advertisement
advertisement
advertisement

খোকা থেকে বঙ্গবন্ধু: স্বাধীনতার সূর্যসন্তানের উন্মেষ

ড. মো. কামরুজ্জামান
১৬ মার্চ ২০২৩ ০৯:৩০ পিএম | আপডেট: ১৭ মার্চ ২০২৩ ১২:০০ এএম
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
advertisement

বসন্তের বাতাবরণের বার্তা নিয়ে প্রকৃতি যখন ফুলে ফুলে সুশোভিত, সুগন্ধে বিমোহিত, সবুজ-শ্যামলিমায় আচ্ছাদিত, ১৯২০ সালের ঠিক এমনি এক দিনে (১৭ মার্চ) বর্তমান গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে পিতা শেখ লুৎফর রহমান এবং মাতা সায়েরা খাতুনের কোল আলোকিত করে ধরাধামে আগমন ঘটে হাজার স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের। শিশুর জন্ম শুধু তার পরিবারের জন্য নয়, সমগ্র জাতির জন্য ছিল একটি বৃহৎ ঘটনা।

তার পারিবারিক ডাক নাম ছিল খোকা। বাবা-মা আদর করে খোকা বলে ডাকতেন। বাল্যকালের সহপাঠী, প্রাথমিক এমনকি মাধ্যমিকের সহপাঠীরাও তাকে খোকা নামেই চিনতেন। তিনি বাংলার ইতিহাসে স্মরণীয় ও বরণীয় এক ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠেন। তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলার আপামর জনসাধারণ ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে এ দেশকে স্বাধীন করেছিল। তিনি তার নির্বিশেষ ভালোবাসা, প্রগাঢ় মমত্ববোধ ও নেতৃত্বগুণে পৌঁছেছিলেন বাংলার প্রতিটি মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায়। তার এই নির্বিশেষ ভালোবাসা, প্রগাঢ় মমত্ববোধ ও নেতৃত্বগুণের ভিত রচিত হয়েছিল বেড়ে ওঠার সামগ্রীক পরিবেশ ও প্রতিবেশের প্রভাবে।

advertisement

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সুষমামণ্ডিত টুঙ্গিপাড়ায় কেটেছে বঙ্গবন্ধুর শৈশব ও কৈশোর। সেখানেই তিনি দেখেছেন ধনধান্যে পুষ্প ভরা শষ্য-শ্যামলা রূপসী বাংলাকে। তিনি বেড়ে উঠেছেন আবহমান বাংলার আলো-বাতাসে। পাখি আর জীবজন্তুর প্রতি ছিল গভীর মমতা। তিনি দোয়েল ও বাবুই পাখি ভীষণ ভালোবাসতেন। বাড়িতে শালিক ও ময়না পুষতেন। মাছরাঙ্গা ডুব দিয়ে কীভাবে মাছ ধরে তাও তিনি বসে বসে অবলোকন করতেন। নদীতে ঝাঁপ দিয়ে সাঁতার কাটতেন। ফুটবল ছিল তার প্রিয় খেলা। এভাবে তার শৈশব কেটেছে মেঠো পথের ধুলোবালি মেখে আর বর্ষার কাদা পানিতে ভিজে। আর এর মধ্য দিয়েই তাঁর মানসপটে সৃষ্টি হয় পল্লী ও প্রাণের প্রতি এক গভীর মায়া, মাটি আর মানুষের প্রতি প্রবল আকর্ষণ।  

নদীর তীরবর্তী মানুষেরা সংগ্রামী হয়। নদী ভাঙন, ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে তাদের নিয়মিতই সংগ্রাম করতে হয় জীবন যুদ্ধে জয়ী হওয়ার জন্য। বঙ্গবন্ধুও মধুমতি নদীপাড়ের মানুষ। ফলতঃ ছোটোবেলা থেকেই তাঁর মাঝে গড়ে ওঠে সংগ্রামী চেতনা। এছাড়াও বঙ্গবন্ধু ছেলেবেলা থেকে গভীরভাবে প্রত্যক্ষ করেছেন শাশ্বত গ্রামীণ সমাজের সুখ-দুঃখ ও হাসি-কান্না।

advertisement

তৎকালীন সমাজ জীবনে জমিদার, তালুকদার ও মহাজনদের অত্যাচার, শোষণ ও প্রজা নিপীড়ণ দেখেছেন শৈশব থেকেই। তিনি অসাম্প্রদায়িকতার দীক্ষা পান গ্রামের হিন্দু-মুসলমানদের সম্মিলিত সামাজিক আবহে। আর প্রতিবেশী দরিদ্র মানুষের দুঃখ-কষ্ট তাকে সারাজীবন সাধারণ দুঃখী মানুষের প্রতি অগাধ ভালবাসায় সিক্ত করে তোলে। বস্তুতপক্ষে সমাজ ও পরিবেশ তাকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের সংগ্রাম করতে শিখিয়েছে। সংগ্রাম-বিপ্লব-প্রতিবাদ ঘিরেই আবর্তিত তাঁর জীবন। তাই জীবনে তিনি কোনো অপশক্তির কাছে আত্মসমর্পন বা মাথানত করেননি। তাইতো, বালকদের দলের রাজা ডানপিটে সাহসী গ্রাম্য বালকটি সময়ের পরিক্রমায় হয়ে ওঠেন সবার চোখের মণি, বিশ্বস্ত এক সার্বজনীন আশ্রয়স্থল। সব কাজের নেতা, ভাইবোনের প্রিয় মিয়া ভাই।  

ছাত্রজীবন থেকেই বঙ্গবন্ধুর ভিতরে উন্মেষ ঘটে নেতৃত্বের আবশ্যকীয় গুণাবলির। বঙ্গবন্ধুর পিতা শেখ লুৎফর রহমান চাকরি করতেন আদালতে আর মাতা সায়েরা খাতুন ছিলেন গৃহিণী। টুঙ্গিপাড়ার শেখ বাড়ির দক্ষিণের কাছারি ঘরে মাস্টার, পণ্ডিত ও মৌলভী সাহেবদের কাছে ছোট্ট মুজিবের হাতেখড়ি। এরপর তাদের পূর্ব পুরুষদের গড়া গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শুরু হয় তার প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া। পিতার কর্মস্থল মাদারীপুরের ইসলামিয়া হাইস্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে কিছুদিন লেখাপড়া করেন। পরবর্তীতে তার বাবা বদলি হয়ে গোপালগঞ্জ গেলে তিনি সেখানে অবস্থিত মিশন হাইস্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হন। বিদ্যালয়ের প্রায় প্রতিটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং খেলাধুলায় তিনি অংশগ্রহণ করতেন। ইতিহাসের বই ছিল তার খুবই প্রিয়।

এমন নানবিধ গুণের কারণে প্রধান শিক্ষক গিরিশ চন্দ্রসহ সব শিক্ষকের প্রিয়পাত্র হয়ে উঠেছিলেন তিনি। শিশুকাল থেকেই তিনি ছিলেন পরোপকারী এবং অন্যায়েরর বিরুদ্ধে দারুন সোচ্চার। মানুষের দুঃখ-দুর্দশায় যেমন সহযোগিতার হাত বাড়াতেন তেমনি অন্যায় আচরণ দেখলে প্রতিবাদ করতেন। মাত্র তের বছর বয়সে প্রতিবাদের বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন তিনি। হয়ে উঠেছিলেন ন্যায়ের পক্ষে অকুতোভয় এক কিশোর সৈনিক।

বঙ্গবন্ধু অষ্টম শ্রেণির ছাত্র থাকাকালীন ১৯৩৯ সালের অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে সংগে নিয়ে গোপালগঞ্জ মাথুরানাথ মিশনারি স্কুল পরিদর্শনে যান। স্কুল পরিদর্শন শেষে মন্ত্রী ডাকবাংলোর দিকে হেঁটে যাচ্ছিলেন। এমন সময় একদল ছাত্র এসে হঠাৎ তাদের পথ আগলে দাঁড়ায়। ছাত্রদের এমন কাণ্ড দেখে হেডমাস্টার রীতিমতো ভয় পেয়ে গেলেন। তিনি চিৎকার দিয়ে বললেন, ‘এই তোমরা কী করছ রাস্তা ছেড়ে দাও।’

এমন সময় পাতলা-লম্বা ছিপছিপে মাথায় ঘন কালো চুল ব্যাক ব্রাশ করা খোকা (বঙ্গবন্ধু) একেবারে মুখ্যমন্ত্রীর সামনে এসে দাঁড়ালেন। মন্ত্রী জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী চাও?’ নির্ভীক খোকা উত্তর দিলেন, ‘আমরা এই স্কুলেরই ছাত্র। স্কুলের ছাদে ফাটল ধরেছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই সেখান থেকে বৃষ্টির পানি চুইয়ে পড়ে আমাদের বই-খাতা ভিজে যায়। ক্লাস করতে অসুবিধা হয়। স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে বার বার এ ব্যাপারে বলা হলেও কোনো ফল হয়নি। ছাদ সংস্কারের আর্থিক সাহায্য না দিলে রাস্তা মুক্ত করা হবে না।’ এভাবেই স্কুলের দাবি-দাওয়া অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে উত্থাপন করেছিলেন তিনি। তার এ রকম বলিষ্ঠ নেতৃত্ব আর সাহসিকতায় মুগ্ধ হয়ে প্রধানমন্ত্রী তাদের স্কুল মেরামতের জন্য অর্থ বরাদ্দ করেন।

অসুস্থ থাকার কারণে চার বছর তার একাডেমিক শিক্ষায় ছেদ পরে। সে সময় তার গৃহশিক্ষক ছিলেন আবদুল হামিদ। যিনি অসহায় ও দরিদ্র মুসলিম ছেলেমেয়েদের জন্য গড়ে তোলেন ‘মুসলিম সেবা সমিতি’। আবদুল হামিদ মারা যাওয়ার পর ১৭ বছরের কিশোর শেখ মুজিব সমিতির হাল ধরেন। সম্পাদকের দায়িত্ব তুলে নেন নিজের কাঁধে। এটিই তার জীবনের প্রথম পদ। এরপর ১৯৩৮ সালে তার জীবনে ঘটে যায় একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। তার এক মুসলিম বন্ধুকে হিন্দু মহাসভার লোকজন ধরে নিয়ে যায়। বন্ধুদের নিয়ে বঙ্গবন্ধু তাকে উদ্ধার করতে গেলে মারামারি হয়। তার বিরুদ্ধে একজন হত্যা চেষ্টার মিথ্যা অভিযোগ করলে তিনি গ্রেপ্তার হন এবং সাত দিন পর মুক্তি পান। এটি ছিল বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ জেল জীবনের প্রথম অভিজ্ঞতা।

১৯৪২ সালে কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন শেখ মুজিবুর রহমান। সংস্পর্শে আসেন বিশিষ্ট রাজনৈতিক হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর, রাজনীতিতে হাতে খড়ি হয় তার। এরপর কলেজে হলওয়েল মনুমেন্ট অপসারণ আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন তিনি। সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র ইউনিয়নের। মুজিব ভাই বা শেখ মুজিব হয়ে ওঠেন সহপাঠী ও সতীর্থদের কাছে। এরপর ১৯৪৬ সালে ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র ইউনিয়নের মহাসচিব নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৪৭-এ দেশ ভাগের পর দেশে ফিরে আসেন। যোগ দেন যুবলীগের রাজনীতিতে। ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি। এরপর আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং পরে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।    

৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৬২-এর ছাত্র আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৬৬ সালে তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ছয় দফা ঘোষণা করেন। সে সময় মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, মুসলিম লীগের সবুর খান, ন্যাপের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ এর কাছে তিনি হয়ে উঠেছিলেন ‘মজিবর’। ছয় দফা, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা এবং ১৯৬৯-এর গণআন্দোলনের কারণে তিনি বিশ্বব্যাপী ব্যাপকভাবে ‘শেখ মুজিব’ নামে পরিচিত হয়ে ওঠেন। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও তাকে শেখ মুজিব নামেই সম্বোধন করা হয়। ১৯৬৯ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে কারামুক্তির পরদিন ২৩ ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ (ডাকসু) এবং পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) শেখ মুজিবকে গণসংবর্ধনা দেয়ার আয়োজন করে। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের তৎকালীন সভাপতি তোফায়েল আহমেদ উক্ত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন। তিনি জনতাকে উদ্দেশ্য করে প্রস্তাব রাখেন, শেখ মুজিব বাংলার মানুষের মুক্তির জন্য জীবন বিপন্ন করেছেন, তিনিই বাঙালির প্রকৃত বন্ধু। তাই এখন থেকে তার উপাধি হবে ‘বঙ্গবন্ধু’। লাখ, লাখ জনতা হর্ষধ্বনি দিয়ে এই প্রস্তাবকে অকুণ্ঠ সমর্থন জানান। এই মাহেন্দ্রক্ষণ থেকেই তিনি ভূষিত হন ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে। টুঙ্গিপাড়ার সেই ছোট্ট খোকা হয়ে ওঠেন ‘বঙ্গবন্ধু’। এ বিশেষণই হয়ে ওঠে তার চিরন্তন পরিচয়, বাঙালির সার্বজনীন প্রিয় সম্বোধন।     

অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময়ে তিনি সংগ্রাম শুরু করেছিলেন। কিন্তু তার এই সংগ্রাম নিজে বাঁচার জন্য ছিল না, ছিল অন্যায় হটিয়ে ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য, জাতির মুক্তির জন্য, বাঙালিকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র উপহার দেওয়ার জন্য। বঙ্গবন্ধু বাঙালিদের শিখিয়েছেন কিভাবে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকতে হয়। বঙ্গবন্ধু স্বাধীন দেশে স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার সাহস যুগিয়েছেন।

১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে বিজয় অর্জন করে। কিন্তু নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে ক্ষমতাসীনদের প্রচন্ড অনীহা দৃশ্যমান হয়। এছাড়াও বাঙালি জাতিসত্ত্বার বিরুদ্ধে প্রাসাদ ষড়যন্ত্র এবং বাংলাদেশে গণহত্যার প্রস্তুতির প্রেক্ষাপটে অনিবার্য হয়ে ওঠে মুক্তিযুদ্ধ। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের অবিস্মরণীয় ভাষণে যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করার আহ্বান জানান বঙ্গবন্ধু। এই আহ্বান স্বাধীনতা এবং শোষণ-পীড়ন থেকে মুক্তির বোধ সঞ্চারিত করে সমগ্র জাতির চেতনায়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু। তিনি বলেন, ‘This may be my last message. From today Bangladesh is independent...’। এই ঘোষণার মাধ্যমে পুরো বাঙালি জাতি প্রেরণা পায় মুক্তিযুদ্ধের। ঝাঁপিয়ে পরে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে। দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র সংগ্রাম করে বহু প্রাণ আর এক সাগর রক্তের বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে বীর বাঙালিরা মহান নেতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ছিনিয়ে আনে বিজয়ের লাল সূর্য। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অন্তরীণ অবস্থা থেকে মুক্তি পেয়ে ১০ জানুয়ারী ১৯৭২ সালে ফিরে আসেন প্রিয় মাতৃভূমিতে।

বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবসে বঙ্গবন্ধুর অন্যতম আর একটি বিশেষ গুণ উল্ল্যেখ না করলেই নয়। তিনি কচি-কাঁচাদের ভীষণ ভালোবাসতেন। তাই তো কচিকাঁচার মেলা ও খেলাঘর তাঁর অত্যন্ত প্রিয় সংগঠন হয়ে উঠেছিল। ছোটবেলায় বঙ্গনেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও তিনি কচিকাঁচার আসরে ভর্তি করিয়েছিলেন। এমনকি তার জীবনের শেষ দিনের কর্মসূচিতেও তিনি স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য সময় বরাদ্দ রেখেছিলেন। দেশের স্বাধীনতা, মানুষের মুক্তি ও কল্যাণে বঙ্গবন্ধুর অবদান কখনো অস্বীকার করা যাবে না। পিতা-মাতার স্বপ্ন ছিল খোকা বড় হয়ে বিজ্ঞ আইনজীবী হবে। কিন্তু না, তিনি ছোট্ট খোকা থেকে অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে পরিণত হন বঙ্গবন্ধুতে, জাতির পিতায়। বাংলার আকাশে উন্মেষ ঘটে স্বাধীনতার সূর্যসন্তানের—যাকে ছাড়া আজকের স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশর স্বপ্ন অধরাই থেকে যেত। 

জন্মদিনে এই রাজনীতির মহাকবিকে হৃদয় নিংড়ানো শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করছি।     

ড. মো. কামরুজ্জামান: অধ্যাপক, ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজ (আইবিএস), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। সাধারণ সম্পাদক, আইবিএস এলামনাই এসোসিয়েশন।