advertisement
advertisement
advertisement

নতুন চমকের অপেক্ষায়

রহমান মৃধা
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০১:৩৩ পিএম | আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০১:৩৩ পিএম
রহমান মৃধা
advertisement

আমাকে বলা হলো নিজের জ্ঞানকে কাজে লাগাও। আমি বললাম কোন কাজে? উত্তরে বলা হলো ব্যাংকের থেকে যে ধার নিয়েছ সেটা এখন সুদে-আসলে শুধু বেড়ে চলেছে আর তুমি হা হুতাশ করছো কোনো সমাধান ছাড়া? আমি বললাম কিন্তু কী করব? টাকা তো আটকা পড়ে আছে তাকে তো কোনোভাবেই ফ্রি করতে পারছিনে? আমাকে বলা হলো আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স মানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার কর!

আমি বললাম এ তো নতুন এক বাটপারি বা ধান্দাবাজি এবং মানুষেরই তৈরি। প্রথমে আমাদের ব্রেন ওয়াশ করবে পরে লুটপাট করবে এবং শেষে নতুন ফন্দি নিয়ে হাজির হবে। এসব ধান্দা-ফান্দা দিয়ে মানুষ জাতি মূলত নিজেরা নিজেদেরকে পঙ্গু করে ফেলছে। ক্ষমতা হস্তান্তর হচ্ছে মুষ্টিমেয় কিছু সংখ্যক মানুষের মাঝে। বাকিরা দৌড়ানোর পর থাকার কারণে নিজেদের চিন্তাশক্তি হারিয়ে পরের ওপর নির্ভর হতে শুরু করছে। যার ফলে বেশির ভাগ মানুষ ধোঁকা এবং বোকার মধ্যেই থেকে যাচ্ছে।

advertisement

মানুষ মূলত যা তৈরি করছে তার বেশির ভাগই কল্যাণের চেয়ে অকল্যাণই বেশি। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কম্পিউটার সায়েন্স এর একটি অংশ। তবে এ মেশিন একদম বাটপার মানুষের মতো চিন্তা ভাবনা করতে শুরু করেছে। এবং ভবিষ্যতে শাসন, শোষণ এবং ভাষণের মধ্যে দিয়ে রাজনীতিবিদদের মত ধোঁকা দিবে। কম্পিউটারকে মানুষের মস্তিষ্কের মতো তৈরি করে তার মধ্যে মানুষের মতো চিন্তা-ভাবনা ঢুকিয়ে প্রোগ্রাম করে কাজে লাগানোকে মূলত আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বলা হয়।

এখন আমাদের সকলের মধ্যেই ইন্টেলিজেন্স ক্ষমতা রয়েছে, যা অটোমেটিক্যালি বাড়তে থাকে। এখন যদি কম্পিউটারের মধ্যে একই ধরণের ইন্টেলিজেন্স পার্টস ডেভেলপ করা হয় এবং রোবট সিস্টেম সেট করা হয় এবং সেটা যদি ঠিক ভাবে মনিটরিং করা যায় তখন জ্ঞানী-গুণী মানুষের মতো এই আর্টিফিশিয়াল মস্তিস্ক কাজ করবে। মেশিন লার্নিং কম্পিউটার প্রোগ্রামিং ডেভেলপমেন্ট নতুন নতুন ডেটা সংগ্রহ করবে ঠিক যেমন করে মানুষ ভাবে। মানুষ তার অভিজ্ঞতা থেকে শিখে তার কার্যক্ষমতাকে। কাজের ধরণকে উন্নত করে, ঠিক তেমন করে এই মেশিনও নিজের কাজের অভিজ্ঞতা থেকে নতুন কিছু শিখে।

advertisement

এসব আলোচনা ঘুমের ঘোরে কার সঙ্গে হচ্ছিল জানিনে, তবে পাশে আমার স্ত্রী শুয়ে ছিলেন তিনি আমার ঘুম ভেঙে দিলেন। আমারে বললেন, কী সব আলাঝালা স্বপ্ন দেখছো? আমি বললাম তাই নাকি? সর্বনাশ! ঘুম যখন ভেঙেই গেল কী করি! ড্রইংরুমে এসে বসলাম। এবার ঘুমের ঘোরে নয় একেবারে জেগে জেগে ভাবতে শুরু করলাম যদি এমন হয়; কাজ-কাম ফেলে শুধু আনন্দফুর্তি করব। যদি এমন মেশিন তৈরি করা যায় যেমন চা-কফির আড্ডা, যা খুশি তাই করা ইত্যাদি? সম্ভব হবে না কেন?

আজ থেকে ঠিক ২৫ বছর আগে খুব কম লোকের ভাগ্যেই সুযোগ হয়েছিল মোবাইল ফোন ব্যবহার করার। এরিক্সসন টেলিকমিউনিকেশন তখন বলতে গেলে পৃথিবীর ফ্রন্ট পেজে নতুন প্রযুক্তির দিক দিয়ে। আমি আমার মোবাইল টেলিফোনে কথা বলছি আর হাঁটছি। হঠাৎ এক মহিলা চিৎকার করে বলছে, হেল্প হেল্প সে আমাকে কী যেন বলছে? কিছুক্ষণ পরে একটি লোক আমাকে জিজ্ঞেস করল, তুমি কী বলেছো নারীকে? আমি বললাম কই নাতো কিছুই না? নারী বললো, হ্যাঁ তুমি আমাকে অনেক কিছু বলেছ। আমি বললাম দেখ কোথাও ভুল হচ্ছে, আমি আমার স্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বলতে বলতে হাঁটছি আর তুমি পাশ দিয়ে তোমার মত যাচ্ছো, তুমি কোথাও ভুল করছো। নারী এবং লোকটি সব শুনে এবং আমার হাতের টেলিফোন দেখে অবাক হয়েছিল সেদিন সুইডেনে।

আজ সবার হাতে মোবাইল ফোন পৃথিবীর সর্বত্র। ওই একই সময়ে নাসা (ন্যাশনাল এরোনটিক্স এবং স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) চাঁদে জমি বিক্রি করছে জানলাম। আমার এক আমেরিকান বন্ধু জন বেনান জানলো সে কিনবে আমি ইচ্ছুক কিনা! জিজ্ঞেস করলাম দাম কত সে জানালো কাঠা ২০০ ডলার তবে জায়গা একটু ছায়া কারণ ভালো জায়গাগুলো আগেই বিক্রি হয়ে গেছে। জনকে বললাম দেখো একটু কম দামে কেনা যায় কিনা, পরে দামাদামি করে দুই কাটা কেনা হলো ৩০০ ডলার দিয়ে। প্রতি বছর কর দিতে হয় ২০ ডলার। তখন ভেবেছিলাম বাংলাদেশ ছেড়ে যখন সুইডেনে আসতে পেরেছি চাঁদে যাওয়া অসম্ভব হবে না। গত বছর বন্ধু জন সে জমি বিক্রি করে দেয়, খরচ খরচা বাদে লাভ হয়েছে ৫০০ ডলার। ভাবছি যদি চাঁদে বসতবাড়ি হয়, বেড়াতে যাবো একবার বেঁচে থাকলে।

যাই হোক ঘটে যাওয়া ঘটনা সম্পর্কে লিখেছি বেশ। এখন ভাবনাতে ঢুকেছে যা ঘটেনি তবে ঘটতে পারে তার ওপর কিছু লেখি। যদি বলি আগামী ১ থেকে ৫ বছরের মধ্যে আমরা টাকা, পয়সা বা ব্যাংকের কার্ড ছাড়াই কেনাবেচা করবো শুধু আমাদের হাতের বুড়ো আঙুলের ছাপ দিয়ে। আঙুলের ছাপ শনাক্ত করবে আমাদেরকে। এ ধরণের প্রযুক্তি শুরু হয়েছে অনেক ক্ষেত্রে। কি মনে হয় যদি আমি বলি আমাদের শরীরের যে কোনো অংশে একটি সিমকার্ড বসানো হবে এবং সব ধরনের খবর সেখানে আসবে। টেলিফোন বা কোনো ডিভাইস দরকার হবে না। শুধু তাই নয়, চোখের পর্দায় পৃথিবীর কোথায় কি ঘটছে তা দেখতে পারবো। চোখের পলক ফেলবো আর নতুন খবর দেখবো যা আজ রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে আমরা করে থাকি।

আমাদের কোনো ডাক্তারের দরকার হবে না। ডাক্তার আর ঠকাতে পারবে না। পারবে না রোগীকে নানা ধরণের শারীরিক সমস্যার কথা বলে ক্লিনিকে পাঠাতে এবং চেকআপ করাতে, সঙ্গে ৩০-৪০ শতাংশ কমিশন খেতে। হঠাৎ হার্টে সমস্যা দেখা দিয়েছে, শরীরের ভেতর যে সিমকার্ড ঢুকানো রয়েছে তা সহজেই মনিটরিং করে আমাদেরকে জানাবে শারীরিক সমস্যার কথা। একই সঙ্গে রাস্তাঘাটে বা আশেপাশে থাকবে অটোমেটিক মেশিন যেখানে ওষুধ থেকে শুরু করে দরকারি জিনিসপত্র থাকবে। সমস্যার কারণ সহ একটি কোড নং চোখের সামনে এসে হাজির হবে, সেই কোড নং ব্যবহার করে যে ওষুধের প্রয়োজন তা সঙ্গে সঙ্গে নিয়ে সমস্যার সমাধান করা যাবে।

স্কুল-কলেজের দরকার থাকবে বলে মনে হয় না। তখন আর চিন্তা করতে হবে না কিভাবে নকল বন্ধ করতে হবে। সুশিক্ষার জন্য লেখালেখিও করা লাগবে না। কাগজের টাকা চলবে না। দুর্নীতি করার উপায়ও থাকবে না। কেনাকাটা করতে তো শুধু বুড়ো আঙুলের ছাপ দরকার হবে। অন্যায় করার তেমন ব্যবস্থা থাকবে না। যা দরকার তা সহজেই পাওয়া যাবে। বুঝতে অসুবিধা হলে বা ভাষাগত সমস্যা থাকলে তাও সহজ উপায়ে বিশ্লেষণ থেকে শুরু করে যা দরকার সব ব্যবস্থা থাকবে। কাজ করতে অফিসে যাওয়া লাগবে না কারণ হনুলুলুতে ছুটিতে থাকা অবস্থায় বাংলাদেশের সমস্যার সমাধান করা যাবে এবং বাংলাদেশের সমস্যা তখন গ্লোবাল সমস্যা হবে তাই বাংলার মানুষকে ভাবতে হবে না সমাধান খুঁজতে।

পানি সম্পর্কে কিছু বলি। কারণ পানি নিয়ে আমার ভাবনা কয়েক বছর আগে থেকে। পানি সত্যি এক বিস্ময়কর পদার্থ। পানির বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ এখনও মানব জাতির অজানা। যদিও আমরা এর ব্যবহার দেদারসে করে চলছি। এত পানি থাকতেও পৃথিবীতে ব্যবহারযোগ্য পানির অভাব এটাও একটি চিন্তার বিষয়। আমি যেটা ভেবেছি তা হলো একদিন আমরাই ইলেকট্রোলাইসিস পদ্ধতির মাধ্যমে সাগরের এই পানিকে ভেঙে এর অক্সিজেন এবং হাইড্রোজেনকে পৃথক করতে সক্ষম হবো। তখন তেলের পরিবর্তে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার হবে হাইড্রোজেন আর অক্সিজেন জীব-জন্তু ব্যবহার করবে। আমাদের কাজ হবে শুধু তেলের পরিবর্তে পানি ব্যবহার করা। আজ পর্যন্ত আমরা শুধু পানি পান করতে, রান্না করতে, শরীর পরিষ্কার করতে এবং আরও কিছু ছোটখাটো কাজে পানির ব্যবহার শিখেছি মাত্র।

মানবজাতি যত জানবে তার নিজের অস্তিত্ব সম্পর্কে তত সচেতন হবে। আমাদের শরীরের কাজকর্ম থেকে শুরু করে ব্রেনের বিভিন্ন চিন্তা চেতনা এর সব কিছুই কপি করা যাবে। আমরা যেমন খাবার খাই এবং আমাদের বেঁচে থাকার জন্য যা দরকার তার সবই শরীর স্টেপ বাই স্টেপ তার মতো করে তৈরি করে। ঠিক তেমন করে প্রযুক্তি তৈরি করা হবে যা নিজের মতো করে চলবে এবং ভাববে।

যেহেতু আমরা এ উন্নতির জন্য কাজ করবো তাই স্বাভাবিক ভাবেই আমাদের বিলাসিতা বাড়তে থাকবে। পৃথিবীর বেশির ভাগ মানুষ কিছুই করবে না। তারা শুধু আনন্দ ফুর্তিতে মেতে থাকবে। কিছু লোক ক্রিয়েটিভ হবে এবং নতুনত্বের আবির্ভাব ঘটাবে সারা বিশ্বের মানব কল্যাণের জন্য। দিনে একটি ট্যাবলেট খেলেই যা দরকার শরীর তা পেয়ে যাবে। মানুষের শারীরিক গঠনের পরিবর্তন হতে থাকবে। মানুষ চলাচল করবে তার নিজের মতো করে, ইচ্ছে মতো যেখানে খুশি যাবে, ফ্লাই করতে চাইলে করবে কোনো রকম ট্রাফিক সমস্যা ছাড়াই।

আরও অনেক কিছু যা লেখার ইচ্ছে ছিল কিন্তু আজ আর নয়। চিন্তাকে কর্মে প্রতিফলিত না হওয়া পর্যন্ত সবাই বলবে এসব শুধুই কল্পনা। তবুও বলে রাখি সব কিছুই না জানা, না শোনা, না দেখার আগে কিন্তু অজানা ছিল। আমরা কি আগে ব্যাকটেরিয়া দেখেছি? এখন তার চৌদ্দগুষ্টি চিনি।

তবে একটিই সমস্যা কি হবে পৃথিবীর হতভাগা কোটি কোটি মানুষের- যদি কাজ-কাম সবই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স দিয়ে করি! নতুন করে ভাবতে হবে কী জন্য শিক্ষা, কেন শিক্ষা! যাই হোক চেনা জানার ভাবনা থেকে বর্তমানে ফিরে এক কাপ কফি পান করতে রান্না ঘরে যেতে হবে। মারিয়া আমার সহধর্মীনি অপেক্ষা করছে। কফি হাউজের আড্ডা খানা থাকবে। কারণ বন্ধু বান্ধবীদের সঙ্গে আড্ডা মারা সঙ্গে চা-কফি পান করা এতে মজাই আলাদা, এ বাদ দিয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়া অনেক ভালো। তাই বলি চলো এক কাপ চা বা কফি সঙ্গে প্রিয় মানুষটিকে নিয়ে কিছুক্ষণ হয়ে যাক কিছু হৃদয় ছোঁয়া মুহূর্ত, কিছু আশা আর কিছু ভালোবাসার প্রত্যাশা। এসো হে বন্ধু এসো এখন মজা করি।

লেখক: সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন। ই-মেইল [email protected]