advertisement
advertisement
advertisement

পুতিনের বিচার কি আইসিসি আদৌ করতে পারবে?

সাক্ষাৎকার মার্কিন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আলেজান্ডার মটিল

জাহাঙ্গীর সুর
১৯ মার্চ ২০২৩ ১২:০০ এএম | আপডেট: ১৯ মার্চ ২০২৩ ১০:২৮ এএম
আলেজান্ডার মটিল
advertisement

ইউক্রেনে কথিত যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। কিন্তু এই আদালত আদৌ কি তার বিচার করতে পারবেন? ইরাক আক্রমণের জন্য জর্জ বুশ এবং আফগানিস্তান আক্রমণের জন্য বারাক ওবামার কি বিচার করবেন এই আদালত? এসব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন ইউক্রেন বংশোদ্ভূত মার্কিন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আলেজান্ডার মটিল। গতকাল ইমেইলে এই সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আমাদের সময়ের সহকারী সম্পাদক জাহাঙ্গীর সুর

আমাদের সময় : রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আইসিসি। এই খবরে আপনার প্রতিক্রিয়া কেমন?

advertisement

আলেজান্ডার মটিল : আমি এক কথাই বলব : এ এক দুর্দান্ত খবর। কারণ, পুতিন একজন যুদ্ধাপরাধী এবং গণহত্যাকারী।

আমাদের সময় : রাশিয়া আইসিসির স্বাক্ষরকারী দেশ নয়। সুতরাং রাশিয়ার কাছে এই পরোয়ানার কী মানে থাকবে?

advertisement

আলেজান্ডার মটিল : দেখুন, এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানার প্রতীকী গুরুত্বটাই প্রধানত বিবেচ্য। যুদ্ধের বৈধতা প্রতিষ্ঠা করার জন্য পুতিন যেসব দাবি করে আসছেন, সেসব দাবি প্রত্যাখ্যান করে এই পরোয়ানা জারির ঘটনা। এ ছাড়া এটি বিশ্বকে বলছে, দেখো, আইসিসি শুধু দক্ষিণ বিশ্ব কিংবা ছোট দেশগুলোর মামলাসমূহের বিচার করে না।

আমাদের সময় : আপনি কি বিশ্বাস করেন, বিশ্ব পুতিনকে বিচারের মুখোমুখি করতে সফল হবে?

আলেজান্ডার মটিল : সম্ভব। তবে, পুতিনকে বিচারের মুখোমুখি তখনই করা সম্ভব হবে, পুতিনের উত্তরসূরিরা যখন তাকে ‘বলি’ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন, মানে তাকে আইসিসির কাছে তুলে দিতে পারবেন। আমি মনে করি, এটা অসম্ভব কিছু নয়।

আমাদের সময় : আইসিসিকে একটি নিরপেক্ষ আদালত ব্যবস্থা হিসেবে কতখানি মূল্যায়ন করেন?

আলেজান্ডার মটিল : মানুষের গড়া কোনো প্রতিষ্ঠানই ১০০% নিরপেক্ষ হতে পারে না। তো, মানুষের তৈরি একটি প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ যতটা নিরপেক্ষ হতে পারে, আমি মনে করি আইসিসি সেই সর্বোচ্চ স্তরের নিরপেক্ষ একটি প্রতিষ্ঠান। সর্বোপরি, রোম সংবিধিতে সই করেছে এমন দেশের সংখ্যা ১২০-এর বেশি। এই আদালতের বিচারিক প্রক্রিয়ায় উত্তর বিশ্ব ও দক্ষিণ বিশ্ব সব প্রান্তেরই প্রতিনিধি আছেন।

আমাদের সময় : কাকতালীয়ভাবে ইরাকে মার্কিন আক্রমণের ২০ বছর পূরণ হচ্ছে। ২০০৩ সালের ১৯ মার্চ ওই আক্রমণ শুরুর মাত্র ১৫ মাসের মধ্যে বিশ্ব জেনে গিয়েছিল : ইরাকে কোনো গণবিধ্বংসী অস্ত্র নেই। এরপরও আট বছর যুদ্ধ টেনে নিয়ে গিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান আক্রমণ করেছিল এবং ২০ বছরের যুদ্ধের পরেই তারা সেনা প্রত্যাহার করেছে। আপনি কি মনে করেন, আইসিসির উচিত ইরাকের জন্য বুশ প্রশাসনের ও আফগানিস্তানের কথিত যুদ্ধাপরাধের জন্য ওবামা প্রশাসনের বিচার করা?

আলেজান্ডার মটিল : আইসিসির এখতিয়ার ব্যক্তিদের ওপর, রাষ্ট্রের ওপর নয়। যদি স্পষ্টভাবে এমন প্রমাণ হাতে থাকে যে জর্জ বুশ কিংবা বারাক ওবামার নির্দেশে বা নেতৃত্বে ইরাকে কিংবা আফগানিস্তানে যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হয়েছে, তবে হ্যাঁ, তাদেরও বিচার করা উচিত। আর যদি মার্কিন সৈন্যদের দ্বারা সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের প্রমাণ পাওয়া যায়, যেগুলো কিনা বুশ বা ওবামার দ্বারা নির্দেশিত ছিল না, তা হলে এদের দুজনকে নয়, সেই সৈন্যদের দায়ী করা উচিত। দেখুন, ঠিক এই কারণেই পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির বিষয়টি খুবই গুরুত্ববহ পদক্ষেপ। প্রথমবারের মতো উত্তর বিশ্বের কোনো বড় পরাশক্তির একজন নেতাকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে। এরই মাধ্যমে এ ধরনের অন্যান্য অভিযোগের বিচার করার দরজা খুলে গেল বলে আমি মনে করি।

আমাদের সময় : যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মতো পরাশক্তির এমন যুদ্ধনীতির খেসারত বিশ্ব আর কতদিন দেবে? যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া যদি অন্যান্য দেশে আক্রমণ ও হস্তক্ষেপ অব্যাহত রাখে, তা হলে বিশ্ব শান্তির ভবিষ্যৎ কী?

আলেজান্ডার মটিল : দুর্ভাগ্যবশত, অনাদিকাল থেকেই প্রত্যেকের মধ্যে যুদ্ধে জড়ানোর প্রবণতা আছে। এবং যুদ্ধ বাধার ইতিহাস সভ্যতাপ্রাচীন। মানুষের নীতিও আছে। যুদ্ধ নিষিদ্ধ করার প্রচেষ্টা এ রকম একটি নীতি। কিন্তু যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য সমস্ত নীতি-কৌশল থাকা সত্ত্বেও যুদ্ধ বাধে। বিশ্বের উত্তর কি দক্ষিণ সব প্রান্তের রাষ্ট্রগুলোর মধ্যেই যুদ্ধ শুরু করার ইতিহাস আছে। ফলে চাইলেও সব যুদ্ধই থামিয়ে দেওয়া যায় না, যেমনটা যায়নি অতীতে। তবে যুদ্ধাপরাধ বন্ধ করা কিংবা অন্তত যুদ্ধাপরাধের সংখ্যা কমিয়ে আনার প্রচেষ্টা বরঞ্চ সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

আমি আবার বলতে চাই, যুদ্ধ বন্ধের কোনো নিখুঁত সমাধান আসলে নেই। ঠিক যেমন কোনো নিখুঁত নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান পাওয়া ভার। যুদ্ধ বন্ধ করার প্রয়াস এবং যুদ্ধাপরাধের বিচার কিংবা বিচারিক প্রতিষ্ঠানের নিরপেক্ষতা কম-বেশি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে আসছে সেই অনেক আগে থেকেই।

আমাদের সময় : মূল্যবান সময় ও অভিমত দেওয়ার জন্য আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা।

আলেজান্ডার মটিল : অনেক ধন্যবাদ।