advertisement
advertisement
advertisement.

ডিএনসিসির নতুন ১৮ ওয়ার্ড
নাগরিক সেবা-উন্নয়ন নেই, আছে করের বোঝা

শাহজাহান মোল্লা
২৫ মার্চ ২০২৩ ১২:০০ এএম | আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২৩ ১২:১৮ পিএম
ডিএনসিসি ভবন। ফাইল ছবি
advertisement..

কাগজে-কলমে সিটি করপোরেশনভুক্ত এলাকা। তবে বাস্তবে করপোরেশনের এক ফোঁটা সুবিধাও পাননি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেনের অন্তর্ভুক্ত হওয়া নতুন ওয়ার্ডগুলোর বাসিন্দারা। সিটি করপোরেশন এলাকার সেবা হিসেবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, সড়ক উন্নয়ন, সড়কবাতি ও জলাবদ্ধতা নিরসন করার কথা সংস্থারই। কিন্তু সিটি করপোরেশনভুক্ত হলেও নতুন ওয়ার্ডগুলোতে এখনো এসবের কোনো সেবাই পৌঁছেনি। বছরের পর আশ্বস দিলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। উল্টো পৌরকরের বোঝা বহন করা এবং ইউনিয়ন পরিষদের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এলাকাবাসী।

নাগরিক সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ২০১৬ সালের ২৮ জুন রাজধানীর পাশ্বর্তী হরিরামপুর, উত্তরখান, দক্ষিণখান, বাড্ডা, সাতারকুল ও ভাটারা ইউনিয়ন পরিষদ বাতিল করে ১১৪ বর্গকিলোমিটার এলাকা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) অন্তর্ভুক্ত করে ১৮টি নতুন ওয়ার্ড গঠন করা হয়।

advertisement

সিটি করপোরেশনভুক্ত হওয়ার পর থেকেই মেগা প্রকল্পের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন জনপ্রতিনিধিরা। তবে এখন পর্যন্ত বড় কোনো পরিবর্তন আনতে পারেনি ডিএনসিসি। এর নতুন ওয়ার্ডগুলোর সার্বিক উন্নয়নে ৪ হাজার ২৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) অনুমোদনও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বৈশি^ক সংকটের কারণে এখনো পর্যন্ত পুরো অর্থ ছাড় না হওয়ায় বড় কাজে হাত দিতে পারছে না নগর কর্তৃপক্ষ। যতটুকু অর্থ সরকার ছাড় করেছে, তার সঙ্গে ডিএনসিসির নিজস্ব তহবিল থেকে যুক্ত করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কিছু কাজ শুরু করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।

তবে সেই কাজের সুফল এখনো অধরা নগরবাসীর কাছে। দীর্ঘ দিনের জলজট ও যানজটমুক্ত হতে আরও সময় চায় সিটি করপোরেশন। মেগা প্রকল্পের আওতায় নতুন ওয়ার্ডগুলোকে আধুনিক স্মার্ট সিটিতে রূপান্তরের চেষ্টা করছেন মেয়র। অর্থ না থাকায় সেই কাজে গতি নেই। তবে সরকারি অর্থের দিকে না তাকিয়ে নিজস্ব ফান্ড থেকে দ্রুততার সঙ্গে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।

ডিএনসিসির তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের জুলাই মাসে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) নতুন ১৮টি ওয়ার্ডে প্রথম পর্যায়ের উন্নয়ন কাজের জন্য ৪ হাজার ২৫ কোটি টাকা অনুমোদন করে। এরপর ২০২২ সালের ৬ মার্চ প্রকল্পটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকে অর্থাভাবে এখনো মূল কাজ শুরুই করতে পারেনি ডিএনসিসি। ৪ হাজার ২৫ কোটি টাকার মধ্যে সরকার ছাড় করেছে মাত্র ৮৯ কোটি টাকা।

বর্ধিত সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ডগুলোর উন্নয়ন প্রসঙ্গে মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, প্রকল্প পাস হয়েছে; কিন্তু পুরো অর্থ এখনো ছাড় হয়নি। তাই বলে আমরা বসে নেই। যতটুকু পেয়েছি তার সঙ্গে ডিএনসিসির নিজস্ব তহবিল থেকে দিয়ে আগে নগরবাসীকে ভোগান্তি থেকে রেহাই দিতে চাই। এজন্য গত সপ্তাহে একটি মিটিং করেছি। সংশ্লিষ্ট বিভাগকে বলেছি, অতিদ্রুত নতুন ওয়ার্ডগুলোর রাস্তা সংস্কার ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে হবে। যেখানে যেখানে লাইট নেই সেখানে এলইডি বাতির ব্যবস্থা করতে হবে। এই বর্ষায় যেন কোথাও পানি না জমে সেজন্য দ্রুততার সঙ্গে কাজ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব আমাদের সময়কে বলেন, সীমানা নির্ধারণ হচ্ছে, বিভিন্ন কাজ হচ্ছে। কিন্তু দরকার কার্যকর প্রকল্প ও বিনিয়োগের মাধ্যমে এলাকাগুলোকে সিটি করপোরেশনের উপযোগী করা। সেটাই তো করা যাচ্ছে না। সেটি করে ট্যাক্স নেওয়া হচ্ছে। সিটি করপোরেশন পৌরকর নিয়ে নাগরিক সেবা না দিলে এক ধরনের প্রতারণার শামিল হয়। সে জন্য হয় পৌরকরের ব্যাপারে নতুন সিদ্ধান্ত নিতে হবে বা শিথিল করতে হবে অথবা কোনো না কোনো প্রণোদনা দিতে হবে। অথবা দ্রততম সময়ে কী করে অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা যায় সেটিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

ডিএনসিসি সূত্রে জানা গেছে রাস্তা, ড্রেনেজ, খাল পরিষ্কার করা, লাইটিংসহ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যেসব কাজ রয়েছে সেগুলো করার জন্য সরকারি অর্থের পাশাপাশি ডিএনসিসির নিজস্ব তহবিল থেকে বরাদ্দ দিয়ে প্রায় ৬৫০ কোটি টাকার কাজ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে কসাইবাড়ী ও আজমপুর প্রধান সড়কের কাজ আগে করা হবে। এরই মধ্যে কাজ শুরুও হয়ে গেছে।

প্রকল্পের আওতায় ৬৯ দশমিক ৪৮ একর ভূমি অধিগ্রহণ করবে ডিএনসিসি। এ ছাড়া নতুন ১৮টি ওয়ার্ডে প্রায় ১৮৩ কিলোমিটার নতুন রাস্তা নির্মাণ ও উন্নয়ন করা হবে। তা ছাড়া ২৩৪ কিলোমিটার স্টর্ম ড্রেন ও ইউটিলিটি সেবা নিশ্চিত করা হবে। জলাবদ্ধতা নিরসনে ২৯ কিলোমিটার খাল উন্নয়নের পরিকল্পনা রয়েছে। তা ছাড়া সিটি করপোরেশনের অন্য এলাকার মতোই এলইডির আলোয় আলোকিত হবে ওয়ার্ডগুলো। এজন্য প্রয়োজন হবে ১২ হাজার এলইডি বাতি। শুধু তাই নয়, আধুনিক সব সুবিধা নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত খেলার মাঠ ও পার্কের ব্যবস্থা রাখা হবে। পুরো এলাকায় ২৫ শতাংশ সবুজায়ন করার কথা রয়েছে।

সিটি করপোরেশনভুক্ত ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা রনি আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমরা সিটি করপোরেশনের আওতায় এসেছি কাগজে-কলমে। বাস্তবে এখনো ইউনিয়নের চাইতে খারাপ অবস্থা। আগে তো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা কিছু কাজ করতেন। এখন যেহেতু সিটি করপোরেশন, তাই তারাও কোনো কাজ করতে পারেন না। অথচ আমাদের ২০১৬ সাল থেকে সিটি করপোরেশন নির্ধারিত পৌরকর দিতে হচ্ছে।

বর্ধিত সিটি করপোরেশনের ৪৯ ওয়ার্ডের আশকোনা মেডিক্যাল রোড, গাওয়াইর, সিটি কমপ্লেক্স, তালতলা পুরো এলাকার রাস্তার বেহাল দশা। মাঝারি মাত্রার বৃষ্টি হলেই আশকোনা বাজার থেকে কমরউদ্দিন টাওয়ার পর্যন্ত কোমর সমান পানি জমে যায়। ফলে এলাকার মসজিদ, বাজার ও বাসাবাড়ি পানিতে ডুবে থাকে। পানি নেমে গেলে হাঁটু সমান কাদা জমে থাকে। ফলে এলাকায় চলাচল করা দুষ্কর হয়ে যায়। শুধু রাস্তার দুরবস্থা নয়, এখানে নেই কোনো সড়ক বাতিও। বর্জ্য ব্যবস্থারও কোনো নজির নেই। অথচ এলাকাবাসীকে ১২ শতাংশ হারে পৌরকর দিতে হচ্ছে। এ পরিস্থিতি শুধু ৪৯ নম্বর ওয়ার্ড নয়, হরিরামপুর, উত্তরখান, দক্ষিণখান, বাড্ডা, সাতারকুল ও ভাটারা এলাকায়ও।

নাগরিক সেবা না থাকলেও ২০১৬ সাল থেকে হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণ করার বিষয়টি আইনগতভাবে কোনো বাধা নেই। আইনে উল্লেখ আছে, যে দিন থেকে সিটি করপোরেশন হিসেবে গেজেটভুক্ত হবে, সেদিন থেকেই সিটি করপোরেশন নির্ধারিত ট্যাক্স দিতে হবে। তবে সিটি করপোরেশনকেও সঠিক সেবাটি দিতে হবে। তবে এখানে সেবা মূল্য নির্ধারণ করা হলেও সেবার ছোঁয়া লাগেনি।