ভারত থেকে জ্বালানি তেল সরবরাহ পাইপলাইনের উদ্বোধন
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে নির্মিত জ্বালানি তেল সরবরাহের পাইপলাইন উদ্বোধন করেছেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী। গতকাল শনিবার বিকালে ভিডিও কনফারেন্সে পাইপলাইনটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আন্তঃসীমান্ত মৈত্রী তেল পাইপলাইন উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এই পাইপলাইন চালু হওয়া দুই দেশের জন্য একটি মাইলফলক অর্জন।
এই উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে ভারত থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে বাংলাদেশে ডিজেল আমদানি শুরু হলো। আগে রেলপথে ভারত থেকে ডিজেল আনা হতো বাংলাদেশে।
উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এটি বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তার পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করবে। তিনি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে যখন বিশে^র অনেক দেশ জ্বালানি সংকেটর মুখোমুখি। এই পাইপলাইনটি আমাদের জনগণের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’ ডিজেল আমদানিতে ব্যয় ও সময় কমবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এর ফলে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় ডিজেলের স্থিতিশীল সরবরাহও নিশ্চিত করবে।’
আগামী দিনে ভারত-বাংলাদেশের সহযোগিতা আরও বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা উন্নয়নে একসঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি এবং ভারতের কাছ থেকে বিভিন্ন সহযোগিতা পাচ্ছি। সেই সঙ্গে সাংস্কৃতিক সহযোগিতা ও উভয় দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ছে। দুই দেশের জনগণের কল্যাণে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে পারস্পরিক সহযোগিতাও বৃদ্ধি পেয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের দুই দেশের বন্ধুত্ব অটুট থাকুক সেটিই আমরা চাই। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে, সেটিকে আমরা কার্যকর করতে চাই। ভারতের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ঠিক রেখে দুই দেশের জনগণের সার্বিক উন্নয়নে আমরা কাজ করে যেতে চাই। আমরা চাই আমাদের উন্নয়ন আরও ত্বরান্বিত হোক।’
১৯৭৫ সালের পর ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়ার কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে ভারতের সরকার ও জনগণের কাছে ঋণী। আমরা দুই বোন তখন ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলাম। আমাদের আরও আত্মীয়স্বজন যারা বেঁচে গিয়েছিল, তারাও ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল। কাজেই আমি ভারতের কাছে, ভারতের জনগণের কাছে, সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ।’ যৌথ এ পাইপলাইন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ভারত প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সে সে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও বক্তব্য দেন।
এদিকে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) থেকে নেওয়া প্রায় ৩ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ভারতীয় রুপি ব্যয়ে নির্মিত ১৩০ কিলোমিটার ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের (আইবিএফপিএল) মাধ্যমে বাংলাদেশে ডিজেল রপ্তানি করবে ভারত।
পাইপলাইনটি বাংলাদেশের ভূখণ্ডে ১২৫ কিলোমিটার এবং ভারতের অভ্যন্তরে ৫ কিলোমিটার প্রসারিত। পাইপলাইনটির হাইস্পিড ডিজেলের (এইচএসডি) বার্ষিক পরিবহনের ক্ষমতা ১ মিলিয়ন টন (এমএমটিপিএ)। এটি প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের সাত জেলায় হাইস্পিড ডিজেল সরবরাহ করবে।
বিপিসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দীর্ঘ এ পাইপলাইনে ৪৭ লাখ লিটার বা চার হাজার ৭০০ টন তেল সব সময় সংরক্ষিত থাকবে। শিলিগুড়ি প্রান্ত থেকে নতুন তেল দিয়ে চাপ দিলেই পার্বতীপুর প্রান্তে পাইপের তেল ডিপোতে জমা হবে। কত তেল এলো সেটি মিটারে হিসাব রাখা হবে। পার্বতীপুরে আগে থেকেই বিপিসির ১৫ হাজার টন তেল মজুদ করার মতো ট্যাংকার রয়েছে। নতুন করে সেখানে আরও ছয়টি ট্যাংকার নির্মাণ করা হচ্ছে, যার ধারণক্ষমতা ২৯ হাজার টন। ২০২০ সালের মার্চে এ পাইপলাইনের কাজ শুরু হয়ে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে কোভিড মহামারীর কারণে কাজ এক বছর পিছিয়ে যায়।