advertisement
advertisement
advertisement.

প্রশাসনের সর্বত্র স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার নিশ্চয়তা চাই

শূন্য সহনশীলতার নীতির মধ্যেই দুর্নীতি চলমান

৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১২:০০ এএম
আপডেট: ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১১:০৬ পিএম
advertisement..

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারের মূল বিষয় ছিল ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতা।’ তবে জরিপে দেখা যাচ্ছে, গত এক দশকের মধ্যে দুর্নীতির পরিমাণ কমেনি, প্রায় একইরকম রয়েছে। যদি জনগণকে এ নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হয় তা হলে বরং অবস্থার অবনতির অভিযোগই শুনতে হবে। এর কারণ দুর্নীতির কোনো দৃশ্যমান বা বোধগম্য হেরফের দেখা যাচ্ছে না। আমাদের সময়ের প্রতিবেদক খবর নিয়ে দেখেছেন, গত পাঁচ বছরে দুর্নীতি দমন কমিশনে লোকবল বেড়েছে প্রায় পাঁচশর মতো, চৌদ্দটি জেলায় কার্যকর দপ্তর চালু হয়েছে, মামলার পরিমাণ বেড়েছে, দুদকের তদন্ত কর্মকর্তাদের তৎপরতাও আগের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু কাজের সক্ষমতা বাড়লেই যে অভীষ্ট কাজ সম্পন্ন হবে তার নিশ্চয়তা নেই। জনগণ মনে করে দুদকের কাজের ওপর সরকারের নেপথ্য হস্তক্ষেপ এখনো বহাল। অর্থাৎ দুর্নীতি দমন কমিশন তাদের বিচারে এখনো একটি স্বাধীন সংস্থা নয়।

দেখা যাচ্ছে, ক্ষমতাসীন দলের নীতি ঠিক আছে, আইন ও লোকবলের দিক থেকে সক্ষমতাও বেড়েছে। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, শূন্য সহিষ্ণুতার নীতি বাস্তবায়নের জন্য কেবল নীতি প্রণয়নই যথেষ্ট নয়। এতে সরকারের সদিচ্ছার প্রকাশ ঘটলেও তা বাস্তবায়নের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও ছক অনুযায়ী কাজ না হলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। বরং অর্থনীতিবিদরা বলছেন, গত এক দশকে ব্যবসায়ীরা ক্ষমতার সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়ায় দুর্নীতির গোড়ায় হাত দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। দেশে এমন এক ধরনের পুঁজিবাদ গড়ে উঠেছে যা ক্ষমতার সহায়তায় লালিত হয়। এতে দুর্নীতি পুরো অর্থনৈতিক ব্যবস্থার অংশ হয়ে পড়ে। ক্ষমতা ও বিত্তের আঁতাত তৈরি হলে বাস্তবে সমস্যা দূর করা কোনো সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের পক্ষেই সম্ভব নয়। এ অবস্থায় বলতেই হবে দুর্নীতি দমনে রাজনৈতিক সদিচ্ছাকে বাস্তবে প্রয়োগ করতে হলে দুদককে স্বাধীন ভূমিকা নেওয়ার উপযোগী রূপ দিতে হবে। এ কাজ সরকারকেই করতে হবে।

advertisement

ক্ষমতার কেন্দ্রে ও উচ্চ পর্যায়ে যদি অনিয়ম ও আর্থিক দুর্নীতির গাঁটছড়া দৃঢ় হয় তবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ অর্থনীতিতে বিশৃঙ্খলা ও অস্থিতিশীলতা বাড়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। অনেকদিন ধরেই এ খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার জন্য দেশের অর্থনীতিবিদরা প্রয়োজনীয় সংস্কারের সুপারিশ করে আসছিলেন। এখন বিদেশিদের কথায় সরকার তাতে হাত দিচ্ছে। আমরা মনে করি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সংস্কৃতি বিকশিত করা ছাড়া দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। আর এর জন্য প্রয়োজন নীতি ও আইনি সংস্কার এবং সে অনুযায়ী প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার ও ব্যবস্থা। বাংলাদেশকে এ পথেই এগোতে হবে। নয়তো ঋণখেলাপি, অর্থপাচার ও জনস্বার্থবিরোধী দুর্নীতি ও অনিয়মের বিস্তার ঠেকানো যাবে না। আওয়ামী লীগের এবারের ইশতেহারে প্রশাসনের সর্বক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকারই হবে বিশেষভাবে কাম্য। তার পরই আমাদের পক্ষে যথার্থ অর্থে আইনের শাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে।