advertisement
advertisement
advertisement.

সাক্ষাৎকার
রাহুলের বিরুদ্ধে রায় বিজেপির স্বার্থে

জাহাঙ্গীর সুর
২৫ মার্চ ২০২৩ ১২:০০ এএম | আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২৩ ০৮:৫৪ এএম
স্টেন উইডম্যাম, সুইডেনের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী
advertisement..

স্টেন উইডম্যাম সুইডেনের উপসালা ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক। দক্ষিণ এশিয়া ও ভারত নিয়ে তার গবেষণাগ্রন্থ আছে। যেমন : রুটলেজ থেকে প্রকাশিত ‘পলিটিক্যাল টলারেন্স ইন দ্য গ্লোবাল সাউথ Ñ ইমেজস অব ইন্ডিয়া, পাকিস্তান অ্যান্ড উগান্ডা’ (২০১৭) এবং অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে প্রকাশিত ‘কাশ্মীর ইন কম্পারেটিভ পারস্পেক্টিভ’ (২০০৬)। তার সঙ্গে ইমেইলে আলাপ করেছেন আমাদের সময়ের সহকারী সম্পাদক জাহাঙ্গীর সুর

আমাদের সময় : কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকে ২০১৯ সালে উদ্ভূত একটি মানহানির মামলার জন্য দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ওই সময় তিনি ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ‘চোর’ বলেছিলেন। আপনি কি মনে করেন এই মামলা ও রায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত?

advertisement

স্টেন উইডম্যাম : আমি পুরোপুরি নিশ্চিত যে, এই রায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। যারা রাহুল গান্ধীর মতো আগে বিবৃতি দিয়েছেন, তাদের প্রত্যেককে যদি দোষী সাব্যস্ত করে জেলে পাঠানো হতো, তা হলে ভারতের পুরো বিচারব্যবস্থা অনেক আগেই ভেঙে পড়ত। রাহুল [ক্ষমতাসীনদের] লক্ষ্যবস্তু। তাকে খুব কৌশল করেই এখন এভাবে আক্রমণ করা হলো।

আমাদের সময় : আপনি কেন এমনটা মনে করছেন?

স্টেন উইডম্যাম : ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এমনটা করছে তাদের বৃহত্তর কৌশলের অংশ হিসেবে। দলটির প্রধান কৌশলের লক্ষ্য হলো যারা যৎসামান্যও সরকারের বিরোধিতা করার ধারণা পোষণ করেন, তাদের মধ্যে ভয় জাগিয়ে তোলা। একটি রাজনৈতিক আমলাতন্ত্রকে ব্যবহার করে বিরোধী শিবিরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে নীরব করার মধ্য দিয়ে বিজেপি এই বার্তা সর্বস্তরে পৌঁছে দিতে চাচ্ছে যে, দেখো বিজেপি যা খুশি তা করতে পারে।

আমাদের সময় : বিশেষ করে রায়ের সময়টা কিছু একটার ইঙ্গিত দিচ্ছে : আর মাত্র এক বছর পর ভারতের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন। আপনি কি মনে করেন বর্তমান বিজেপি সরকার, বিশেষ করে মোদি রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বের মাধ্যমে কংগ্রেসের জাদুকরী নির্বাচনী প্রত্যাবর্তনের আশঙ্কা করছেন?

স্টেন উইডম্যাম : প্রধানমন্ত্রী মোদি ভালোই জানেন, কংগ্রেস দল মারাত্মকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। এই পতনমুখিতার পেছনে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কংগ্রেস নেতাদেরই নিজেদের দোষ আছে। তবে বিজেপি যে ভয় তৈরির লক্ষ্যে কার্যকরভাবে কৌশলগুলো

বাড়াচ্ছে, এও কিন্তু কংগ্রেসের কোমর ভাঙার আরেক কারণ। কংগ্রেস দলের পক্ষে জনসমর্থন পুনরুদ্ধার যে প্রায় অসম্ভব, মোদি তা জানেন। কংগ্রেসের জাদুকরী প্রত্যাবর্তন খুব অসম্ভব ব্যাপার বলে মনে হচ্ছে।

আমাদের সময় : তা হলে বিজেপি এমনটা করছে কেন?

স্টেন উইডম্যাম : বিজেপি ও এর সহযোগী দল ও সংগঠনগুলোর জন্য এটাই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে : তারা দায়িত্বে আছে এবং ভিন্নমতকে কিছুতেই সহ্য করে না, তারা তা স্পষ্ট করে জানান দিতে চায়। তাদের আধিপত্যের অবস্থান অক্ষুণ্ন রাখতে হবে, কারণ তারা ভয় পায় : মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা যে কোনো বিরোধী দল যে কোনো সময় নগণ্য পর্যায় থেকেও ক্ষমতার প্রকৃত প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে পারে।

আমাদের সময় : গণতন্ত্রের পণ্ডিত হিসেবে আপনি কি আশঙ্কা করছেন যে, ভারতীয় গণতন্ত্র ধীরে ধীরে মারা যাচ্ছে?

স্টেন উইডম্যাম : আমি গভীরভাবে চিন্তিত। স্বৈরাচারীকরণের প্রবণতা সারা বিশে^র জন্যই খারাপ। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার জন্য তো বটেই। আমার অনেক সহকর্মী যেমন ‘অটোক্রেটাইজেশন ইন সাউথ এশিয়া’ গ্রন্থে বিষয়টি তুলে ধরেছেন। নতুন শীতল যুদ্ধ সব কিছুকে আরও খারাপ করে তুলছে। আর ভারত আগ্রাসী প্রতিবেশীদের দ্বারা পরিবেষ্টিত। এটি সত্যিই একটি অন্ধকার সময়। আমার মনে হচ্ছে, সব কিছু ঠিক হয়ে যাওয়ার আগে সম্ভবত আরও খারাপ হতে যাচ্ছে।

আমাদের সময় : মূল্যবান সময় ও অন্তর্দৃষ্টিমূলক অভিমত ভাগ করে নেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

স্টেন উইডম্যাম : ভালো থাকবেন। আপনাকেও ধন্যবাদ।