advertisement
advertisement
advertisement.

বাড়ছে মাম্পসের প্রকোপ, কী করবেন?

ডা. কাকলী হালদার
২৫ মার্চ ২০২৩ ০৯:২১ এএম | আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২৩ ০৯:৪৪ এএম
ডা. কাকলী হালদার
advertisement..

প্যারামিক্সো ভাইরাস শ্রেণির অন্তর্গত মাম্পস ভাইরাসের সংক্রমণে মাম্পস রোগ হয়। প্যারোটিড নামক কানের নিচের লালাগ্রন্থিতে মাম্পস ভাইরাস সংক্রমণের ১৮-২১ দিনের মধ্যে সাধারণত উপসর্গ দেখা যায়। যে কোনো বয়সে, যে কারও মাম্পস হতে পারে।

তবে সাধারণত ৫-৯ বছরের বাচ্চাদের মধ্যে শীত ও বসন্তকালে এ রোগের সংক্রমণের হার বেশি হয়ে থাকে। শুধুমাত্র মানুষের শরীরেই মাম্পস রোগ হয়।

advertisement

কীভাবে ছড়ায়?

মাম্পস একটি ছোঁয়াচে রোগ, যা মূলত আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে হাঁচি, কাশি, সর্দি, মুখের লালা, প্রস্রাব ইত্যাদির মাধ্যমে ছড়ায়। এ ছাড়া আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহার করা কাপড় থেকে, খাবার ও পানীয় ভাগাভাগি করার মাধ্যমেও ছড়াতে পারে। মাম্পস ভাইরাস বাতাসে কিছুক্ষণ ভেসে থাকতে পারে বা কোনো বস্তুর সঙ্গে লেগে থেকেও বেঁচে থাকতে পারে এবং সেখান থেকে অন্যের সংস্পর্শে আসতে পারে।

আক্রান্ত ব্যক্তি সাধারণত উপসর্গ শুরু হওয়ার ৭ দিন আগে থেকে এবং ৭ দিন পর পর্যন্ত ভাইরাসটি ছড়াতে পারে। ভাইরাস শ্বাসনালী সংক্রমণের পরে রক্তে যায় এবং সেখান থেকে প্যারোটিড গ্ল্যান্ড, টেস্টিস, ওভারি, প্যানক্রিয়াস এমনকি মেনিনজেসকেও আক্রান্ত করতে পারে।

উপসর্গ:

আক্রান্ত ব্যক্তি বিশেষ করে বড়দের প্রায় ৩০-৪০ শতাংশের কোনো উপসর্গ থাকে না বা খুব মৃদু উপসর্গ যেমন-জ্বর, গায়ে ব্যথা এবং খাবারে অরুচিজনিত সমস্যা হয়ে থাকে।

৬০%-৭০% সংক্রমণের ক্ষেত্রে জ্বর, মাথাব্যথা, গায়ে ব্যথা, দুর্বলতা, বমি, সর্দি-কাশির পরে কানের নিকটবর্তি প্যারোটিডগ্রন্থি ফুলে গিয়ে বেশ ব্যথা অনুভূত হয়, বিশেষ করে কিছু চিবানোর সময়। এটা মুখের একপাশে হতে পারে, তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে দুপাশই আক্রান্ত হয়ে ফুলে যায়।

রোগের লক্ষণ দেখা দেওয়ার পরে ১০-১৪ দিনের মধ্যে রোগী সাধারণত ভালো হয়ে যায়।

জটিলতা:

# ছেলেদের অর্কাইটিস বা অণ্ডকোষ ফুলে ব্যথা হতে পারে। তবে বয়ঃসন্ধি পার হওয়া পুরুষদের মাম্প্‌স হলে অর্কাইটিস হওয়ার সম্ভাবনা ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ। বয়ঃসন্ধির পরে অর্কাইটিস (দুইপাশে) হলে ভবিষ্যতে সন্তান জন্মদানের ক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে। তবে একপাশে অর্কাইটিসে ব্যথা হলেও এ ধরনের সমস্যা হয় না।

# মৃদু টাইপ মেনিনজাইটিস হতে পারে। তবে এনকেফালাইটিস বা মস্তিষ্কের প্রদাহ খুব মারাত্মক ক্ষতিকর হয়ে থাকে।

# এ ছাড়া প্যানক্রিয়াসের ইনফেকশন হতে পারে। ফলে ইনসুলিন-নির্ভর ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।

# ভবিষ্যতে কানে না শোনার মতো সমস্যাও হতে পারে।

চিকিৎসা:

# কোনো সুনির্দিষ্ট মাম্পস ভাইরাসবিরোধী ওষুধ নাই। ফোলা স্থানে হালকা গরম সেঁক খুব কার্যকারী। দিনে ৫-৭ বার কুসুম গরম পানিতে লবণ দিয়ে গার্গল করলে, পুষ্টিকর নরম খাবার খেলে, বেশি বেশি তরল ও ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খেলে দ্রত উপশম সম্ভব।

# অণ্ডকোষ ফুলে গেলে বরফ নরম সুতি কাপড়ে পেঁচিয়ে দিনে বেশ কয়েকবার ব্যবহার করতে বলা হয়।

# ব্যথা, জ্বর বা অন্যান্য উপসর্গের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ ব্যবহার করতে হবে।

প্রতিরোধ:

# ছোঁয়াচে বলে এ রোগ হলে আক্রান্ত ব্যক্তির কাছ থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকতে হবে। রোগীকে আলো-বাতাসপূর্ণ নির্দিষ্ট একটা ঘরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নভাবে রাখতে হবে এবং নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করতে হবে। সাতদিন স্কুল বা অফিস যাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। হাঁচি- কাশির সময় নাক মুখ ঢেকে রাখতে হবে।

# টিকা হলো এ রোগের উত্তম প্রতিষেধক। শিশুর ১২ থেকে ১৮ মাস বয়সে এক ডোজ মাম্পস ভ্যাক্সিন এবং পরবর্তী সময়ে ৪ থেকে ৬ বছর বয়সে ভ্যাক্সিনের আরেক ডোজ বুস্টার হিসেবে নিতে হবে।

# ভ্যাক্সিন খুব কার্যকরী (৯৫%)। একবার আক্রান্ত হলে বা ভ্যাক্সিন নিলে শরীরে যে এন্টিবডি তৈরি হয় তা সাধারণত সারাজীবন মাম্পস ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ করে থাকে। তবে কম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন এবং গর্ভবতীদের এই টিকা দেয়া যাবে না।

ডা. কাকলী হালদার: সহকারী অধ্যাপক, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ।