গণমাধ্যমে প্রায়ই সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে দেশে বিভিন্ন জায়গায় বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যুর। এ সংখ্যা দিন দিন যেভাবে বাড়ছে, এতে আমরা উদ্বিগ্ন না হয়ে পারছি না। গতকাল আমাদের সময়ের এক প্রতিবেদনে জানা গেছেÑ বজ্রপাতে তিন জেলায় প্রবাসী, নারী ও যুবকসহ পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। তা খুবই দুঃখজনক।
দুর্যোগ বিশেষজ্ঞ ও আবহাওয়াবিদদের মতে, বজ্রপাত বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হচ্ছে বায়ুদূষণ। বিশ্বের যেসব দেশের বায়ু ভয়াবহ দূষণের শিকার, এগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ একটি। বিশেষ করে রাজধানীতে বায়ুদূষণের মাত্রা মারাত্মক অস্বাস্থ্যকর পর্যায়ে পৌঁছেছে। নদ-নদী ও সবুজের সমারোহে ভরা দেশের এই বৈসাদৃশ্য নিঃসন্দেহে দুর্ভাগ্যজনক। নদী বা জলাভূমি শুকিয়ে গেলে এবং গাছপালা ধ্বংস হওয়ার কারণে তাপমাত্রা ও বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেড়ে যায়। এ ধরনের আবহাওয়া বজ্রসহ ঝড়বৃষ্টি বৃদ্ধির জন্য দায়ী। তাল, নারিকেল, বটসহ নানা ধরনের বড় গাছ বজ্রপাতের আঘাত নিজের শরীরে নিয়ে নেয়। আগে গ্রামগঞ্জে এ ধরনের গাছ বেশি ছিল। ফলে বজ্রপাত হলেও মানুষ বেঁচে যেত। কিন্তু এখন এসব গাছের বড়ই অভাব। এ ছাড়া বেশিরভাগ মানুষের কাছে এখন মোবাইল ফোন থাকছে। অধিকাংশ এলাকায় মোবাইল ফোন ও বৈদ্যুতিক টাওয়ার রয়েছে। কৃষিতেও যন্ত্রের ব্যবহার বেড়েছে। ফলে বাড়ছে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা।
বজ্রপাত রোধ করতে আমাদের গাছ লাগাতে হবে, বিশেষ করে তালগাছ। কারণ তালগাছ দ্রুত লম্বা হয়। তাই এমন বড় গাছ লাগানোর উদ্যোগ নিতে হবে। বজ্রপাতে যারা নিহত হয়েছেন, দেখা গেছে তাদের বেশিরভাগ মাঠে খেটে খাওয়া সাধারণ চাষি-গেরস্ত। এ জন্য চাষিদের রক্ষা করতে হলে মাঠের মাঝখানে বাবলা, হিজল, সুপারিসহ এ ধরনের গাছ লাগাতে হবে। মাঠের মাঝখানে খাম্বা বসিয়ে এতে আর্থিং করলে বজ্রপাতে প্রাণহানি কমবে। সরকার বজ্রপাতের আগাম সংকেত দেওয়াসহ প্রযুক্তিনির্ভর আরও কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। আমরা চাই, এসব পদক্ষেপ দ্রুত বাস্তবায়ন করা হোক। বজ্রপাত সম্পর্কে গবেষণা ও জনসচেতনতা বৃদ্ধি করে মানুষকে সচেতন করতে পারলেই এ দুর্যোগ থেকে অনেকাংশে রক্ষা পাওয়া যাবে।