শিক্ষার্থীদের ওপর স্থানীয় সন্ত্রাসী এবং পুলিশের ন্যাক্কারজনক হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে খালি পায়ে দাঁড়িয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দীন খান।
আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. শামসুজ্জোহা চত্বরে অবস্থান নেন তিনি। এ সময় প্লাকার্ড হাতে আহত শিক্ষার্থীদের প্রতি সমবেদনা ও সহমর্মিতা জানান এই অধ্যাপক।
অধ্যাপক ফরিদ উদ্দীন বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীরা এখনো হাসপাতাল ছাড়তে পারেনি, অনেকের সেলাই কাটেনি। তারা ক্লাসে ফিরতে পারছে না। ফলে তাদের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে আজকে আমি ক্লাস বর্জন করেছি। এ ছাড়া স্থানীয় সন্ত্রাসীদের দ্বারা ন্যাক্কারজনক এবং পৈশাচিক হামলার প্রতিবাদেও আজকে এখানে দাঁড়িয়েছি।’
আরও পড়ুন: আগুন জ্বালিয়ে রাবি শিক্ষার্থীদের রেলপথ অবরোধের ঘটনায় মামলা
তিনি বলেন, ‘এ ঘটনার পরও পুলিশের উপস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে কোনো ভূমিকা রাখতে এবং তার পরিণতি ভয়াবহ হয়েছে। এটি কেন ঘটলো সে বিষয়টি তদন্ত করে খুঁজে বের করা হোক এবং ভবিষ্যতে যেন এ রকম ঘটনা না ঘটে সে বিষয়ে নির্দেশ দেওয়া হোক।’
এই অধ্যাপক আরও বলেন, ‘এর আগেও আমরা দেখেছি শিক্ষার্থীরা হাসপাতালে মার খেয়েছে, স্থানীয়দের হাতে নির্যাতিত হয়েছে, হলগুলোতেও শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করা হচ্ছে। এটা মোটেও কাম্য নয়। আমি একজন অভিভাবক হিসেবে উদ্বিগ্ন, শঙ্কিত এবং ব্যাথিত। তাই আজকে আমি এখানে দাঁড়িয়েছি।’
এদিকে নিরাপদ শিক্ষাঙ্গনের দাবি জানিয়ে অধ্যাপক ফরিদ উদ্দীনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে অবস্থান নিয়েছেন অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. মেকারম হোসেন বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে যে ঘটনা ঘটছে, সেটা কোনভাবে আমাদের কাম্য নয়। সামান্য একটা বিষয়কে কেন্দ্র করে পুরো এলাকাবাসী আমাদের ওপর আক্রমণ করেছে। আমার বন্ধু, ভাই আহত হয়েছে। আজকে স্যারের সঙ্গে আমরা সংহতি প্রকাশ করে এখানে এসে দাঁড়িয়েছি। আমরা ওইসব সন্ত্রাসীদের দ্রুত শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’
আরও পড়ুন: রাবিতে সংঘর্ষ: ৩০০ জনকে আসামি করে পুলিশের মামলা
দ্বিতীয় বর্ষের আরেক শিক্ষার্থী রাসেল হোসেন বলেন, ‘আমরা আজকে এখানে দাঁড়িয়েছি আমাদের নিরাপত্তার জন্য। আমরা এই ক্যাম্পাসে পড়াশোনা করতে এসেছি, মার খেতে আসিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে স্থানীয়দের কাছে মার খাওয়ার মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনা আর হতে পারে না। এ রকম প্রতিনিয়ত তাদের কাছে আমরা অত্যাচারিত হচ্ছি। আজকে প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবি হচ্ছে, আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে এই ক্যাম্পাসে আমরা সম্পূর্ণ নিরাপদে থাকব এবং নিরাপদে থেকে পড়াশোনা করতে পারব।’
‘এর পাশাপাশি শতভাগ আবাসিকতার ব্যবস্থা যেন করা হয়, যাতে স্থানীয়দের থেকে মার না খেতে হয়। সর্বোপরি যেন একটা সুশৃঙ্খল পরিবেশ বজায় থাকে সেটার দাবিতেও আমরা সমবেত হয়েছি’, যোগ করেন রাসেল হোসেন।
আরও পড়ুন: বহিরাগতদের দুষছেন উপাচার্য, পুলিশ বলছে ছাত্রদের কাণ্ড
উল্লেখ্য, অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান এর আগেও বিভিন্ন ইস্যুতে সরব থেকেছেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের দখলদারিত্ব, আসন-বাণিজ্য, শিক্ষার্থীদের নিপীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবাদ করে আসছেন। বিভিন্ন সময় মানববন্ধন, প্রতীকী অনশনেও বসেছেন তিনি।