advertisement
advertisement
advertisement

বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার
র‌্যাবের গুলিতে নিহত বলে অভিযোগ

সোনারগাঁও (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি
১৯ মার্চ ২০২৩ ১২:০০ এএম | আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২৩ ১১:৪৭ পিএম
advertisement

সোনারগাঁওয়ে আবুল কাশেম (৬৫) নামে এক বৃদ্ধের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। স্বজনদের দাবি, র‌্যাব পরিচয়ে সাদা পোশাকধারীরা আবুল কাশেমকে গুলি করে হত্যা করেছেন। গতকাল শনিবার রাত দেড়টার দিকে উপজেলার সাদিপুর ইউনিয়নের বরগাঁও চেয়ারম্যান পাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আবুল কাশেম বরগাঁও গ্রামের মৃত কদম আলীর ছেলে।

আবুল কাশেমের স্ত্রী রমিজা বেগম জানান, রাতে তার স্বামী প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ঘর থেকে বের হন। এ সময় তিনি বাড়ির পাশে রাস্তায় কয়েকজনের চিৎকার চেঁচামেচির শব্দ শুনতে পান। রাস্তায় গিয়ে আবুল কাশেম দেখেন, পার্শ্ববর্তী বাড়ির সেলিম নামে এক যুবককে কয়েকজন জিন্সপ্যান্ট ও গেঞ্জি পরা ব্যক্তি টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছেন। আর সেলিমের বাড়ির লোকজন কান্নাকাটি করছেন। তিনি আরও জানান, এ সময় আবুল কাশেম তাদের পরিচয় জানতে চাইলে সাদা পোশাকধারীরা নিজেদের র‌্যাবের সদস্য পরিচয় দিয়ে তাকে লাঠি দিয়ে আঘাত করেন। এতে আবুল কাশেম মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এ সময় আবুল কাশেম উত্তেজিত হয়ে মাটি থেকে উঠে হইচই করলে সাদা পোশাকধারীরা তাকে গালি দেন। একপর্যায়ে তারা তার পেটে গুলি করেন। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। পরে তার লাশ সোনারগাঁও থানা পুলিশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় হুমায়ুন কবির নামে আরও একজন আহত হয়েছেন বলে জানান তিনি।

advertisement

বরগাঁও গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা জানান, গভীর রাতে গুলির শব্দ পাওয়ার পর এলাকার মসজিদের মাইকে ডাকাত পড়েছে বলে ঘোষণা করা হয়। পরে স্থানীয়রা এগিয়ে গেলে সাদা পোশাকধারী লোকজন গ্রামবাসীর উদ্দেশে গুলি ছোড়েন। এ সময় হুমায়ুন কবির নামের একজনের পায়ে গুলি লাগে। তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. বাচ্চু মিয়া হুমায়ুন কবিরের গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার সকালে পার্শ্ববর্তী গজারিয়া পাড়া এলাকায় রোজিনা আক্তার নামে এক পোশাক শ্রমিককে গলা কেটে হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ওই এলাকায় অভিযান চালায় র‌্যাব। তবে তাদের পরনে র‌্যাবের পোশাক ছিল না। ফলে এলাকাবাসীর সন্দেহ হয়। একপর্যায়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে তাদের বাগ্বিতণ্ডা তৈরি হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গুলি ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। তারা আরও জানান, র‌্যাবের পোশাক পরে এলে তাদের পরিচয় কেউ জানতে চাই তো না। এত সমস্যাও হতো না।

advertisement

সোনারগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন বলেন, রাত সাড়ে ৩টার দিকে গুলিবিদ্ধ এক বৃদ্ধকে হাসপাতালে আনা হয়। পরীক্ষা করে জানা যায়- হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। তার নাভির ওপরে একটি বুলেটের চিহ্ন রয়েছে।

এ বিষয়ে র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা বলেন, সোনারগাঁয়ে এক নারীর গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনার মূল সন্দেহভাজন আসামি সেলিমকে আটক করতে ওই এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। আসামিকে আটক করে নিয়ে আসার সময় র‌্যাবের ওপর হামলা করে আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। দেশীয় অস্ত্র নিয়ে র‌্যাবের ওপর হামলা চালানো হয়। এতে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটে। পরে আসামিকে আটক করে আমরা নিয়ে আসি। সকালে জানতে পারি একজন মারা গেছেন। তবে তিনি কীভাবে মারা গেছে সেটি নিশ্চিত না।

সোনারগাঁ থানার ওসি মাহাবুব আলম জানান, সন্দেজনক আসামি মো. সেলিমকে আটক করে র‌্যাব সদস্যরা। আসামি নিয়ে র‌্যাব সদস্যরা আসার পথে গ্রামের মাইক দিয়ে ডাকাত পড়েছে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। তখনই গ্রামবাসী র‌্যাবের ওপর হামলা চালায়। পরে এ ঘটনার সূত্রপাত ঘটে।