চান জেলাবাসী। একই সঙ্গে এখানে গ্যাসভিত্তিক শিল্প কারখানা গড়ে তোলার দাবি জানান তারা। এতে কর্মসংস্থান হবে বেকার যুবকদের। তাই ভোলার গ্যাস ভোলায় রাখতে চান
এ জেলার মানুষ।
জানা যায়, ভোলা নর্থ-২ নামে নতুন একটি কূপে ৬২০ বিসিএফ ঘনফুট গ্যাস রয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপোরেশন বা বাপেক্সের ভূতাত্ত্বিক বিভাগ।
এ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মো. আলমগীর হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, ভোলা নর্থ ২-এর কূপে প্রাপ্ত গ্যাস মাটির ৩ হাজার ৪০০ মিটার নিচে রয়েছে, যা প্রায় ৫-৬ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। এখানে ভবিষ্যতে আরও কূপ খনন হতে পারে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আটটি কূপ খননের পর আটটিতেই গ্যাসের সন্ধান মিলেছে। এ ছাড়া ইলিশা-১ নামে আরও একটি কূপ খননের অপেক্ষায় রয়েছে।
বাপেক্স জানায়, ভোলার শাহবাজপুর ও ভোলা নর্থ গ্যাস ক্ষেত্রের সর্বমোট আটটি কূপে গ্যাসের সন্ধান মিলেছে, যার পরিমাণ ১ দশমিক ৫ টিসিএফ ঘনফুট। অষ্টম কূপ থেকে প্রতিদিন উত্তোলনযোগ্য গ্যাসের পরিমাণ ২০ মিলিয়ন ঘনফুট।
বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী সোমবার আমাদের সময়কে বলেন, দুই মাসেরও কম সময়ের মধ্যে ভোলা নর্থ-২ কূপে গ্যাস পাওয়া গেল। গ্যাস সংকটের সময় এটি অনেক ভালো খবর। এই কূপে গ্যাসের চাপও অনেক ভালো। এখনই ৪ হাজার পিএসআই। এটি আরও বাড়বে। দুই সপ্তাহের মতো চলবে পরীক্ষামূলক গ্যাস উত্তোলন ও ক্লিনিংয়ের কাজ। এর পরই শুরু হবে গ্যাস উত্তোলন ও সরবরাহ।
এদিকে একের পর এক কূপে গ্যাসের সন্ধান মেলায় সম্ভাবনার দ্বার খুলছে দক্ষিণাঞ্চলের এ জেলাটিতে।
গ্যাসনির্ভর কল-কারখানা ও শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার কথা ভাবছেন বিনিয়োগকারীরা। আর এ গ্যাসকে কাজে লাগিয়ে শিল্প কারখানা এবং আবাসিক লাইনে তা ব্যবহারের দাবি জানান ভোলাবাসী।
আদিল হোসেন তপু নামে এক তরুণ সংগঠক বলেন, এ গ্যাস ব্যবহার হলে এখানে গ্যাসভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। যার মাধ্যমে জেলার অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি বেকার শিক্ষিত যুবকদের কর্মসংস্থান হবে। তাই এর সঠিক ব্যবহারের দাবি জানাই।
স্থানীয় বাসিন্দা লোকমান, মিজান ও মাইনুদ্দিন বলেন, আমরা চাই গৃহস্থালি কাজে গ্যাস ব্যবহারের সুযোগ করে দেওয়া হোক। ভোলার গ্যাসের মাধ্যমে ভোলার উন্নয়ন সম্ভব।
সচেতন মহল মনে করছে,ভোলার গ্যাসের সম্ভাবনাকে কাজে লাগালে জেলার অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি বেকার যুবকদেরও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। একটি উন্নত-সমৃদ্ধিশালী জেলায় রূপান্তিত হবে ভোলা।
বাপেক্স সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের দিকে ভূকম্পন জরিপের মাধ্যমে ভোলার সদরের ভেদুরিয়া ইউনিয়নের মাঝিরহাট এলাকায় গ্যাসের দ্বিতীয় খনির সন্ধান পায় বাপেক্স। সেখানে রাশিয়ান কোম্পানি গ্যাজপ্রোমের মাধ্যমে একটি কূপ খননের পর গত বছরের ৫ ডিসেম্বর নতুন করে ভেদুরিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ চর পাতাগ্রামে আরেকটি কূপ খনন করে বাপেক্স। এটি জেলার ৮নং কূপ। গত ২৩ জানুয়ারি ওই কূপে প্রাথমিক পরীক্ষামূলক উত্তোলনে সেখানে প্রতিদিন ২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন সম্ভব বলে নিশ্চিত করে বাপেক্সের প্রতিনিধি দল। বর্তমানে এ কূপে ৬২০ বিসিএফ গ্যাস মজুদ রয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
সূত্র জানিয়েছে, ভোলার বোরহানউদ্দিনের শাহবাজপুরের গ্যাস ক্ষেত্রের পর এটি জেলার দ্বিতীয় খনি। এ কূপে গ্যাস মাটির সাড়ে ৩ হাজার ফুট তলদেশে ৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তুত। এটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সেখানে আরও কূপ খননের পরিকল্পনার কথা জানান ভূতাত্ত্বিক বিভাগ (বাপেক্স) মহাব্যবস্থাপক মো. আলমগীর হোসেন।
এর আগে বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী বলেন, আগামী বছরের অক্টোবর মাসে ভোলাসহ দক্ষিণের ১০ জেলায় তেল-গ্যাস অনুন্ধান করবে বাপেক্স। আশা করা হচ্ছে এ জরিপে আরও গ্যাস পাওয়া যাবে।