ভোগান্তি বেড়েছে কয়েকগুণ :: যুক্ত হয়নি শিক্ষার্থীদের পছন্দের প্রতিষ্ঠান :: পৃথক পরীক্ষা ও সুযোগ পাওয়ায় আসন শূন্য থাকে অনেক
এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশের দেড় মাস পার হতে চললেও এখনো গুচ্ছভর্তি পরীক্ষার আয়োজন নিয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছায়নি ভর্তি কমিটি। গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কিছু অগোছালো কার্যক্রমের জন্য এ পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমেনি। বরং নানা জটিলতায় আগের চেয়ে ভোগান্তি বেড়েছে কয়েকগুণ। বারবার মেধাতালিকা দিয়েও আসন পূর্ণ করতে পারছে না অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়। ফলে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় এই পদ্ধতিতে আগ্রহ হারাচ্ছে। অন্যদিকে, সেশনজটের কবলে পড়তে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
উচ্চশিক্ষায় ভর্তিচ্ছুদের ভোগান্তি কমাতে গুচ্ছপদ্ধতি চালু হলেও এতে যোগ দেয়নি ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগর, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়। অথচ অধিকাংশ শিক্ষার্থী এসব বিশ^বিদ্যালয়কে পছন্দের শীর্ষে রাখেন। গুচ্ছে না আসায় শিক্ষার্থীদের এই পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে পৃথক পৃথকভাবে পরীক্ষা দিতে হবে।
গুচ্ছভর্তির প্রক্রিয়ায় একজন শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হলে গুচ্ছের অধীনে থাকা সব বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের সুযোগ পান। সুযোগ রয়েছে মাইগ্রেশনেরও। তবে এরপরও গুচ্ছের বিশ^বিদ্যালয়ে আসন খালি রেখেই ক্লাস শুরু করতে হচ্ছে।
জানা গেছে, টানা দশবার মেধাতালিকার পরও আসন পূর্ণ করতে পারেনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। দশম মেধাতালিকার ভর্তি শেষে তিন ইউনিটে এখনো ৪৮১ আসন খালি রয়েছে। খালি আসন পূর্ণ করতে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে কর্তৃপক্ষ। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের বিভিন্ন অনুষদে আসন ফাঁকা রেখেই ক্লাস শুরু হয়। ৯টি মেরিট লিস্ট ও দুটি অনস্পট ভর্তি করেও আসন পূরণ করা যায়নি। এ কারণে আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়ার কথাও ভাবছেন কোনো কোনো শিক্ষক। সরাসরি অবস্থান স্পষ্ট না করলেও গুচ্ছের অধীনে থাকা পুরনো বিশ্ববিদ্যালয়ের একই অবস্থা।
এমন অবস্থায় সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক সভায় এই সিদ্ধান্তের পক্ষে মত দেন অধিকাংশ সদস্য। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে পরবর্তী সিন্ডিকেট সভায়। এ ছাড়া এই পদ্ধতির ভর্তি নিয়ে অনীহা রয়েছে ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়েরও।
বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গুচ্ছে থাকা ২২টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিয়ে এখনো সংকটগুলো কাটেনি। নানা জটিলতায় ভর্তির কাজ শেষ করতে দীর্ঘসময় লাগছে। ফলে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির পাশাপাশি আর্থিক ক্ষতিও রয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা বড় সমস্য।
বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) বলছে, গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হয় বেশ দেরিতে। আবার ভর্তির প্রক্রিয়াটিও শেষ করা হয় দেরিতে। ফলে নির্ধারিত সময়ে ক্লাস শুরু হয়নি। এ ছাড়া দীর্ঘসময় দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভাগ পরিবর্তনের (মাইগ্রেশন) সুযোগ রাখা হয়। এর ফলে শিক্ষার্থীরা যেমন সমস্যায় পড়েন, তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও আসন পূরণ নিয়ে সমস্যায় পড়ে।
নতুন শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা দ্রুত আয়োজনে গুচ্ছভুক্ত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইউজিসি। গত ৬ মার্চ ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গুচ্ছপদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা ও ভর্তি কার্যক্রম সম্পর্কিত এক পর্যালোচনা সভায় ইউজিসি সদস্য ও সংশ্লিষ্ট কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর এ আহ্বান জানান।
অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর আমাদের সময়কে বলেন, ‘ভর্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভাগ পরিবর্তনের সুযোগ অবশ্যই রাখতে হবে, তবে তা অফুরন্ত সময় দিয়ে নয়। এ ছাড়া ক্লাসের সম্ভাব্য সময় আগেই বলে দিতে হবে। আর গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোসহ সব বিশ্ববিদ্যালয়কে মোটামুটি কাছাকাছি সময়ে ভর্তি পরীক্ষা নিতে হবে।’
গত শিক্ষাবর্ষে সাতটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ২২টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, তিনটি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছপদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়া হয়। তবে এই ভর্তি প্রক্রিয়ায় সন্তুষ্ট নন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এই প্রক্রিয়ায় না আসায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। তিনি বলেন, উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও একটি পরীক্ষার মধ্য দিয়ে ভর্তির ব্যবস্থায় যেতে হবে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে যারা এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষা দিচ্ছেন, তারাই বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে আবারও একই বিষয়ের ওপর পরীক্ষা দিচ্ছেন। সেটি না করে ভাষা, গণিত, সাধারণ জ্ঞানের ওপর একটি পরীক্ষা হওয়া উচিত। আর যতক্ষণ না পর্যন্ত সেটিতে যেতে পারছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত বিদ্যমান গুচ্ছপদ্ধতির পরীক্ষা ব্যবস্থাপনাকে আরও ভালো করতে হবে।’