বিশ্বজুড়ে এখন পবিত্র রমজান মাস চলছে। এটি হচ্ছে মুসলিমবাসীর জন্য অতিরিক্ত সওয়াব লাভের সময়। এ মাসের গুরুত্ব ও ফজিলত অন্যান্য সময়ের থেকে অনেক বেশি। রমজানে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা সৃষ্টিকর্তার ইবাদতে একটু বেশিই ব্যস্ত থাকেন। এই মাস সম্পর্কে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘৩ ব্যক্তির দোয়া কখনো ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। যখন রোজাদার ব্যক্তি ইফতার করে, ন্যায়পরায়ণ শাসক ও নির্যাতিত ব্যক্তির দোয়া।’ (মুসনাদে আহমাদ, তিরমিজি)
রমজানে প্রায় সব মুসলমানই রোজা রাখেন। এ সময় এমন কিছু কাজ আছে যা ভুলে করলে কিংবা অনিচ্ছাকৃতভাবে হয়ে গেলে তার জন্য রোজা ভাঙে না। যদিও সে কাজগুলো আমাদের কাছে রোজা ভঙ্গের কারণ হিসেবে মনে হয়। অথচ সেসব কাজে রোজার কোনো ক্ষতিই হয় না।
চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক, কোন কোন কাজের জন্য রোজা ভাঙে না-
রক্তদান করলে রোজার ক্ষতি নেই; তবে গ্রহণ করলে রোজা ভেঙে যাবে। রোজা রেখে রক্তদান করার ক্ষেত্রে কঠোরভাবে নিষেধ নেই। রক্তদান নিঃসন্দেহে ভালো কাজ। রক্ত দেওয়ার ফলে কারও জীবন বেঁচে যেতে পারে। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি কোনো মানুষের জীবন রক্ষা করল, সে যেন পুরো মানবজাতিকে রক্ষা করল।
রোজা ভঙ্গের কারণ হচ্ছে স্বাভাবিক প্রবেশ পথ দিয়ে শরীরে কিছু প্রবেশ করানো। শরীর থেকে কিছু বের হলে রোজা ভঙ্গ হয় না। তাই রক্ত দিলে রোজা ভাঙবে না।
আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর সাহাবি ইকরিমা (রা.) বলেন, নবী কারিম (সা.) হজের জন্য ইহরাম বাঁধা অবস্থায় শরীর থেকে শিঙ্গার মাধ্যমে রক্ত বের করেছেন এবং রোজা অবস্থায়ও শরীর থেকে শিঙ্গার মাধ্যমে রক্ত বের করেছেন। (বুখারি, হাদিস : ১৯৩৮; মুসলিম, হাদিস : ১১০৬; আবু দাউদ, হাদিস : ২৩৭২)।
তাই রোজা রেখে অসুখের জন্য টেস্ট বা কোনো রোগীকে দেওয়ার জন্য রক্ত দিলে, রোজার ক্ষতি হবে না। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে— কেউ যদি শারীরিকভাবে এমন দুর্বল হয় যে, রক্ত দিলে তিনি রোজা রাখার শক্তি হারিয়ে ফেলবে, তাহলে তার জন্য রক্ত দেওয়া মাকরুহ। (আহসানুল ফাতাওয়া : ০৪/৪৩৫)।
এ ছাড়া আরও যেসব কাজে রোজা ভাঙে না-
১. অনিচ্ছাকৃত বা ভুল করে গলার ভেতরে ধুলাবালি, মশা-মাছি অথবা ধোঁয়া প্রবেশ করলে রোজা ভাঙে না।
২. অনিচ্ছাকৃত বমি অথবা ইচ্ছাকৃত অল্প বমি করা। তবে মুখ ভর্তি নয়।
৩. বমি আসার পর আপনা-আপনি (নিজে নিজে) ফিরে যাওয়া।
৪. অনিচ্ছাকৃতভাবে কানের ভেতর পানি প্রবেশ করা।
৫. ইনজেকশন নেওয়া।
৬. ভুলক্রমে পানাহার বা ভুল করে কিছু খেয়ে ফেলা।
৭. চোখে ওষুধ নেওয়া বা সুরমা ব্যবহার করা।
৮. কোনো কিছুর ঘ্রাণ নেওয়া কিংবা সুগন্ধি ব্যবহার করা।
৯. নিজ মুখের থুথু, কফ ইত্যাদি গলাধঃকরণ করা।
১০.শরীর ও মাথায় তেল ব্যবহার করা।
১১. ঠাণ্ডার জন্য গোসল করা।
১২. মিসওয়াক করা। তবে মিসওয়াক করার ফলে দাঁত থেকে বের হওয়া রক্ত যেন গলার ভেতর না যায়।
১৩. চোখের পানি মুখের ভেতর চলে গেলে আর সেটা গিলে ফেললে। যদি দুয়েক ফোঁটা হয় তবে রোজা ভাঙবে না। আর যদি বেশি হয়, যার ফলে সেটার লবণাক্ততা মুখে অনুভূত হয়। তাহলে রোজা ভেঙে যাবে। ঘামের ক্ষেত্রেও একই বিধান।