মুরাদনগরে শিক্ষক নেতাদের বিরুদ্ধে ক্লাস ফাঁকির অভিযোগ
কুমিল্লার মুরাদনগরে শিক্ষক নেতাদের বিরুদ্ধে ক্লাস ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অন্যদিকে তিন বছরেও চালু হয়নি অর্ধকোটি টাকার বায়োমেট্রিক হাজিরাযন্ত্র। এ ছাড়া মেশিন ক্রয়েও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, শিক্ষকরা যেন ক্লাস ফাঁকি দিতে না পারেন বা সময় মতো বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করেন সে লক্ষ্যে উপজেলার ১৯০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থাপন করা হয়েছে বায়োমেট্রিক হাজিরাযন্ত্র। তবে সফটওয়্যারের সমস্যার অজুহাত দেখিয়ে তিন বছরেও চালু করা হয়নি যন্ত্রগুলো। প্রতিটি বিদ্যালয়ের স্লিপের ফান্ড থেকে ডিজিটাল হাজিরা মেশিন কেনার জন্য ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২২-৩০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। জানা গেছে, যে মডেলের মেশিন বিদ্যালয়ে লাগানো হয়েছে তার সঠিক বাজারমূল্য আনুষঙ্গিক খরচসহ সাড়ে ৯ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা। অর্থাৎ প্রতিটি মেশিন ক্রয়ে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
একাধিক সহকারী শিক্ষক বলেন, মেশিন কবেই চালু হয়ে যেত, আমাদের শিক্ষক নেতারাই চান না এটি চালু হোক। কারণ প্রায় প্রতিদিনই শিক্ষা অফিসের নাম ভাঙিয়ে তারা ক্লাশ ফাঁকি দেন। মেশিন চালু হলে আর তারা এটি করতে পারবেন না।
মুরাদনগর উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আরিফুর রহমানসহ বেশ কয়েক শিক্ষক নেতার সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তারা বলেন, আমাদের অফিসের কাজেই উপজেলায় যেতে হয়। এটা আমাদের শিক্ষা অফিসার ও সহকারী শিক্ষা অফিসাররা জানেন। আর হাজিরা মেশিন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বন্ধ রয়েছে, এখানে আমাদের প্রতিবাদের কিছু নেই।
বাঙ্গরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জামাল উদ্দিন বলেন, মেশিন আমরা যাচাই-বাছাই করেই ক্রয় করেছি। দুই বছরের সার্ভিস ও প্রশিক্ষণ দেওয়াসহ মেশিন ক্রয় করাতে দামটা বেশি পড়েছে। করোনার কারণে মেশিন চালু করতে পারিনি আবার সার্ভিসের মেয়াদও চলে গেছে। তাই এ নিয়ে কিছু বলতে পারছি না।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ফওজিয়া আক্তার আমাদের সময়কে বলেন, মেশিন ক্রয়ের বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে শুনেছি স্লিপের টাকা থেকে প্রায় প্রতিটি বিদ্যালয়ে হাজিরা মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। যে কোম্পানি থেকে এগুলো কেনা হয়েছে তাদেরই মেশিনের সফটওয়্যার দেওয়ার কথা ছিল; কিন্তু এখনো দেয়নি। তাই মেশিনগুলো এখনো চালু করা যায়নি। তবে আমি যতটুকু জানি সিম কার্ডের মাধ্যমেও এসব মেশিন থেকে শিক্ষকদের হাজিরা প্রিন্ট করা সম্ভব। এটিও তারা কেন করছেন না, তা আমার জানা নেই।
মুরাদনগর উপজেলা চেয়ারম্যান ড. আহসানুল আলম সরকার কিশোর বলেন, শুরুতে আমার কাছে এ বিষয়ে একটি প্রজেক্ট চেয়েছিল, আমি তাতে রাজি হইনি। একটি সিন্ডিকেটের মতো আছে, তারা পরবর্তীতে স্লিপের টাকা থেকে মেশিনগুলো ক্রয় করিয়েছে। এখন শুনছি মেশিন ক্রয়ের ৩ বছরেও নাকি তা চালু করা হয়নি। আমার মনে হয়, শিক্ষকদের ক্লাস ফাঁকি দেওয়া বন্ধ করতে মেশিন ক্রয়ের মূল লক্ষ্য ছিল না, লক্ষ্য ছিল মেশিনের নামে ওই সিন্ডিকেটের পকেট ভারী করা।