সাড়া মিলছে না চতুর্থ ডোজে
প্রায় চার মাস ধরে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে স্বস্তিতে আছে বাংলাদেশ। দৈনিক আক্রান্ত বেশ কিছুদিন ধরে শতকের নিচে। প্রায় দিনই থাকছে মৃত্যুশূন্য। তবে আরেক দফা বড় সংক্রমণের আশঙ্কা করছেন জনস্বাস্থ্যবিদেরা। চীন, জাপানসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে তারা মনে করছেন আসন্ন গ্রীষ্মে এপ্রিল-জুলাইয়ে আবারও সংক্রমণ বাড়তে পারে।
কোভিড রোগী না থাকায় বিশেষায়িত থেকে শুরু করে জেনারেল হাসপাতাল সবখানেই এখন চলছে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা। সংক্রমণ কমে যাওয়া ও অধিকাংশ মানুষ ভ্যাকসিনের আওতায় আসায় সবখানেই এখন গা-ছাড়া ভাব। গণপরিবহন, হাটবাজার থেকে শুরু করে বর্তমানে কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা নেই।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে সাবেক পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ আমাদের সময়কে বলেন, ‘অতীতে আমরা দেখেছি শীত-গ্রীষ্ম উভয় সময়ে সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী ছিল। বর্তমানে শীত পার করলেও সামনে গরম আসছে। আমরা দেখছি চীন, জাপান ও অন্য অনেক দেশে আবারও
পরিস্থিতি গুরুতর হচ্ছে। সেসব দেশে ভ্যাকসিনেশনের হার আমাদের চেয়ে অনেক ভালো। তারপরও পরিস্থিতি গুরুতর পর্যায়ে। আমাদের ঝুঁকি অবশ্যই রয়েছে। সে অনুযায়ী আগামী এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত সংক্রমণে বড় আকারে বিস্তার ঘটতে পারে।’ সংক্রমণ এড়াতে টিকার বাইরে থাকা জনগোষ্ঠী খুঁজে বের করে টিকার আওতায় আনার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
এই জনস্বাস্থ্যবিদ বলেন, শুধু এ ভাইরাস নয়, ডায়রিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জাসহ যে কোনো ভাইরাস হঠাৎ করেই মারাত্মক পরিস্থিতি ডেকে আনতে পারে। কিন্তু জনস্বাস্থ্য সরকারের কাছে এখনো সেভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে না। এত বড় মহামারীর মধ্যেও উপজেলা থেকে শুরু করে বিভাগীয় পর্যায়ে জনস্বাস্থ্যবিদের পদ সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। অথচ আগামীতে যাতে এ ধরনের মহামারী মোকাবিলায় আগাম প্রস্ততি ও করণীয় ঠিক করতে জনস্বাস্থ্যবিদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
একই মত দেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ড. মুশতাক হোসেনও। এই গবেষকের ভাষ্য, সংক্রমণ নিম্নমুখী হলেও এখনো শতভাগ নিয়ন্ত্রণে আসেনি। সংখ্যায় কম হলেও আক্রান্ত হচ্ছে, প্রাণহানিও ঘটছে। শীতপ্রধান দেশে সংক্রমণ বাড়তে দেখছি। এখন গ্রীষ্মের দেশেও একই অবস্থা। কাজেই আবারও সংক্রমণ বাড়তে পারে।
মুশতাক হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী করোনা পরিস্থিতির যে অবস্থা তাতে ভাইরাসটির অস্তিত্ব যত দিন থাকবে, টিকাও তত দিন নেওয়া লাগতে পারে। বিশেষ করে বয়স্ক ও গর্ভবতী নারীদের এটি প্রয়োজন হতে পারে।’
দেশের ৮০ ভাগ মানুষকে টিকার আওতায় আনার লক্ষ্য নিয়ে প্রায় দুই বছর আগে ২০২১ সালের শুরুতে শুরু হয়েছিল গণটিকা কার্যক্রম। নিয়মিত টিকাদানের পাশাপাশি একাধিক বিশেষ ক্যাম্পেইন করেছে সরকার। এখন পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কোটি মানুষ পূর্ণ ডোজের টিকার আওতায় এসেছে।
তবে গত ২০ ডিসেম্বর শুরু হওয়া চতুর্থ ডোজ বা দ্বিতীয় বুস্টার ডোজ গ্রহণে চরম অনীহা দেখা যাচ্ছে। নানা পদক্ষেপ নিয়েও টিকাগ্রহণে আগ্রহী হচ্ছে না মানুষ। ক্যাম্পেইন শুরুর দেড় মাস হলেও মাত্র ১৬ লাখ (প্রায়) মানুষকে এই টিকা দেওয়া সম্ভব হয়েছে।
সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) প্রোগ্রাম ম্যানেজার এস এম আব্দুল্লাহ আল মুরাদ বলেন, ‘শুধু চতুর্থ ডোজ নয়, সব ডোজেই এখন মানুষের একটা অনীহা চলে এসেছে। যারা এখনো বাদ আছে, তারা যাতে দ্রুত টিকা নিয়ে নেয়, সেজন্য সম্প্রতি পাড়ায় পাড়ায় মাইকিং পর্যন্ত করা হয়েছে। তারপরও আসছে না। না নিলে টিকাগুলো হয়তো শেষ পর্যন্ত অব্যবহৃতই থেকে যাবে।’