স্বাস্থ্যোজ্জ্বল গর্ভধারণে কোন খাদ্যগুলো ভালো- এ নিয়ে মায়েদের দ্বিধা-দ্বন্দ্বের শেষ নেই। মায়ের পুষ্টি, পেটের শিশুটির পুষ্টি সমানভাবে বিবেচ্য বিষয়। তাই মোটামোটি ভালো একটি খাদ্যতালিকা দেওয়া হলো-
ডিম : বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, ডিম থেকে আপনি পাচ্ছেন ৯০ ক্যালরি মাত্র। অথচ এতে ১২টা ভিটামিন ছাড়াও পাচ্ছেন বিভিন্ন খনিজ উপাদান ও প্রোটিন। ডিমের প্রোটিন সহজপাচ্য ও গুণসম্পন্ন। আপনি ও আপনার ভেতরের শিশুটির জন্য প্রতিদিন যে প্রোটিন দরকার, ডিম তা সরবরাহ করে থাকে। ডিমে কোথিন থাকে। কোথিন আপনার ভেতরের শিশুটির মস্তিষ্ক বাড়ায় ও অন্য সব গঠন প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে। ডিম আবার নার্ভের জটিলতাও রোধ করে। ডিম সম্পর্কে যে খারাপ ধারণা আছে অর্থাৎ ডিম কোলেস্টেরল বাড়ায়, আসলে তা ঠিক নয়। কারণ ডিমে স্যাচুরেটেড ফ্যাট কম। ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল পায় না সে। প্রত্যেক গর্ভবতীকে প্রতিদিন ১ থেকে ২টা ডিম খেতে হবে।
স্যামন : স্যামন মাছে আছে অতি উৎকৃষ্ট প্রোটিন। আরও আছে ওমাগা-৩ ফ্যাস্টি অ্যাসিড,যা শিশুর বেড়ে ওঠা, মস্তিষ্ক বর্ধনের জন্য অতি উপকারী।
শিম : বিভিন্ন ধরনের শিমে থাকে প্রচুর প্রোটিন। প্রোটিন আঁশসমৃদ্ধ শিমের দানা আপনার গর্ভবতীকালীন কোষ্ঠ্যকাঠিন্য রোধ করে। শিমে থাকে প্রচুর আয়রন, ফলিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম ও জিংক। এগুলো ভ্রণের গঠন ও বর্ধনে খুব সাহায্য করে।
মিষ্টিআলু : মিষ্টিআলুর গায়ের রক্ত ক্যারোটিনয়েড আমাদের দেহে গিয়ে ভিটামিন এ-তে রূপান্তরিত হয়। এ-এর ব্যাপারে দ্বন্দ্ব আছে। পশুখাদ্য থেকে প্রাপ্ত ভিটামিন ‘এ’ বেশি খেতে ক্ষতি হতে পারে কিন্তু ক্যারিনয়েড থেকে প্রাপ্ত ভিটামিন ‘এ’-তে কোনো ক্ষতিকর উপাদান নেই। সুতরাং ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ সবজি বেশি বেশি খেতে হবে। এছাড়া মিষ্টিআলুতে প্রচুর ফলিক অ্যাসিড ও আঁশ থাকে।
পপকর্ন ও অন্য খোসাসহ খাদ্য : পপকর্নে আঁশ থাকে প্রচুর। থাকে অনেক পুষ্টি। যেমন- ভিটামিন ‘ই’ সেলেনিয়াম, ফাইটো নিউট্রিমন্ট। এটি প্রোটিনসমৃদ্ধও বটে।
বাদাম : প্রচুর ওমেগা-৩ রয়েছে বাদামে, যা আপনার ভেতরের শিশুটিকে গঠনে সাহায্য করে।
ইউগার্ট : ইউগার্টে থাকে প্রচুর প্রোটিন। বিশেষ করে গ্রিন ইউগার্ট। এটি রয়েছে ক্যালসিয়ামের প্রাচুর্য। গর্ভধারণকালে মায়ের জন্য ক্যালসিয়াম খুবই দরকার। আপনি ক্যালসিয়াম গ্রহণ করলে আপনার পেটের শিশুটির দেহ গঠনে তা সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
গাঢ় সবুজ শাকসবজি : সিনাক, কালি, ব্রকলি ও অন্যান্য সবুজ শাকসবজিতে ভিটামিন এ, সি, কে-তে ভরপুর থাকে। এগুলো অনাগত শিশুর চোখের স্বাস্থ্যগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
মাংস : প্রোটিনের খুব উত্তম উৎস হলো মাংস। তবে পাতলা চর্বিহীন মাংস খেতে হবে। চর্বিগুলো কেটে ফেলে দিতে হবে। তবে শিক কাবার, হটডগ জাতীয় মাংসের খাদ্যগুলো গ্রহণ করা উচিত নয়। এতে থাকে ব্যাকটেরিয়া প্যারাসাইটগুলো আর এসব গ্রহণে শিশুর মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। সবশেষে বলি, মাতৃত্বকালীন স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করে আপনার অনাগত সোনামণির নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।
লেখক : রেজিস্ট্রার, শিশুরোগ বিভাগ
হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতাল
চেম্বার : পপুলার ফার্মেসি (মসজিদ গলি রোড)
বড় মগবাজার, ঢাকা
০১৭১৫২৮৫৫৫৯, ০১৭১২৭০২৯০৫