সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য কয়েকটি অপরিহার্য উপাদানের মধ্যে বায়ু অন্যতম। আমাদের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন দূষণমুক্ত পরিবেশ ও নির্মল বাতাস। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, বায়ু খুব সহজলভ্য একটি উপাদান। কিন্তু আমাদের দেশে দিন দিন নির্মল বায়ু বিলুপ্তির পথে যাচ্ছে। এ কারণে জনস্বাস্থ্য এখন হুমকির মুখে। শীতের কুয়াশার মতো ধুলায় আচ্ছাদিত রাস্তা। ফলে বিশ্বের আর সব দূষিত বায়ুর শহরকে পেছনে ফেলে গত ২৩ ও ২৪ জানুয়ারি পর পর দুই দিন এক নম্বরে উঠে আসে রাজধানী ঢাকা।
বিশেষজ্ঞরা জানান, ছয় ধরনের পদার্থ ও গ্যাসের কারণে ঢাকায় দূষণের মাত্রা সম্প্রতি অনেক বেড়ে গেছে। এর মধ্যে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ধূলিকণা অর্থাৎ পিএম ২.৫-এর কারণেই ঢাকায় দূষণ অতিমাত্রায় বেড়ে পরিস্থিতি নাজুক হয়ে উঠছে। এ অবস্থায় শিশু, প্রবীণ ও অসুস্থ রোগীসহ সবাইকে মাস্ক ব্যবহার করা উচিত বলে মনে করেন তারা।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বায়ুমান নির্ণয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান বা একিউআই একটি শহরের বাতাস মানুষের কতটুকু নির্মল বা দূষিত, এ সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দিয়ে থাকে।
বায়ুদূষণের কারণে প্রথমেই প্রভাব পড়ে শ্বাসযন্ত্রের ওপর। বিশ্বব্যাপী যেসব অসংক্রামক রোগে মানুষের সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঘটে, এর অধিকাংশই বায়ুদূষণজনিত। ধূলিকণা নিঃশ্বাসের সঙ্গে সহসাই রক্তে মিশে গিয়ে পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে এ সময় নানা অসুখে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ জন্য ধূলিকণা প্রতিরোধক ব্যবস্থা যে কোনো মূল্যেই নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে সর্দি, জ্বর, ইনফ্লুয়েঞ্জা, কাশি, অ্যাজমার মতো রোগের প্রকোপ বাড়বে। জ্বর, কাশির অন্যতম কারণ হচ্ছে দূষিত বায়ু। ফলে দূষিত বায়ু রোধ করা ছাড়া আমাদের অন্য কোনো বিকল্প নেই।
ঢাকা মহানগর ও এর আশপাশে যেন বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে থাকে, এ ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়েছেন উচ্চ আদালত। বাস্তবে উচ্চ আদালতের এসব নির্দেশনা প্রতিপালন করতে পারলে বায়ুদূষণের মাত্রা অনেকাংশেই কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। বিশেষ করে অপরিকল্পিত ও সমন্বয়হীন খোঁড়াখুঁড়ি, উন্নয়ন প্রকল্পে ধীরগতি, সিটি করপোরেশনসহ সেবা সংস্থাগুলোর উদাসীনতায় নগরজুড়ে ধুলার রাজ্যে পরিণত হয়েছে।
বায়ুদূষণ রোধ করা গেলে বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রকোপ রোধে ‘জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সহায়তা’ হবে। বায়ুদূষণ কমানো গেলে নিজেদের আর্থিক সাশ্রয় যেমন হবে, তেমনি জনস্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটবে। মানুষের অসুস্থতা কমবে, গড় আয়ু বাড়বে, সময় সাশ্রয় হবে, পাশাপাশি বেড়ে যাবে জিডিপিও। বায়ুদূষণের বিপর্যয় থেকে বাঁচতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ গবেষণা ও পদক্ষেপের প্রয়োজন। করোনা মহামারীতে মাস্ক ব্যবহার বাড়লেও বায়ুদূষণে মাস্ক ব্যবহার করলে দূষণ থেকে অনেকাংশে রক্ষা পাওয়া যাবে। বায়ুদূষণের লাগাম এখনই টেনে না ধরলে অদূর ভবিষ্যতে গোটা প্রাণীকুলের জন্য ভয়াবহ অবস্থা অপেক্ষা করছে।
রফিউল কলিম রিফাত
যন্ত্রকৌশল বিভাগ, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা