advertisement
advertisement
advertisement.

সাইবার অপরাধ : সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে

দিলীপ কুমার আগরওয়ালা
২৫ মে ২০২৩ ১২:০০ এএম | আপডেট: ২৪ মে ২০২৩ ১১:৪৬ পিএম
advertisement..

তথ্যপ্রযুক্তি আজ নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। দেশে-বিদেশে যোগাযোগ সহজ হয়ে গেছে। পাশাপাশি বহু তরুণ-তরুণীর আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে তারা বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। ই-কমার্সের সুবিধা ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে। দেশ তথ্যপ্রযুক্তিতে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। শহরের সীমা ছাড়িয়ে তথ্যপ্রযুক্তির সেবা প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে। মানুষ তার প্রভূত সুফলও পাচ্ছে। ঘরে বসেই ইন্টারনেট ব্যাংকিং সুবিধা পাচ্ছে। এত বিপুল সুবিধার পাশাপাশি কিছু সমস্যাও তৈরি হচ্ছে। ক্রমেই সাইবার ক্রাইম বা তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ বেড়ে চলেছে। সাধারণ মানুষ নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছে।

সাইবার স্পেসে ভুক্তভোগীদের দেওয়া মতামতের ভিত্তিতে ‘বাংলাদেশ সাইবার অপরাধপ্রবণতা-২০২৩’ শীর্ষক প্রতিবেদনের তথ্যের ভিত্তিতে এক খবরে বলা হয়েছে, অনলাইন প্ল্যাটফর্মে চাকরি দেওয়ার মিথ্যা আশ্বাসে প্রতারণা, ঋণ দেওয়া, প্রতারণামূলক অ্যাপ ব্যবহারের মতো নতুন সাইবার অপরাধ বেড়েছে। সাইবার বুলিং কিছুটা কমলেও বেড়েছে অনলাইন কেনাবেচায় অপরাধ। ২০২২ সালে ভুক্তভোগীদের ১৪.৬৪ শতাংশই অনলাইনে পণ্য কিনতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছে। অন্যদিকে ভুক্তভোগীদের মধ্যে সামাজিক মাধ্যমের আইডি হ্যাকিংয়ের শিকার সর্বোচ্চ ২৫.১৮ শতাংশই নারী।

advertisement

ইন্টারনেটে আপত্তিকর ছবি প্রচার, ব্ল্যাকমেইল ও প্রতারণার ফাঁদ পাতার মতো সামাজিক অপরাধ থেকে শুরু করে মানবপাচার, মাদক বেচাকেনা, উগ্র সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গি কর্মকাণ্ডের মতো অনেক অপরাধই ঘটে থাকে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করেও ঘটছে সাইবার অপরাধ।

দেশে বিভিন্ন সাইবার অপরাধ দমনে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন ২০০১; তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ২০০৬; পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২ ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ রয়েছে। কিন্তু এসব আইন বিষয়ে সচেতন নয় মানুষ। অনেকেই দেশের তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক আইন সম্পর্কে জানে না।

তথ্যপ্রযুক্তি যত এগোবে, এর অপব্যবহার কিংবা প্রযুক্তিকেন্দ্রিক অপরাধ ততই বাড়বে। তাই তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা সম্প্রসারণের পাশাপাশি সাইবার অপরাধ দমনে আমাদের আরও বেশি সক্রিয় হতে হবে। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে শক্তিশালী সাইবার স্কোয়াড গড়ে তুলতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা গ্রামাঞ্চলেও ছড়িয়ে যাচ্ছে। সারাদেশের থানা পর্যায়ে প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ দমনের সমতা গড়ে তুলতে হবে। একই সঙ্গে এ বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়ানোরও উদ্যোগ নিতে হবে।

ঢাকার সাইবার অপরাধ নিয়ে কাজ করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে চারটি ভিন্ন আইনের অধীনে প্রতি মাসে গড়ে ১৬৯টি সাইবারসংক্রান্ত মামলা হয়েছে। ২০২১ সালে এ সংখ্যা বেড়ে হয় ১৯৪। আর গত বছর এটি আরও বেড়েছে। ২০২২ সালে সাইবারসংক্রান্ত মামলা হয়েছে ৩১৩টি। এর মধ্যে ২৮০টি মামলা তদন্ত করে সিটিটিসি। এসব মামলার মধ্যে ফেসবুকসংক্রান্ত মানহানির ৯১টি ও পর্নোগ্রাফির মামলা ৫৮টি। এর বাইরে হ্যাকিংসংক্রান্ত ৫১টি, ই-ট্রানজেকশনের ৪২, অনলাইন প্রতারণায় ২০ ও তথ্যপ্রযুক্তির মামলা ১৮টি। তথ্যপ্রযুক্তি, অনলাইন প্রতারণা, ই-ট্রানজেকশন ও হ্যাকিংয়ের ঘটনায় দায়ের হওয়া ১৩১টি মামলার সবগুলোর উদ্দেশ্যই ছিল অর্থ হাতিয়ে নেওয়া, যা সাইবারসংক্রান্ত মোট মামলার ৪৭ শতাংশ।

ইন্টারনেট মানুষের জীবনে অপরিহার্য অনুষঙ্গ হয়ে পড়ায় এ সংক্রান্ত অপরাধ রোধে সচেতনতাই হতে পারে সবচেয়ে বড় রক্ষাকবচ। তবে কেবল সচেতনতা তৈরিই যথেষ্ট নয়, পাশাপাশি সাইবার অপরাধ দমনে কঠোর আইন ও অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজার ব্যবস্থাও থাকতে হবে। দেশজুড়ে বিভিন্ন থানায় সাইবার অপরাধে যেভাবে মামলা বাড়ছে এবং সাইবার ক্রাইম ইউনিটে যে হারে মামলা আসছে, সেটি বিবেচনায় নিয়ে অবিলম্বে এ খাতের জনবল বাড়াতে হবে।

মানুষের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ভঙ্গের মাধ্যমে তাদের জীবন বিষিয়ে তোলার পাশাপাশি আর্থিক খাতে সাইবার ক্রাইম বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে গণমানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি, কঠোর আইন ও এর প্রয়োগের মাধ্যমেই কেবল ধুরন্ধর সাইবার অপরাধীরা নিষ্ক্রিয় হতে পারে। অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোর-কিশোরীদের হাতে অ্যান্ড্রয়েডসহ দামি ডিভাইস তুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে অভিভাবকদেরও সচেতন হতে হবে। কারণ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তারা ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার হয়ে জীবনকে হুমকির মুখে ফেলছে। সবার সচেতনতা, কঠোর আইন ও এর কার্যকর প্রয়োগের মাধ্যমে সাইবার সুরক্ষা নিশ্চিত হবে, এটিই প্রত্যাশা।

দিলীপ কুমার আগরওয়ালা : পরিচালক, এফবিসিসিআই, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেড