advertisement
advertisement
advertisement

‘সরকারের কথা অনুযায়ী চললে সেটা বিশ্ববিদ্যালয় থাকে না’

রাবি প্রতিনিধি
৩১ জানুয়ারি ২০২৩ ০৬:১৭ পিএম | আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০২৩ ০৬:১৭ পিএম
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ড. আনু মুহাম্মদ। ছবি: আমাদের সময়
advertisement

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সাবেক অধ্যাপক ড. আনু মুহাম্মদ বলেছেন, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় মানে হলো সার্বজনীন বিশ্ববিদ্যালয়। সরকার যা বলবে, কোনো বিশ্ববিদ্যালয় যদি তা অনুসরণ করে, তাহলে কখনো সেটা বিশ্ববিদ্যালয় হতে পারে না। এরকম হলে, সেখানে কোনো সৃজনশীলতা থাকে না, সেখানে কোনো নতুন জ্ঞানের যোগ হয় না।’

আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটের আমতলায় রাকসু আন্দোলন মঞ্চ আয়জিত ছাত্র-শিক্ষক সমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্যে এসব কথা বলেন আনু মুহাম্মদ। শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং রাকসু ও সিনেট কার্যকর করাসহ ১৪ দফা দাবিতে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

advertisement

ড. আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘নতুন জ্ঞান যোগ হতে হলে, সেখানে প্রশ্ন থাকতে হবে, পর্যালোচনা থাকতে হবে এবং সেখানে প্রত্যাখ্যানও থাকতে হবে। সেই প্রত্যাখ্যানের শক্তি যদি একটা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে না থাকে, তাহলে তা কোনো বিশ্ববিদ্যালয় না।’

সমাবেশে সবার উদ্দেশে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ড. শামসুজ্জোহার মতো শিক্ষক ছিলেন। যিনি স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে গিয়ে শিক্ষার্থীদের স্বার্থে বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে তার উত্তরসূরী যারা শিক্ষক, তারা কেন অবনত, আত্মসমর্পণকারী, আপোষকারী, সুবিধাবাদী হবে? প্রশ্নটা তো সবার মধ্যে আসার কথা।’

advertisement

আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘অনেক শিক্ষক বলে আমরা সরকারের টাকা খাই, সরকারের বিরুদ্ধে কীভাবে কথা বলব? এ কথার ভয়ঙ্কর রকমের আত্মসম্মানহীন অর্থ রয়েছে। সরকারের টাকা বলে কোনো টাকা নাই, এটা সম্পূর্ণ ভুল কথা। কারণ আমরা সরকারের টাকা খাই না। আমরা খাই জনমানুষের টাকা। কারণ সেটা হলো পাবলিক মানি। সরকারও সে সর্বজনের টাকা দিয়ে পরিচালিত হয়।’

এই অর্থনীতিবিদ আরো বলেন, ‘বর্তমান সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগটা খুব গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করেছে এবং এমন সব উপাচার্য নিয়োগ দিচ্ছে যার প্রধান যোগ্যতা সরকারের আনুগত্য। তাদের মাথায় আছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদেরকে সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। শিক্ষার্থীদের হলগুলোতে যাতে আনুগত্য থাকে, যাতে মত প্রকাশের অধিকার না থাকে, যাতে সেখানে একটা ভয়ের রাজত্ব তৈরি হয়, নির্য়াতনের অবস্থা তৈরি হয়, সেটা যারা নিশ্চিত করবে তাদেরকে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হবে। আর সেটাই হবে উপাচার্যের কাজ।’

সম্মানিত আলোচকের বক্তব্যে রাবির পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীব বলেন, ‘যদি ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ না থাকে, তবে ক্ষমতা মানুষকে দানবে পরিনত করে। এটি মানুষের অর্ন্তগত ব্যাপার। ক্ষমতা মূলত চর্চা করার ব্যপার নয় বরং এর সঙ্গে স্বচ্ছতা ও দায়িত্ব ব্যাপারটি জড়িত, যা নিশ্চিত করতে হবে ‘

তিনি বলেন, ‘আমাদের ছাত্র হিসেবে, নাগরিক হিসেবে এবং মানুষ হিসেবে যে দায়িত্ব সে দায়িত্বের জায়গাটা আমাদের ছেড়ে দিলে চলবে না। প্রকৃত অর্থে আমরা সে জায়গাটা ছেড়ে দিয়েছি। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা একরকম ছেড়ে দিতে বাধ্যও হয়েছি।’

রাকসু আন্দোলন মঞ্চের সমন্বয়ক আব্দুল মজিদ অন্তরের সভাপতিত্বে এবং সদস্যসচিব আমানুল্লাহ খানের সঞ্চালনায় সমাবেশে সম্মানিত আলোচক হিসেবে আরও বক্তব্য দেন রাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আ-আল মামুন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আর রাজী।

এতে আরও বক্তব্য দেন রাবির ফোকলোর বিভাগের অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম কনক, আরবি বিভাগের অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসুদ, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের সাবেক নির্বাচন কমিশনার মীর শাহজাহান, নাগরিক ছাত্র ঐক্য রাবি শাখার সভাপতি মেহেদী হাসান মুন্না, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ রাবি শাখার সভাপতি নাইমুল ইসলাম নাইম, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার কেন্দ্রীয় পরিষদের যুগ্ন- সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম।

সমাবেশে ঘোষিত রাকসু আন্দোলন মঞ্চের ১৪ দফা দাবিগুলো হলো রাকসু ও সিনেট কার্যকর করা, মেধার ভিত্তিতে সিট বরাদ্দের ব্যবস্থা করা, হলে রাজনৈতিক ব্লকের নামে দখলদারিত্ব নিষিদ্ধ করা, হলের ডাইনিং ও ক্যান্টিনের খাবারের পুষ্টিগুণ নিশ্চিত করা, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার সপ্তাহে সাত দিন সার্বক্ষণিক খোলা রাখা, যাতায়াতের জন্য রুট বৃদ্ধি সহ পর্যাপ্তসংখ্যক বাস সংযুক্ত করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে সার্বক্ষণিক চিকিৎসকের অবস্থান, চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করা।

এ ছাড়া গবেষণা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি ও শিক্ষার্থীদের কাজের সুযোগ সৃষ্টি করা, পূর্ণাঙ্গ টিএসসি নির্মাণ করা, নামে-বেনামে আদায়কৃত অযৌক্তিক ফি বাতিল করা, জলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা, সান্ধ্য আইন ও সান্ধ্য কোর্স বন্ধ করা, পরীক্ষার উত্তরপত্রে রোল নম্বরের পরিবর্তে মাধ্যমিক পরীক্ষার মতো কোড সিস্টেম চালু করা এবং পোষ্য কোটা বাতিল করার দাবি জানায় সংগঠনটি।