advertisement
advertisement
advertisement

নয়াপল্টনের সমাবেশে মির্জা ফখরুল
আ.লীগের মূলনীতি টাকা পাচার আর দুর্নীতি

নিজস্ব প্রতিবেদক
১৯ মার্চ ২০২৩ ১২:০০ এএম | আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২৩ ১১:৪৭ পিএম
রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গতকাল সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর - আমাদের সময়
advertisement

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের মূলনীতি টাকা পাচার আর দুর্নীতি বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল শনিবার নয়াপল্টনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব গত ১৪ বছরের নানা দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরেন। এ ছাড়া দেশের সব মহানগরে সমাবেশ করেছে বিএনপি।

যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে ‘সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতির প্রতিবাদে এবং সরকার পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে’ মহানগরে সমাবেশের কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। নয়াপল্টনে ঢাকা মহানগর বিএনপি উত্তর-দক্ষিণের যৌথ উদ্যোগে সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

advertisement

এ ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, রাজশাহী, রংপুর, সিলেট, কুমিল্লা, বরিশাল, খুলনা এবং রংপুর মহানগরে সমাবেশ করেছে দলটি।

রাজধানীতে বিএনপির সমাবেশে প্রখর রোদ উপেক্ষা করে ফকিরেরপুল থেকে কাকরাইল পর্যন্ত সড়কে অবস্থান নেয় হাজার হাজার নেতাকর্মী। সমাবেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ভারতে একটা সেøøাগান ছিল অলি-গলি ম্যায় শোর হ্যায়, অমুক নেতা চোর হ্যায়... আজকে আমাদের সেøাগান হচ্ছে, আওয়ামী লীগ ভোট চোরের মূলনীতি, টাকা পাচার আর দুর্নীতি। আওয়ামী লীগের দুর্নীতি গোটা বাংলাদেশকে একটা ফোকলা অর্থনীতিতে পরিণত করেছে। এরা ভোট চোর, অর্থনীতির চোরÑ এদেরকে সরিয়ে সত্যিকার অর্থে একটা জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’

advertisement

এ সময়ে সরকারের দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব সেবা খাতে, বিদ্যুৎ খাতে, আদানি কোম্পানির সঙ্গে দেশের স্বার্থবিরোধী চুক্তি, টাকা পাচার, বেগমপাড়া ও সেকেন্ড হোম, সুইস ব্যাংক, ইডিএফের আড়ালে ৭শ কোটি ডলারের দুর্নীতি, মেগা প্রকল্পে মেগা চুরি, পদ্মা সেতু, পাতাল রেল, মেট্রো রেল, রেলওয়ে দুর্নীত, স্যাটেলাইট প্রকল্পসহ আরও অর্ধশতাধিক সেক্টরের অনিয়ম আর লুটপাটের বিবরণ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ শুধু ভোট চুরি করে না, সর্বভুক আওয়ামী লীগ সব চুরি করে।

মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিয়ে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করে তার মাধ্যমে নিরপেক্ষ নির্বাচনে সব দলের একটি নির্বাচন করতে হবে। সেই নির্বাচনে একটি নির্বাচিত পার্লামেন্ট হবে, একটি জনপ্রতিনিধির সরকার হবে। তারাই দেশ চালাবে।

মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর পরিচালনায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, বিএনপি নেতা আহমেদ আজম খান, আবদুস সালাম, জয়নুল আবদিন ফারুক, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ।

নারায়ণগঞ্জ : সরকারের মন্ত্রী-এমপিসহ সংশ্লিষ্ট সবার সম্পদের তথ্য প্রকাশের দাবি জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ^রচন্দ্র রায়। তিনি বলেন, ‘এই সরকার যেভাবেই হোক ২০০৯ সাল থেকে ক্ষমতায় আছে। সেই সময় থেকে ক্ষমতাসীন দলের যারা মন্ত্রী-এমপি আছেন, তখন আপনাদের কার কী সম্পদ ছিল, এখন কী পরিমাণ সম্পদ দেশে ও দেশের বাইরে আছে তা প্রকাশ করুন।’ মহানগর বিএনপির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু প্রমুখ।

ফরিদপুর : শহরের ফরিদ শাহ সড়কে জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে মহানগর বিএনপি। এতে দলের ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘নির্বাচনে পরাজয় নিশ্চিত জেনে সেখানে বাক্স ও কেন্দ্র দখল করেছে। ভোটের আগের দিন সেখানে ব্যালট ঢুকিয়েছে। তারা আইনজীবী ও সাংবাদিকদের ওপর পুলিশি নির্যাতন চালিয়ে পৃথিবীর ইতিহাসে একটি ঘৃণ্যতম কাজ করেছে।’ ফরিদপুর জেলা বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনের তাগিদ দেন তিনি। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ফরিদপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এএফএম কাইয়ুম। এতে বক্তৃতা করেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (ফরিদপুর বিভাগ) শামা ওবায়েদ, সহসাংগঠনিক সম্পাদক (ফরিদপুর বিভাগ) সেলিমুজ্জামান সেলিম, ফরিদপুর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব একে কিবরিয়া স্বপন, যুগ্ম আহ্বায়ক আজম খান প্রমুখ।

বরিশাল : বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব) আলতাফ হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া বিএনপি কোনো নির্বাচন করবে না। আর এবার কাউকে নির্বাচন করতেও দেওয়া হবে না।’ দুপুরে মহানগর বিএনপির আয়োজনে নগরের সদর রোডের দলীয় কার্যালয়ের সামনে এই সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান। সদস্য সচিব মীর জাহিদুল কবিরের পরিচালনায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস আক্তার জাহান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাছের মো. রহমতউল্লাহ, হাসান মামুন ও এবায়দুল প্রমুখ।

রাজশাহী : বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এএফএম জাহিদ হোসেন বলেছেন, বিএনপির আন্দোলনের মুখেই আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হবে। এরপরই নিরপেক্ষ সরকারের মাধ্যমে জনগণের ভোটে নির্বাচিত জাতীয় সরকারই আওয়ামী লীগের দুর্নীতি ও খুন-গুমের বিচার করবে। ঐতিহাসিক ভুবন মোহন পার্কে অনুষ্ঠিত সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ইশা ও সদস্য সচিব মামুনুর রশিদ।

এ ছাড়াও স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে খুলনায় ড. আবদুল মঈন খান, কুমিল্লায় নজরুল ইসলাম খান, চট্টগ্রামে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, রংপুরে বেগম সেলিমা রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। ভাইস চেয়ারম্যানদের মধ্যে সিলেটে মেজর (অব) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, গাজীপুরে বরকত উল্লাহ বুলু এবং ময়মনসিংহে শামসুজ্জামান দুদু বক্তব্য রাখেন।

অন্যান্য জোট ও দল : সকালে পল্টন মোড়ে গণতন্ত্র মঞ্চের আয়োজিত সমাবেশে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছন, এই সরকার নিজেই একটা সিন্ডিকেট, ভোট ডাকাতির সিন্ডিকেট, লুটপাটের সিন্ডিকেট, জনগণের ওপরে নির্যাতন করবার সিন্ডিকেট। এজন্য এর বিরুদ্ধে লড়াইটাই চূড়ান্ত। সমাবেশের পর তারা বিজয়নগর সড়ক পর্যন্ত মিছিল করে গণতন্ত্র মঞ্চ। এ সময়ে গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলÑ জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন রমজান মাসে গণসংযোগ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। একইভাবে বিজয়নগর পানির ট্যাংকের সামনে ১২ দলীয় জোট, আল-রাজী কমপ্লেক্সের সামনে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, আরামবাগ গণফোরাম চত্বরে গণফোরাম-পিপলস পার্টি, জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য এবং পূর্ব পান্থপথে তেজগাঁওয়ে দলের কার্যালয়ের সামনে এলডিপি সমাবেশ করেছে।