advertisement
advertisement
advertisement

হাম হলে করণীয়

ডা. কাকলী হালদার
১০ মার্চ ২০২৩ ০৯:২৮ এএম | আপডেট: ১০ মার্চ ২০২৩ ০৯:২৮ এএম
ডা. কাকলী হালদার
advertisement

হাম একটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে রোগ যা ছোঁয়াচে স (Measles) নামক ভাইরাস দিয়ে হয়ে থাকে। হাম সাধারণত শিশুদের বেশি হয়। শুধুমাত্র মানুষের শরীরেই এই রোগ হতে পারে।

ইতিহাস: চিকিৎসক আবু বকর মুহাম্মদ ইবনে জাকারিয়া আল রাজি সর্বপ্রথম হাম রোগটি সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা দেন। এরপর ১৭৫৭ সালে ফ্রান্সিস হোম প্রমাণ করেন যে, রক্তে উপস্থিত একটি সংক্রামক জীবাণুর কারণে হাম রোগটি হয়।

advertisement

কিভাবে ছড়ায়: হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ভাইরাসটি প্রথমে শ্বাসনালীতে সংক্রমিত হয়। এরপর রক্তের মাধ্যমে দেহের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে। জীবাণু বাতাসে প্রায় ২ ঘণ্টা ভেসে থাকতে পারে এবং কোনও কিছুর সাথে বা কাপড়ে লেগে থাকতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির নাক বা গলার নিঃসরণের সাথে সরাসরি সংস্পর্শে আসলেও সংক্রমণ হতে পারে।

উপসর্গ: সংক্রমিত হওয়ার ১০-১৪ দিনের মধ্যে উপসর্গগুলো দেখা যায়। সাধারণত তীব্র জ্বরের (১০৪ °ফা বা বেশি তাপমাত্রা) সাথে হাঁচি-কাশি, নাক দিয়ে পানি পড়া এবং চোখ লাল হয়ে জ্বালা করা যা আলো পড়লে অসহনীয় লাগে। এছাড়া প্রথম উপসর্গের ২-৩ দিন পরে মুখের  ভেতরের দিকে লাল রঙের স্পটের মাঝে সাদা ডটের মতো যাদেরকে "কোপলিক স্পট" (Koplik's spots) বলে। এর কয়েকদিন পরে প্রথমে মুখ ও ঘাড় এবং আস্তে আস্তে দেহের নীচের অংশের ত্বকসহ হাত-পায়ের তালুতেও বিন্দু বিন্দু লাল ফুসকুড়িতে ছেয়ে যায় যা ৫-৭ দিন পরে বাদামি বর্ণ হয়ে মিলিয়ে যায়।

advertisement

জটিলতা : সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করা হলে রোগীর নানা গুরুতর জটিলতা যেমন এনসেফালাইটিস, কান পাকা, নিউমোনিয়া, মানসিক সমস্যা, অন্ধত্ব, খিঁচুনি, ডায়রিয়া এমনকি মৃত্যু ঝুঁকিও আছে। গর্ভবতীদের হাম হলে গর্ভপাত, মৃতবাচ্চা প্রসব এবং বিভিন্ন জন্মগত সমস্যা নিয়ে বাচ্চা জন্মগ্রহণ করতে পারে।

কম রোগ প্রতিরোধসম্পন্ন শিশু, ৫ বছরের কম বয়সী টিকাহীন শিশু, টিকাহীন ৩০ বছরের বেশি ব্যক্তি, টিকাহীন গর্ভবতী নারী, দুর্বল রোগ-প্রতিরোধসম্পন্ন ব্যক্তি ও ভিটামিন-এ-র অভাবে এই রোগ তীব্র হওয়ার এবং জটিলতা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

চিকিৎসা: হামের ভাইরাসবিরোধী সুনির্দিষ্ট কোনো ওষুধ নাই। সাধারণত ১০-১৪ দিনের মধ্যে হাম নিজে থেকেই সেরে যায়। বেশি বেশি তরল জাতীয় খাবার, পুষ্টিকর খাদ্যগ্রহণ, ভিটামিন-এ এবং পরিমিত বিশ্রাম নিতে হবে। এছাড়া চিকিৎসক লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা দিয়ে থাকেন।

প্রতিরোধ: শিশুমৃত্যুর অন্যতম কারণ হামের জন্য ২ ডোজ ভ্যাক্সিন হলো উত্তম প্রতিরোধ (৯৭% কার্যকর) ব্যবস্থা। একবার সংক্রমণ হলে বা ২ ডোজ টিকা নিলে সারাজীবনের জন্য শরীরে হাম প্রতিরোধী এন্টিবডি তৈরি হয়। বাংলাদেশে হাম-রুবেলা টিকা (এমআর ভ্যাক্সিন) বাচ্চার ৯ মাস এবং ১৫ মাস বয়সে দেয়া হয়। এছাড়া হাম-রুবেলা টিকাদান কর্মসূচিতে ৯ মাস থেকে ১০ বছর বয়সী বাচ্চাদের ১ডোজ টিকা দেয়া হয়।

সহকারী অধ্যাপক, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ।