জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যের দাম বেড়েছে। কী নেই এই তালিকায়? চাল, ডাল থেকে আটা, ময়দা, ভোজ্য তেল, পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ, মুরগি, চিনি, ডিম সবকিছুর দামই বাড়তি। কম দামে মাংস বলতেই ছিল ব্রয়লার মুরগি। সেটিও গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যায়।
দফায় দফায় টানা প্রায় এক মাস দাম বাড়ার পর রমজানের প্রথমদিন কিছুটা কমেছে মুরগির দাম। আজ শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এর সত্যতা মেলে। তবে ক্রেতারা বলছেন, দাম কমার পরও এখনও নাগালের বাইরেই রয়ে গেছে মুরগি ও ডিম।
কারওয়ানবাজারের বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ব্রয়লার মুরগি কেজিতে ১০-১৫ টাকা কমে ২৪৫-২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনালির দাম ২০ টাকা কমে নেমেছে ৩৬০ টাকায়, আর দেশি মুরগি ৬৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, মূলত চাহিদা কমে যাওয়ায় দাম কমেছে। তারা জানান, আগের তুলনায় তাদের বিক্রি কমে গেছে। এ অবস্থায় দাম আরও কমতে পারে বলে জানান তারা।
ওই বাজারের মুরগি বিক্রেতা জয়নাল বলেন, ‘কখনো ব্রয়লার মুরগি এত দামে বিক্রি করিনি। মুরগির দাম বাড়ার পেছনে মূল কারণ সিন্ডিকেট।’
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবারের দামেই বিক্রি হচ্ছে সবজি, মাছ, মুদিপণ্য ও নানা পদের ফল। ক্রেতাদের আশঙ্কা, পুরোনো ধারাবাহিকতায় রমজানে নিত্যপণ্যের দাম আরও বাড়বে।
সরেজমিনে খুচরা চালের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গুটি স্বর্ণা কেজি ৫০ টাকা, মিনিকেট ৭০ টাকা, পাইজাম ৫০ টাকা, ২৮ চাল ৫৫ থেকে ৬৫ টাকা পর্যন্ত, পোলাও চাল খোলা ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা, প্যাকেট কেজি ১৫৫টাকা, ভেসন ৬০ থেকে ৭০ টাকা, মোটা দানা মশুর ডাল ১০০ টাকা, দেশি ছোট মশুর ডাল ১৩৫ টাকা, বুটের ডাল ৯০ থেকে ৯৫ টাকা, ছোলা ৮৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সাদা চিড়া ৬৫টাকা কেজি, লাল চিড়া কেজি ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের লিটার ১৮৭ টাকা, দুই লিটারের বোতল ৩৭৪ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল লিটার ১৮০ টাকা এবং পাম তেল বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ টাকা লিটার দরে।
এছাড়া লবণ এক কেজির প্যাকেট ৪২ টাকা কেজি, খোলা লাল চিনির কেজি ১৩০ টাকা, সাদা চিনি ১১২, দুই কেজির প্যাকেট আটা ১৩০ টাকা, দুই কেজি ময়দা ৫৬ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
মাছ মাংসের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে ব্রয়লারের কেজি ২৫০ টাকা, লেয়ার ৩২০টাকা, সোনালি মুরগি ৩৬০, দেশি মুরগি ৬৮০ টাকা, গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা এবং খাসির মাংস ১১০০টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
ক্রেতা শ্যামল রায় বলেন, ‘দেশে সবকিছু দাম বাড়ছে। ছোট থেকে বড় সব ব্যবসায়ী এই দাম বাড়ানোর সিন্ডিকেটে জড়িত। খুচরা ব্যবসায়ীদের বলতে তারা বলে পাইকাররা বেশি নিচ্ছে। পাইকাররা আবার বলে আমরা দাম কম নিচ্ছি। কিন্তু খুচরা ব্যবসায়ীরা বেশি নিচ্ছে। দুই দল দুজনকে দোষ দেয়। অথচ মাঝ থেকে বলির পাঠা হতে হয় আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের।’
তবে আগের দামেই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। বড় রসুনের কেজি ১৩০-১৪০ টাকা। ছোট রসুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৩০ টাকা, আদার কেজি ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা, চায়না আদা ২২০ টাকা।
আলুর কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫-৩০ টাকায়, খোলা চিনির কেজি ১১৫-১২০ টাকা, খোলা আটা ৬০ টাকা। তবে প্যাকেট আটা প্রতি কেজি ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা আগে ছিল ৭০ টাকা। আর ২ কেজির প্যাকেট আটা বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়।
এদিকে, বাজার তদারকিতে আজ সকাল থেকে অভিযানে নেমেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। আজ সকালে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে অভিযানে নামে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। সকাল সাড়ে ১০টায় এ বাজারের কিচেন মার্কেটে অভিযান শুরু করেন সংস্থার সদস্যরা। অভিযানের নেতৃত্ব দিচ্ছেন অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার। উপস্থিত আছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ও ঢাকা জেলা কার্যালয়ের অফিস প্রধান আব্দুল জব্বার মণ্ডলসহ বিভিন্ন কর্মকর্তারা।
অভিযানের শুরুতে অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, ‘রমজানে কিছু বিশেষ সবজির দাম বেড়ে যায়। সে বিষয়ে আমরা আজকে তদারকি করবো। এছাড়া মুদি সামগ্রী ও মুরগির নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে কিনা সেটি তদারকি করবো।’
এর আগে, গতকাল বৃহস্পতিবার করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে মুরগির দাম সমন্বয়ের জন্য ডাকে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফর। সেখানে ব্রয়লার মুরগির দাম পাইকারি পর্যায়ে কেজিতে ৩৫ টাকা থেকে ৪০ টাকা কমিয়ে ১৯০ টাকা থেকে ১৯৫ টাকায় বিক্রি করতে রাজি হয় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো।
জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান বলেন, ‘মুরগির দাম ২০০ টাকার বেশি হতে পারে না। অথচ সেখানে বৃহস্পতিবারও মুরগি বিক্রি হয়েছে ২৭০-২৮০ টাকা দরে। অস্বাভাবিক মূল্যের কারণে করপোরেট হাউসগুলোর সঙ্গে আমরা বৈঠক করেছি।’