গাজীপুরের সাফারি পার্ক
গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে আফ্রিকান প্রজাতির একটি বাঘিনী প্রায় দেড় মাস অসুস্থ থাকার পর গত বুধবার মারা যায়। এর আগে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ১১টি জেব্রা ও একটি বাঘের মৃত্যু হয় এখানে। পরের মাসে মৃত্যু হয় একটি সিংহীর। গত বছরের শেষদিকে একটি হাতিও মারা যায়। এ ছাড়া লেমুর, ওয়াইল্ডবিস্ট, জিরাফ, ক্যাঙ্গারুসহ পার্কের বেশকিছু প্রাণী সম্প্রতি মারা গেছে। বছর কয়েক আগেও পার্কের জলকেলিতে দুই শতাধিক ‘ব্ল্যাক সোয়ান’ ছিল। এখন খুব একটা চোখে পড়ে না। এ ছাড়া নানা অব্যবস্থাপনায় পার্কের প্রাণীর জন্মহারও কমে গেছে। পার্কের প্রাণীর মৃত্যুরোধে গত বছর তদন্ত কমিটি যেসব সুপারিশ করেছিল, সেগুলোর কোনোটিই বাস্তবায়ন হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।
তদন্ত কমিটির সুপারিশমালায় বলা হয়েছিলÑ প্রয়োজনীয় সংখ্যক জনবল দ্রুত পদায়ন করতে হবে; রোগসমূহ ও অন্যান্য বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণের জন্য একজন ভেটেরিনারি এপিডেমিওলজিস্ট সাফারি পার্কে সংযুক্ত করতে হবে। প্রাণীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কমিটির নির্দেশনা ছিলÑ ঘাস পানিতে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে চপার মেশিনে কেটে সরবরাহ করা, দানাদার খাদ্য ও সরবরাহকৃত মাংসের গুণগত মান যাচাই, জেব্রার জন্য আলাদা বেষ্টনী নির্মাণ, সরবরাহকৃত শাকসবজি, ফলমূল ও ঘাস ধোয়ার জন্য চৌবাচ্চা নির্মাণ, মুক্ত স্থানে ঘাস চাষ,
অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ রক্ষায় ডিজিটাল ডিভাইসে সকলকে সংযোগ করা এবং পরিচালক, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও অন্যান্য কর্মকর্তাসহ সমস্ত কর্মীকে নিয়ে প্রতি মাসে সভা করা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পার্কের একাধিক কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে সাফারি পার্কে চার হাজারের বেশি প্রাণী রয়েছে। এসব প্রাণীর জন্য এখানে নেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। একজন ভেটেরিনারি চিকিৎসক দিয়ে এসব প্রাণীর চিকিৎসা দেওয়া হয়। রোগ নির্ণয় করার জন্য নেই ল্যাব ও জনবল। প্রাণী চিকিৎসায় অনেকটা পরনির্ভরশীলতা রয়েছে গাজীপুরের এই সাফারি পার্কে। কোনো প্রাণী রোগে আক্রান্ত হলে তা নির্ণয় করে চিকিৎসা দিতে অনেক সময় লেগে যায়। এ কারণে অনেক প্রাণী মারা যায়। এ ছাড়া বিদেশি প্রাণী ব্যবস্থাপনায় অভিজ্ঞতাও নেই পার্ক কর্তৃপক্ষের। মারা যাওয়ার পর দায়সারা তদন্ত কমিটি ও দায়সারা বক্তব্য কিংবা থানায় জিডি করার মাধ্যমে নিজেদের দায় এড়ায় কর্তৃপক্ষ। কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিরুদ্ধে গাফিলতি ও নানা অনিয়মের অভিযোগ তো আছেই।
সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, পার্কে চার হাজারের বেশি দেশ-বিদেশি প্রাণী রয়েছে। অথচ চিকিৎসক আছেন একজন। বিদেশি প্রাণী ব্যবস্থাপনায় অভিজ্ঞ জনবলের অভাবও রয়েছে। একটি প্রাণী অসুস্থ হলে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে যোগাযোগ করে চিকিৎসা দিতে হয়। রোগ নির্ণয়ের কার্যত ব্যবস্থাও আমাদের নেই। রোগ নির্ণয়ের জন্য প্রাণীর নমুনা পরীক্ষা করতে কেন্দ্রীয় পশু হাসপাতাল বা ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে পাঠানো হয়। রোগ নির্ণয় করতেই দীর্ঘ একটি প্রক্রিয়া লাগে।
পার্কের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘তদন্ত কমিটির কিছু সুপারিশ ইতোমধ্যেই বাস্তবায়ন হয়েছে।’
পার্কের প্রকল্প পরিচালক ইমরান আহমেদ বলেন, ‘কারও অবহেলায় বা গাফিলতিতে প্রাণী মারা গেছেÑ এমন অভিযোগ সত্য নয়। গত বছর বিশেষজ্ঞরা সাফারি পার্কের জন্য যে সুপারিশমালা দিয়েছিলেন, এর মধ্যে স্বল্পমেয়াদি সুপারিশমালা বাস্তবায়ন করে আমরা নজরদারি অব্যাহত রেখেছি। প্রাণীর চিকিৎসায় বিশেষজ্ঞ দলও কাজ করছে। তবে সব সুপারিশ বাস্তবায়নে আমরা প্রকল্প তৈরি করেছি, যা অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।’