সাধারণত দেখা যায় সিনেমা বা নাটকের প্রযোজকদের বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ তোলেন অভিনয়শিল্পীরা। যৌন হয়রানি, পাওনা না দেওয়া, প্রযোজকদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ নতুন কিছু নয়। আবার প্রযোজকরাও অভিনয়শিল্পীদের বিপক্ষে অভিযোগ তোলেন শিডিউল ফাঁসানোর, প্রচারে সময় না দেওয়া। কিন্তু অভিনয়শিল্পীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন! বৃহস্পতিবার শীর্ষ নায়ক শাকিব খানের ওপর ধর্ষণের অভিযোগ করেন এক প্রযোজক।
তিনি দাবি করেন শ্যুটের সময় শাকিবকে নাকি নিয়মিত পতিতালয়ে নিয়ে যেতে হতো। আর তা না হলে হোটেলেই যৌনকর্মীদের আনতে হতো। ২০১৬ সালে ব্লকবাস্টার হিট হয় শাকিব খানের অভিনীত বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র ‘শিকারি’। এরপরই টিজার বের হয় শাকিব খানের আরেকটি সিনেমা ‘অপারেশন অগ্নিপথ’। আশিকুর রহমান পরিচালিত ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ সিনেমাটির শুটিং ২০১৭ সালে শুরু হলেও আজও শেষ হয়নি এর কাজ। তবে মাস ছয়েক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক সংবাদিক পোস্ট করেন অস্ট্রেলিয়ায় একটি ছবির শুটিংয়ের সময় এক সহপ্রযোজককে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার হন শাকিব খান। এবার এ ঘটনা নতুন করে সবার সামনে আনেন অগ্নিপথ সিনেমার আরেক প্রযোজক রহমতউল্লাহ। তিনি শাকিব খানের বিরুদ্ধে অসদাচরণ, মিথ্যা আশ্বাস ও ধর্ষণের মতো গুরুতর বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
শোনা যাচ্ছে এই অভিযোগের মীমাংসা করেছেন শাকিব। বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি রেস্তোরাঁয় প্রযোজকের সঙ্গে বসেছিলেন শাকিব। মধ্যস্থতায় ছিলেন প্রযোজক খোরশেদ আলম খসরু। প্রযোজক রহমতউল্লাহ বলেন, ‘আমরা বিষয়টি নিয়ে বসেছিলাম। শাকিবের পক্ষ থেকে সিনেমাটি শেষ করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। কিন্তু আমি আমার সিদ্ধান্ত এখনো জানাইনি। মীমাংসা হলে অবশ্যই আমি সংবাদমাধ্যমকে জানাব।’ শাকিব যদি সিনেমাটির বাকি অংশের শুটিং না করেন অথবা ক্ষতিপূরণ না দেন, তা হলে মামলা করবেন বলেও জানিয়েছিলেন প্রযোজক।
প্রযোজক আর অভিনয়শিল্পীদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ নিয়ে গেল বছর বেশ আলোচনায় ছিল এফডিসি। সরকারি অনুদানে নির্মিত ‘আশীর্বাদ’ সিনেমাটি নিয়ে প্রযোজকের সঙ্গে নায়ক-নায়িকার দ্বন্দ্ব চলছিল। মুক্তির তারিখ ঘোষণা নিয়ে শুরু হওয়া বাদানুবাদ গড়ায় ব্যক্তিগত আক্রমণে। নায়ক-নায়িকাকে ছাড়া সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন প্রযোজক। পাল্টা সংবাদ সম্মেলনে প্রযোজককে ডাকেননি নায়ক-নায়িকা। একসময় সিনেমা মুক্তি নিয়েই সংশয় দেখা দিয়েছিল। বহুমুখী দ্বন্দ্বের মধ্যে নায়িকা মাহিয়া মাহি শিল্পী সমিতিতে লিখিত অভিযোগ করেন। সে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সমিতির নেতারা মাহি, রোশান, পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান মানিক ও প্রযোজক জেনিফার ফেরদৌসকে ডাকেন। পরে তাদের মধ্যে চলতে থাকা সমস্যার সমাধান করে সিনেমাটি মুক্তি দেন।
গেল বছরের শেষ দিকে তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতা নাসিম সাহনিকের বিরুদ্ধে ‘গুরুতর’ অভিযোগ আনেন চিত্রনায়িকা শিরিন শিলা ও চিত্রনায়ক কায়েশ আরজু। তারা ‘ব্যাচেলর ইন ট্রিপ’ নামের একটি সিনেমায় অভিনয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন। সেই সিনেমার শুটিংয়ে তারা অংশ নিয়েছিলেন গত ২২ ডিসেম্বর। পটুয়াখালীর কুয়াকাটার সেই শুটিংয়ে সিনেমার নায়িকা শিরিন শিলাসহ বেশ কয়েকজন শিল্পী ছিলেন। সেখানে পাঁচদিনের শুটিংয়ের কথা থাকলেও নামমাত্র দুদিন শুটিং করে ঢাকায় ফেরার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন তারা। তবে ফেরার পথে ইউনিটের সবাইকে ফেলে পালিয়ে যান সিনেমার নির্মাতা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিনেমাটির নায়িকা শিরিন শিলা। কুয়াকাটার বিভিন্ন লোকেশনে পাঁচ দিনের শুটিং শিডিউল ছিল। ১৯ ডিসেম্বর ভোররাতে গিয়ে ইউনিট সেখানে পৌঁছে। যাওয়ার পর থেকে শুটিং ইউনিটে অগোছালো অবস্থা নজরে আসে শিল্পীদের। নায়ক-নায়িকাসহ শিল্পীদের থাকা-খাওয়া সব কিছুতেই অব্যবস্থাপনা ছিল বলে দাবি করেন শিল্পীরা। এতে ইউনিটে অসন্তোষ তৈরি হয়।
প্রযোজকদের বিরুদ্ধে পারিশ্রমিক না দেওয়ার অভিযোগ নিয়ে গেল বছর অনেক কিছুই হয়েছে। লেখালেখি হয়েছে বিস্তর। আবার অনেক প্রযোজকের অভিযোগ, পরিচালকেরা টাকা নিয়ে কাজ করেননি। তবে জানা গেছে কাজ শেষ করার পর শিল্পী, কলাকুশলীদের পারিশ্রমিক না দেওয়া অনেক নির্মাতা ও প্রযোজকের অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। অভিনয়শিল্পী ছাড়াও ক্যামেরাম্যান, আর্ট, প্রডাকশন বয়সহ অনেকেই নিয়মিত টাকার জন্য ধরনা দিচ্ছেন। নির্মাতা আবু হায়াত মাহমুদ ফেসবুকে লিখেছিলেন, ‘আর কত অপেক্ষা করব? ছয় বছর ধরে একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার আমাকে একটি দীর্ঘ ধারাবাহিকের (১৬৮ পর্ব) পরিচালক সম্মানীর হিসাব দিচ্ছেন না। চাইলেই বলেন, এই বসি বসছি, হিসাব দিচ্ছি। ধৈর্যটা বেশি দিন ধরে ফেলেছি। খুব শিগগিরই নাম, ছবিসহ প্রকাশ করব।’ অভিনেত্রী কাজী নওশাবা ফেসবুকে লিখেছেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে কয়েকজনের কাছে প্রাপ্য সম্মানী একাধিকবার চেয়েও পাইনি। চাইলেই দিচ্ছি দিচ্ছি বলা হয়।’