চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কদমরসুলপুর এলাকায় ‘সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে’ বড় সিলিন্ডার থেকে ছোট সিলিন্ডারে ভরা হচ্ছিল অক্সিজেন। তখন বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে বেশ কয়েকটি সিলিন্ডারে। মুহূর্তেই চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে আগুন। খবর পেয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে যোগ দেয় আগ্রাবাদ, কুমিরা ও সীতাকুণ্ড স্টেশনের তিনটি ইউনিট। পরে তাদের সঙ্গে যোগ দেয় আরও ছয়টি ইউনিট। প্রায় ২ ঘণ্টার চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে আসে আগুন। কিন্তু ততক্ষণে পুড়ে সব ছাই হয়ে যায়।
আজ শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ওই অক্সিজেন প্ল্যান্টে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণে ছয়জন নিহত ও অন্তত ৩০ আহত হয়েছেন। তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: লোহা কাটার ‘অক্সিজেন’ তৈরি হতো কারখানাটিতে
নিহতদের মধ্যে পাঁচজনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন- শামসুল ইসলাম, ফরিদুল আলম, রতন, আবদুল কাদের, সালাউদ্দিন।
জানা গেছে, কারখানাটিতে শিল্পে ব্যবহৃত (লোহা কাটার কাজ) অক্সিজেন উৎপাদিত হতো। যে সরঞ্জাম দিয়ে লোহা কাটা হয়, তা ‘গ্যাস কাটার’ নামে পরিচিত। কারখানাটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে অবস্থিত।
আরও পড়ুন: অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণ, দেখুন ছবিতে
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, অক্সিজেন প্ল্যান্টটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে হাজার হাজার অক্সিজেন সিলিন্ডার। বিস্ফোরণের মাত্রা এতই তীব্র ছিল যে, দুর্ঘটনাস্থল থেকে উড়ে যাওয়া প্ল্যান্টের লোহার টুকরার আঘাতে আশপাশের বেশ কয়েকটি যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাশাপাশি থাকা অনেক ভবন ও স্থাপনার কাচ ভেঙে গেছে। প্ল্যান্টটির জানালার গ্লাস ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। গ্রিলগুলো বাঁকা হয়ে গেছে। প্ল্যান্টটির সামনে অবস্থিত পেনিনসুলা স্টিল মিলের ১৮টি এসি নষ্ট হয়ে গেছে।
সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টের সুপারভাইজার ছানা উল্ল্যাহ বলেন, প্ল্যান্টটিতে প্রতিদিন ২০০-২৫০ বোতল অক্সিজেন রিফিল করা হতো। প্রতি বোতলে ৯.৪ ঘনমিটার অক্সিজেন থাকে। প্ল্যান্টটিতে আড়াই থেকে তিন হাজার সিলিন্ডার অক্সিজেন মজুত ছিল। চীন থেকে কেমিক্যাল এনে প্রক্রিয়াজাত করে সিলিন্ডারে অক্সিজেন ভরা হতো।’
আরও পড়ুন: সীতাকুণ্ডের আগুন নিয়ন্ত্রণে, তদন্ত কমিটি গঠন
প্ল্যান্টটিতে তিন শিফটে কাজ চলতো উল্লেখ করে ছানা উল্ল্যাহ বলেন, ‘প্রতি শিফটে ১৬ জন কাজ করে। দুপুরের শিফটে ১৬ জন কাজ করলেও চার জনকে মৃত অবস্থায় ও সাত জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। বাকি পাঁচ জনের এখনও খোঁজ পাইনি আমরা।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কারখানার এক কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, ‘অক্সিজেন কারখানায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সিলিন্ডারের মেয়াদ আছে কি না বা কার্যকরী ক্ষমতা আছে কি না, তা যাচাই করা। আমাদের কারখানায় সিলিন্ডার পরীক্ষা করার যন্ত্রপাতি রয়েছে। নিয়মিত সিলিন্ডার পরীক্ষাও করা হয়। কী কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে, তা এখনো নিশ্চিত হতে পারিনি। বুঝতেও পারছি না।’
আরও পড়ুন: সীতাকুণ্ডের বিস্ফোরণে নিহত বেড়ে ৬
ওই কারখানার আশপাশে থাকা স্থানীয়রা জানায়, বিস্ফোরণটি খুবই ভয়াবহ ছিল। প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা বিস্ফোরণের পর কেঁপে ওঠে। এসময় পুরো কারখানাটি বিস্ফোরণ ও আগুনে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অক্সিজেন সিলিন্ডার বোঝাই বড় বড় ট্রাক, কারখানার শেড এবং ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক আবদুল মালেক বলেন, ‘বড় সিলিন্ডার থেকে যখন ছোট সিলিন্ডারে অক্সিজেন ভরা হচ্ছিল, তখন অতিরিক্ত প্রেসারের কারণে বিস্ফোরণ হয়েছে। অথবা সিলিন্ডারের মেয়াদও শেষ হয়ে যেতে পারে। তদন্ত ছাড়া এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না।’
আরও পড়ুন: বিস্ফোরণে অনেকের ‘হাত-পা বিছিন্ন’, আতঙ্কে ছোটাছুটি
উদ্ধার কাজে অংশ নেওয়া স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গাউসিয়া কমিটির স্বেচ্ছাসেবকরা জানান, বিস্ফোরণে প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা কেঁপে ওঠে। আহতদের অনেকের হাত-পা উড়ে গেছে। অনেকের শরীর থেঁতলে গেছে। আমরা সংগঠনের সিনিয়রদের থেকে তথ্য পেয়ে দ্রুততম সময়ে ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত হই। এসে আমরা আগুন দেখতে পাই। পরে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের সঙ্গে কারখানায় প্রবেশ করে তিন জনকে জীবিত উদ্ধার ও তিনটি মরদেহ বের করি।’
এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাকিব বলেন, ‘মরদেহ চমেকের মর্গে রাখা হয়েছে। সবার পরিচয় নিশ্চিতের পর মরদেহ হস্তান্তর করা হবে।’
আরও পড়ুন: বিস্ফোরণের আধা কিলোমিটার দূরে লোহার টুকরার আঘাতে নিহত ১