স্ব-উন্নয়নে মনোযোগী হলে ভবিষ্যতে ব্যক্তি ও কর্মজীবনে ইতিবাচক ফল আসে। অনেকে দ্রুত সময়ে ক্যারিয়ারে উন্নতি ঘটান। কারণ বর্তমান সময়ে প্রতিযোগিতা দিন দিন বেড়েই চলছে। তাই সফল হওয়ার জন্য প্রয়োজন যথাযথ উদ্যোগ ও সঠিক পরিকল্পনা। সেসব তথ্য বিস্তারিতভাবে তুলে ধরছেন- শাহিন আলম শাওন
নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রয়োজন ব্যক্তিগত উন্নয়ন
বড় হয়ে কী হতে চাও? এই প্রশ্নটার সম্মুখীন হয়েছেন কমবেশি সবাই। শৈশব থেকেই আমাদের ক্যারিয়ার গড়ার যে স্বপ্ন তা লালন-পালন করতে হয়। কিন্তু উন্নতির পথে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রয়োজন ব্যক্তিগত উন্নয়ন। সময়কে কাজে লাগাতে পারলে পেশাগত দিক দিয়ে আপনি অনেকের চেয়ে এগিয়ে থাকবেন। ডিজিটাল মার্কেটিং, এডভান্স ইংলিশ, যোগাযোগের মতো প্রয়োজনীয় কোর্স আপনাকে পেশাগত জীবনে অনেকের থেকে এগিয়ে রাখবে।
অন্তর্দৃষ্টির বিকাশ ঘটানো
কোনো কিছু শেখার জন্য নিয়মিত পড়া অন্যতম কার্যকরী পন্থা। কারণ কর্মজীবনে নিজেকে এগিয়ে রাখতে নিয়মিত পড়ার ফলে আপনি যে কৌশলগত জ্ঞান সম্পর্কে অবহিত হবেন তা আপনাকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে। পেশাসংশ্লিষ্ট বইয়ের পাশাপাশি অন্যান্য বিষয়ভিত্তিক বই পড়া যা ব্যক্তির অন্তর্দৃষ্টির বিকাশ ঘটায়। বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য-ইতিহাস, বিখ্যাত ব্যক্তিদের রচিত প্রবন্ধ পড়া। চেষ্টা করতে হবে প্রতিদিন পড়ার জন্য সময় বের করা এবং সেটিকে অভ্যাসে পরিণত করা।
প্রশিক্ষণ গ্রহণ
স্বীয় চেষ্টায় নতুন কোনো দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি প্রশিক্ষণ বা কোনো ক্লাসে যোগদান অভিজ্ঞতার কাঠামো যোগ করে। পাঠ্যক্রমবহির্ভূত পাঠ বা কোম্পানি-স্পন্সর প্রশিক্ষণ সেশনের জন্য সাইন আপ করলে একজন বিশেষজ্ঞের সাহায্যে পূর্ণ দক্ষতা অর্জন সম্ভব। দেখা যাবে আপনার এই অর্জিত দক্ষতা পরবর্তী কর্মজীবনে কোনো এক সময় কাজে লেগেও যেতে পারে।
লক্ষ্য নির্ধারণ
একটি সাধারণ দিনে কয়েকটি ছোট লক্ষ্য থাকতে পারে। যেমন সময়মতো কর্মস্থলে পৌঁছানো, একটি প্রকল্প শেষ করা, পরিবারের সঙ্গে রাতের খাবার খাওয়া, একসঙ্গে আড্ডা দেওয়া, ইউটিলিটি বিল পরিশোধ করা পর্যন্ত সবকিছু এর অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। অপরদিকে দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যও থাকতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, আগামী ৫ বছর পর নিজেকে কোথায় দেখতে চান সেটি নির্ধারণ করুন এবং লক্ষ্য পূরণের উদ্দেশ্যে করণীয় কাজগুলো নির্ধারণ করে মাঠে নেমে পড়ুন।
পরামর্শদাতা খুঁজুন
চমৎকার নেতৃত্বের দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন পেশাদার হতে পারে আপনার মেন্টর। এমন একজন পরামর্শদাতাকে নির্বাচন করা প্রয়োজন, যিনি লক্ষ্য সম্পাদন করার জন্য প্রয়োজনীয় অন্তর্দৃষ্টি দিতে পারেন। যখন পথ দেখানোর জন্য একজন গাইড থাকবে, তখন স্ব-উন্নতির জন্য প্রচেষ্টা করা আরও ফলপ্রসূ হবে। পেশাদার অনুপ্রেরণা বা বিশেষজ্ঞের সহায়তা জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে সক্ষম।
চাহিদা ও দক্ষতার সমন্বয়
পেশাজীবনে নিজেকে উন্নতির দিকে মনোনিবেশ করতে হলে প্রয়োজন দক্ষতা। যা আপনাকে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে সহায়তা করবে। যে পেশায় কর্মরত, তার ওপর আরও দক্ষতা অর্জন করতে সমসাময়িক প্রকাশনা পড়া, ট্রেনিং গ্রহণ, দক্ষতা অর্জন অনেকের চেয়ে এগিয়ে রাখবে।
যোগাযোগ দক্ষতা বা সফট স্কিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। নিজের সম্পর্কে বলা বা নিজেকে উপস্থাপন করাটা শিখতে হবে। এ ব্যাপারে প্রথমেই আসবে নিজের ওপর আস্থা অর্জনের বিষয়টি। তাই আত্মবিশ্বাস খুব জরুরি।
মানসিকতায় পরিবর্তন আনা
নিজের চিন্তার ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকা প্রয়োজন। মানসিকতায় পরিবর্তন এলে, আপনি আগে যা ভেবেছিলেন তার চেয়ে বর্তমান পরিস্থিতির ওপর আপনার আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ থাকবে। আপনি কী নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন এবং কী নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না তা জানা থাকলে জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সহজ হবে।
আপনি একটি নতুন চাকরি শুরু করবেন, তখন আপনার কাজ, কাজের মূল্যায়ন এবং এ কাজের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে আপনার সহকর্মী কিংবা ঊর্ধ্বতন কারও সঙ্গে আলাপ করে নিতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনার ভেতরের চিন্তা-চেতনার পরিবর্তন হতেও পারে।
নিজেকে উৎসাহিত করুন
যে কোনো পেশার জন্য সৃজনশীলতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে সৃজনশীল কাজে যুক্ত করতে হবে। কর্মজীবনে সৃজনশীলতার মাধ্যমে নিজেকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার অনেক সুযোগ থাকে। সৃজনীশক্তি বিকাশের মাধ্যমে আগামীর জন্য প্রস্তুত হতে হবে। প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে সৃজনশীল অনেক কাজের সুযোগ তৈরি হয়েছে এখন। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে সব বিষয়ে আগ্রহ নিয়ে জানতে হবে। এর পাশাপাশি নিজেকে উৎসাহিত করতে হবে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে।
সময়সূচিতে পরিবর্তন নিয়ে আসা
সময়সূচি তৈরি করে আপনি কীভাবে আপনার সময় ব্যবহার করবেন সে সম্পর্কে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি রাখতে পারেন। আপনি যেভাবে আপনার দিন কাটাচ্ছেন তা পুনর্বিবেচনা করে এবং সবচেয়ে মূল্যবান সময়গুলো চিহ্নিত করতে পারেন। এতে করে সময়কে সর্বাধিক ফলপ্রসূ করার জন্য নতুন উপায়গুলো শনাক্ত করতে সহায়তা হবে। যেমনÑ কিছু শেখা বা বাড়তি দক্ষতা উন্নতি করার জন্য সময় আলাদা করা, সপ্তাহজুড়ে কখন কী করবেন তার একটা রুটিন তৈরি করা। এছাড়া পরিবার ও কর্মজীবনের পাশাপাশি নিজের জন্য একটু সময় বের করা জরুরি। খেলাধুলা, কারুশিল্প কিংবা নতুন ভাষা শেখায় কিছুটা সময় বের করে নিজেকে দিতে হবে। নিজেকে দেওয়া সময়টুকু কীভাবে কাটাবেন তা ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। নতুন কিছু শেখা বা নিজেকে সময় দেওয়া আত্মউন্নয়নে একটি বিশেষ দিক।
নেতৃত্বের গুণাবলি আয়ত্ত করতে হবে
আমাদের সামনে অনেক সুযোগ থাকে। আমরা খেয়াল করি না। আমাদের তরুণদের কিন্তু এই সুযোগ আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়েই ইংরেজি ভাষা চর্চা ও শিক্ষার মাধ্যমে নিজেকে সামনের জন্য তৈরি করতে হবে। এখন চাকরি শুধু দেশে বসে করতে হচ্ছেÑ এমন নয়। বরং দেশে বসেই অনেক তরুণ বিদেশি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। নিজের প্রযুক্তিগত দক্ষতা, নেটওয়ার্কিং দক্ষতা বিকাশের মাধ্যমে পৃথিবীর জন্য তাদের সামাজিক সমস্যা সমাধানে দক্ষ হতে হবে। শুধু নিজের কথাই ভাবলে চলবে না। নিজের কাজ ও আগ্রহের মাধ্যমে সামাজিক দায়িত্ব পালন করতে হবে। সামাজিকভাবে একজন ইতিবাচক নাগরিক হিসেবে নিজেকে তৈরি করতে হবে। যে প্রতিষ্ঠানেই চাকরি করেন না কেন, নিজের দায়িত্ব বুঝে কাজ করতে হবে। নেতৃত্বের গুণাবলি আয়ত্ত করতে হবে। দেশ ও সমাজের যেসব সংকট সামনে আসবে, সেখানে নিজের অবস্থান থেকে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে ভূমিকা রাখতে হবে। আগামীর পৃথিবীর জন্য নিজেকে তৈরি করতে হবে।