বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে শেষ চার ম্যাচের চারটিতেই হারিয়েছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে একটি ওয়ানডে ও তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ ছিল। বন্দরনগরী চট্টগ্রাম ও ঢাকার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ম্যাচগুলো অনুষ্ঠিত হয়েছে। ক্রিকেটের কুলীন দলটির বিপক্ষে বিশেষ করে টি-টোয়েন্টি সিরিজ ৩-০ ব্যবধানে জেতার পর টাইগারদের আত্মবিশ^াস ছিল আকাশচুম্বী! শক্তির বিচারে তাই ইংল্যান্ডের চেয়ে অনেক পিছিয়ে থাকা আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তামিমরা হেসেখেলে জয় তুলে
নেবেন- এটাই ছিল প্রত্যাশিত। হয়েছেও তাই-ই। রেকর্ড জয় দিয়েই ওয়ানডে সিরিজ শুরু করেছেন স্বাগতিকরা। সিলেটে প্রথম ম্যাচে আয়ারল্যান্ডকে ১৮৩ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। রানের হিসেবে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয় এখন এটিই। আগেরটি ছিল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৬৯। সাকিব আল হাসান আর অভিষিক্ত তৌহিদ হৃদয়ের দারুণ ব্যাটিংয়ে নির্ধারিত ওভারে ৮ উইকেটে ৩৩৮ রান করে বাংলাদেশ; নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে এটি সর্বোচ্চ দলীয় রান। বাংলাদেশের রেকর্ড রান তাড়ায় আয়ারল্যান্ড ৩০.৫ ওভারে ১৫৫ রানে অলআউট হয়। অভিষেক ম্যাচেই ৯২ রানের ‘হৃদয়’ জুড়ানো ইনিংস খেলায় ম্যাচসেরা হন তৌহিদ হৃদয়।
ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগে পরীক্ষা-নিরীক্ষা সেরে নিতে চায় বাংলাদেশ। যার শুরুটা হলো আয়ারল্যান্ড সিরিজ দিয়ে। টি-টোয়েন্টির পর আয়ারল্যান্ড ম্যাচ দিয়ে ওয়ানডেতে অভিষেক হয়েছে তৌহিদ হৃদয়ের। আর নিজের প্রথম ম্যাচেই ‘জাত’ চিনিয়েছেন এই ব্যাটসম্যান। টস হেরে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ ৮১ রানের মধ্যে তামিম, লিটন ও শান্তর উইকেট হারায়। এরপর চায়ের শহরে সাকিব আল হাসান ও তৌহিদ হৃদয়ের ব্যাটিং প্রদর্শনী। সাকিবের ব্যাট নিয়মিতই হাসছে। ইংল্যান্ড সিরিজের তিন ওয়ানডের দুটিতে ফিফটি করেছিলেন। রানের স্রোত বইয়ে দিয়েছেন আয়ারল্যান্ড সিরিজের প্রথম ম্যাচেও। আর তাকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন তৌহিদ হৃদয়। বাংলাদেশ যে রানের পাহাড় গড়ে সেটা সাকিব-তৌহিদ হৃদয়ের ব্যাটিং কল্যাণেই। চতুর্থ উইকেটে তারা স্কোরকার্ডে ১২৫ বলে ১৩৫ রান জমা করেন। তবে দুজনেই সেঞ্চুরির কাছে গিয়েও সেঞ্চুরি করতে পারেননি। সাকিবের আক্ষেপ ৭ রানের; আর তৌহিদের ৮ রানের। সাকিব তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৫৩তম ফিফটি তুলে নেওয়ার ম্যাচে গড়েছেন একটি রেকর্ড। বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ওয়ানডেতে ৭ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন তিনি। ৮৯ বলে ৯ বাউন্ডারিতে ব্যক্তিগত ৯৩ রানে আউট হয়েছেন সাকিব। বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে তৌহিদ অভিষেক ম্যাচেই সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়তে পারতেন। কিন্তু তিনি পারেননি। তবে অভিষেকে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ রান এখন তারই। সাকিবের পর মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে পঞ্চম উইকেটে ৪৯ বলে ৮০ রানের জুটি গড়েন তিনি। ছয়ে নেমে বেশ আক্রমণাত্মক মেজাজেই ব্যাটিং করেন মুশফিক। গ্রাহাম হিউমের শিকার হওয়ার আগে ২৬ বলে ৩ চার ও ৩ ছক্কায় ৪৪ রান করেন তিনি। মুশফিকের পর একই ওভারে তৌহিদকেও ফেরান হিউম। অভিষেক ম্যাচে ৮৫ বলে ৮ চার, ২ ছক্কায় ব্যক্তিগত ৯২ রানে আউট হন তিনি। ২৯৭ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর ইয়াসির (১০ বলে ১৭), তাসকিন (১১) ও নাসুমের (১১*) ব্যাটে ভর করে নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে সর্বোচ্চ দলীয় রানের রেকর্ড গড়ে বাংলাদেশ। ডানহাতি পেসার গ্রাহাম ইয়ান হিউম ৬০ রানে ৪ উইকেট নেন।
ব্যাটিংয়ের পর বোলিংয়েও দাপট দেখিয়েছে বাংলাদেশ। তাসকিন, ইবাদতদের বোলিং তোপ আর সাকিব, নাসুমের ঘূর্ণির সামনে সুবিধা করতে পারেনি আইরিশরা। তবে শুরুটা তাদের ভালোই ছিল। উদ্বোধনী জুটিতে স্টেফেন দোহেনি ও পল স্টিরলিং ৬০ রানের জুটি গড়েন। শুরুর ছন্দটা তারা ধরে রাখতে পারেনি। দোহেনি সাকিবের বলে মুশফিকের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন। এরপর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে সফরকারীরা। সাতে নামা ডকরেল চেষ্টা করেছিলেন। তার ৪৫ রানের ইনিংস সফরকারীদের রান ব্যবধানটাই শুধু কমাতে পেরেছে।
ইংল্যান্ড সিরিজের শেষ ম্যাচে দারুণ বোলিং করেছিলেন ইবাদত হোসেন। আয়ারল্যান্ড ম্যাচেও সেই ছন্দটা ধরে রেখেছেন ২৯ বছর বয়সী পেসার। আইরিশদের টপ অর্ডারের দুই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটসম্যান পল স্টিরলিং ও হ্যারি টেক্টর তার শিকার। শুধু তাই-ই নয়, মার্ক আদিরের পর পথের কাঁটা হয়ে থাকা ডকরেলের স্টাম্প উপড়ে দিয়েছেন তিনি। ৬.৫ ওভারে ৪২ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন ইবাদত। ৬ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এটি তার সেরা বোলিং। আয়ারল্যান্ডকে ১৫৫ রানে গুটিয়ে দেওয়ার ম্যাচে কিপটে বোলিং করা তাসকিন ৬ ওভারে ১৫ রানে নিয়েছেন ২ উইকেট। এ ছাড়া নাসুম ৩ ও সাকিব ১ উইকেট নেন। আগামীকাল একই মাঠে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ ও আয়ারল্যান্ড।