advertisement
advertisement
advertisement

জাতীয় পার্টির সব অঙ্কে ‘ক্ষমতার স্বাদ’

মুখে ৩০০ আসন দরকষাকষিতে ৫০ :: বিএনপি ভোটে এলে এক হিসাব না এলে আরেক

মুহম্মদ আকবর
১৯ মার্চ ২০২৩ ১২:০০ এএম | আপডেট: ১৯ মার্চ ২০২৩ ০৩:৫৮ পিএম
advertisement

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নানা অঙ্ক কষছে জাতীয় পার্টি (জাপা)। তবে সব অঙ্কের একটিই লক্ষ্য যেভাবেই হোক ক্ষমতার সঙ্গে থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিএনপি নির্বাচনে এলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট বেঁধে ক্ষমতার স্বাদ নিতে চায় দলটি। আর বিএনপি না এলে আরও কিছু রাজনৈতিক দল মিলে একাদশ জাতীয় সংসদের মতো আগামীতেও তারা অবতীর্ণ হবে প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকায়।

বিভিন্ন সভা-সমাবেশে দলের শীর্ষ নেতারা বলছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে তারা ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবেন। কিন্তু অনুসন্ধানে জানা গেছে, আগামী নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন চৌদ্দ দলের সঙ্গে দরকষাকষি চলছে তাদের। এ দরকষাকষিতে তারা ৫০টি আসনের দিকেই বেশি মনোযোগ দিচ্ছে।

advertisement

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাপার একাধিক নেতা জানিয়েছেন, রংপুর অঞ্চলে হাতেগোনা দুয়েকটি আসন ছাড়া জাতীয় পার্টির কোনো অবস্থান নেই। ফলে সংসদে আরও আসন পেতে চাইলে কোনো না কোনো দলের সঙ্গে সমঝোতায় যেতে হবে। ক্ষমতায় না থাকলে দলটি আবার পেছনের দিকে যাত্রা শুরু করবে। এই ঝুঁকি নিতে নারাজ জাপার শীর্ষ নেতারা। অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেও দলটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ শুধু দলীয় স্বার্থে ক্ষমতায় থাকার রাজনীতি করেছেন এবং সফল হয়েছেন। দলের একজন কো-চেয়ারম্যান বলেন, ‘জাতীয় পার্টি মনে করছে আগামী নির্বাচনে বিএনপি সরাসরি আসবে না, তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী দিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। সে কারণে আওয়ামী লীগের দিকেই বেশি ঝুঁকে আছে জাতীয় পার্টি।’

ওই নেতা বলেন, ক্ষমতার সঙ্গে থাকা ছাড়া বিকল্প ভাবছে না জাপা। এ ক্ষেত্রে বিশেষ কোনো দলের সঙ্গে সমঝোতা করে অন্তত ৫০টি আসন যেন পাওয়া যায়, সে চেষ্টাও চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে মনে করেন জাপার এই নেতা।

advertisement

জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করে, ‘অদৃশ্য’ প্রভাবে জাপায় এখনো কোন্দল রয়েছে। ‘অসুস্থ’ রওশন ও ‘ক্ষুব্ধ’ বিদিশা সিদ্দিককে কাজে লাগিয়ে একটি পক্ষকে জাপার মূল স্রোতের বাইরে দাঁড় করানো হয়েছে। তবে এটিকে খুব বেশি গুরুত্ব না দিয়ে নির্বাচনমুখী হচ্ছে জাতীয় পার্টি।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অতীতের সব নির্বাচন থেকে শিক্ষা নিয়ে দলের প্রয়োজনে আরও ‘কৌশলী’ হচ্ছে দলটির নীতিনির্ধারণী মহল। যে কোনো উপায়ে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য দলের নেতারা বিভিন্ন দিকে নজর দিচ্ছেন, চোখ কান খোলা রাখছেন। দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন এরশাদ সরাসরি আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে যাচ্ছেনÑ এমন আলোচনা রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ জোরেশোরেই আছে।

জাপা থেকে নির্বাচিত ঢাকা-৪ ও ঢাকা-৬ আসনের সংসদ সদস্য যথাক্রমে কাজী ফিরোজ রশীদ ও সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কর্মসূচির সঙ্গে মিল রেখে দলীয় কর্মসূচি দিয়ে নিজের অবস্থান জানান দিচ্ছেন। অন্যদিকে দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু আছেন ‘কৌশলী’ ভূমিকায়। দুজনই দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। সামনের পরিস্থিতি তাদের কাছে এখনো অস্পষ্ট। পরিস্থিতি আঁচ করতে পারলে সিদ্ধান্ত নেবেন।

এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জিএম কাদের) আমাদের সময়কে বলেন, ‘৩০০ আসনের জন্য আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছি। সামনে আমরা দল গুছিয়ে অর্থাৎ জুলাইয়ের মধ্যে আমাদের দলের জাতীয় কাউন্সিল করার চেষ্টা করছি। তার পর আমরা দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় দলের সবার সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব। এখন আমরা দলটাকে একটা শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

জোট গঠনের জন্য ছোট-বড় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল জাপার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ অনেকেই চেষ্টা করছে। কিন্তু আমরা এসব আমলে নিচ্ছি না। আগে আমরা আমাদের অবস্থান ঠিক করে নিই, তার পর এসব নিয়ে আলোচনা।’

ধর্মভিত্তিক যেসব দল জাতীয় পার্টির সঙ্গে ছিল, তারা এখনো আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না নেই। আমরা তো জোট তৈরি করিনি। তবে এদের মধ্যে কেউ কেউ যোগাযোগ করে। সেগুলোর বেশির ভাগই নামসর্বস্ব দল। তবে বিশেষ কেউ যদি ব্যক্তিগতভাবে আসেন, তা হলে আমরা আমলে নিই। বড় কোনো দল যদি জোটের ইস্যু নিয়ে আসে, তা হলে আমরা বিবেচনায় নেব।’