সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি বলেছেন, ২০১৬ সালে পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে ঘুষ দেয়া সংক্রান্ত এক মামলার তদন্তে তিনি গ্রেপ্তার হতে পারেন।
এদিকে ড্যানিয়েলসও দাবি করছেন, ট্রাম্পের সঙ্গে তার পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক ছিল এবং ২০১৬ সালের নির্বাচনের আগে একজন কৌঁসুলির মারফত ট্রাম্প তার মুখ বন্ধ রাখার জন্য ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার ঘুষ দিয়েছিলেন।
পরে অবশ্য বিভিন্ন অভিযোগে মাইকেল কোহেন নামের ওই কৌঁসুলির সাজা হয়েছে। তবে ট্রাম্প এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কীভাবে শুরু হয়েছিল এই পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক?
২০০৬ সালের জুলাই মাস, তখন হোয়াইট হাউস ছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পের চোখে স্বপ্ন।
মিসেস ড্যানিয়েলস বলেছেন, তিনি সেই মাসে ক্যালিফোর্নিয়া এবং নেভাদার মধ্যবর্তী একটি রিসর্ট এলাকা লেক তাহোতে একটি দাতব্য গলফ টুর্নামেন্টে তার সঙ্গে দেখা করেছিলেন।
২০১১ সালের একটি সাক্ষাৎকারে ইন টাচ উইকলি, যা জানুয়ারিতে সম্পূর্ণ প্রকাশিত হয়েছিল, এতে তিনি বলেছেন- ট্রাম্প তাকে ডিনারে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন এবং তিনি তার হোটেল রুমে তার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন।
ট্রাম্প সোফায় বসে টেলিভিশন বা অন্য কিছু দেখছিলেন, তখন তিনি পায়জামা প্যান্ট পরেছিলেন।
ড্যানিয়েলস অভিযোগ করেছেন, এই দম্পতি হোটেলের ঘরে শারীরিক মিলন করেছিলেন, যা ট্রাম্পের আইনজীবী বলেছিলেন যে তার ক্লায়েন্ট ‘প্রবলভাবে অস্বীকার করেছেন।’
যদি মিসেস ড্যানিয়েলসের অভিযোগ সত্য হয় তবে ট্রাম্পের কনিষ্ঠ সন্তান জন্মের মাত্র চার মাস পরে এটি ঘটেছিল।
ট্রাম্প ২০০৫ সালে মেলানিয়া ট্রাম্পকে বিয়ে করেন।
ড্যানিয়েলস দাবি করেন যে, তিনি এবং ট্রাম্প পরবর্তী বছর ধরে যোগাযোগে রেখে ছিলেন এবং ২০১০ সালে শেষ কথা বলেছিলেন।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে স্টর্মি ড্যানিয়েলসের মধ্যে শারীরিক সম্পর্কের অভিযোগ প্রথম শোনা যায় ২০১৮ সালে।
ট্রামের সাবেক কৌঁসুলি মাইকেল কোহেন জানান, তিনি নিজের কাছ থেকে ড্যানিয়েলকে অর্থ দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই অর্থ ট্রাম্প তাকে ফেরত দেননি। পরে ২০১৮ সালে তিনি বলেছিলেন, ট্রাম্প তাকে ওই অর্থ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং নির্বাচনের ঠিক আগে পাওনা মিটিয়ে দিয়েছিলেন। সে সময় ট্রাম্পও স্বীকার করেছিলেন ড্যানিয়েলসের পাওনা মেটানো হয়েছে।
কোহেনের পাওনা মেটানোর রেকর্ডে বলা হয়েছে, ওই পেমেন্টটি ছিল তার মামলার ফি। এই তথ্য যদি জাল হয় তাহলে সেটি নিউইয়র্কের আদালতে একটি বেআইনি কাজ হিসেবে বিবেচিত হবে।
পরকীয়া সম্পর্কের অভিযোগ এবং নির্বাচনি আইন ভঙ্গের অভিযোগ ট্রাম্প অস্বীকার করেছেন। এ প্রসঙ্গে ট্রাম্পকে প্রশ্ন করা হয়- মাইকেল কোহেন কি আপনার নোংরা কাজ করে দিয়েছেন?
এদিকে মুখ বন্ধ রাখার জন্য ঘুষ দিয়ে নির্বাচনে অর্থায়নের আইন ভঙ্গসহ ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ কোহেন স্বীকার করে নিয়েছেন।ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হলে সেটি হবে কোন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে প্রথম কোনো ফৌজদারি মামলা।
এদিকে, গত সপ্তাহে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছিলেন যে মঙ্গলবার তাকে গ্রেপ্তার করা হবে। কিন্তু এক সপ্তাহ পার হলেও তিনি পর্ন তারকাকে অর্থ দেওয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত পর্যন্ত হননি। যদিও আশঙ্কার পর তিন দিনে তিনি ১৫ লাখ ডলার তুলতে সক্ষম হয়েছেন।
ট্রাম্প আদৌ অভিযুক্ত হবেন কি না এবং অভিযুক্ত হলে গ্রেপ্তার এবং জেলে যাবেন কি না তা নিয়ে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। কারণ, রিপাবলিকান পার্টি ট্রাম্পের পক্ষে যেভাবে নেমেছে তাতে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে গ্রেপ্তার করাটা দুরুহ বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। গ্রেপ্তার হওয়ার আগেই ট্রাম্পের হুমকিতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে।
শীর্ষ ডেমোক্র্যাটরা আশঙ্কা করে বলেছেন, ট্রাম্পের এই বেপরোয়া আচরণ হয়তো কাউকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে পারে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ট্রাম্প কবে অভিযুক্ত হবেন তা নিয়ে সংশয় আছে। ম্যানহাটন আদালতে ফৌজদারি মামলার বিচারে এক বছর বা তার বেশি সময়ও লাগে। ফলে ট্রাম্পের বিচার হয়তো ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে, এমনকি পরেও না হতে পারে।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্প অভিযুক্ত হলেও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন। কারণ, অভিযুক্ত ব্যক্তি প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না এমন কোনো বিধিনিষেধ মার্কিন সংবিধানে নেই। তবে নিজের জন্য ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে ট্রাম্প বিধিনিষেধের মুখে পড়তে পারেন।
ট্রাম্প দোষী সাব্যস্ত হলে চার বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। নিউইয়র্কের ম্যানহাটন ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি আলভিন ব্র্যাগ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। এতে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন সিল করে দেওয়া হয়েছে। তবে এরই মধ্যে ব্র্যাগকে হত্যার হুমকি দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
ট্রাম্পকে অভিযুক্ত করার পর আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো হতে পারে। তিনি স্বেচ্ছায় আদালতে আত্মসমর্পণ না করলে বিচারক অথবা ফ্লোরিডার গভর্নর তাকে প্রত্যর্পণ করতে পারেন।
ফ্লোরিডার বর্তমান গভর্নর রন ডিস্যান্টিস ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী। তিনি হয়তো ট্রাম্পকে প্রত্যপর্ণ থেকে বিলম্ব ঘটাতে পারেন। তবে অভিযুক্ত হওয়াটা থামাতে পারবেন না।
ট্রাম্প অভিযুক্ত হলে ম্যানহাটন ডিস্ট্রিক্ট আদালতে তার ফিঙ্গার প্রিন্ট এবং মুখের ছবি দিতে হবে। তাকে হেফাজতে নেওয়ার আগে ডিএনএ পরীক্ষার নমুনাও দিতে হবে। এরই মধ্যে ট্রাম্পকে অনলাইনে আদালতে হাজির করতে তার আইনজীবীরা সমঝোতার চেষ্টা করছেন।
ট্রাম্পকে গ্রেপ্তার করা হলে ঐতিহ্যগতভাবে পার্প ওয়াক করবেন না। আবার তার হুমকির বিষয়টিও বিবেচনা করা হবে। কারণ, ইতোমধ্যে তিনি এই মামলাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত উল্লেখ করে সমর্থকদের রাস্তায় নেমে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
আবার ফোর্বস ম্যাগাজিন জানিয়েছে, ট্রাম্প অভিযুক্ত হলেও জেলে যাবেন না। কারণ নিউইয়র্কের বর্তমান জামিনের রীতি অনুযায়ী, অপকর্ম বিশেষ করে অসহিংস মামলার ক্ষেত্রে ব্যক্তিকে নিজস্ব জিম্মায় মুক্তি দেওয়া যাবে, যদি না তার পালানোর ঝুঁকি থাকে। সূত্র: বিবিসি