advertisement
advertisement
advertisement.

জনসচেতনতা ও পরিকল্পিত উদ্যোগেই সমাধান মিলবে

বজ্রপাতে মৃত্যুতে শীর্ষে বাংলাদেশ

২৫ মে ২০২৩ ১২:০০ এএম
আপডেট: ২৪ মে ২০২৩ ১১:৪৬ পিএম
advertisement..

বর্ষাই এ দেশের প্রধান ঋতু। বাংলা কবিতা ও গানের খোঁজ নিলে এই ঋতুর প্রাধান্য বোঝা যায়। বর্ষার শুরুতে ও গ্রীষ্মের শেষ দিকে শুরু হয় কালবৈশাখী। তখন থেকে চলতে থাকে বজ্রপাত। এ তো মেঘ-বৃষ্টিরই অনুষঙ্গ। তাই এ দেশের মানুষ বরাবর বজ্রপাতের সঙ্গে পরিচিত। এতে মানুষ ও গবাদিপশুর মৃত্যুও তারা দেখেছেন। বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত উপন্যাস মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’র শুরুই হয় ঘন বর্ষায় বড় গাছের নিচে আশ্রয় নেওয়া এক ব্যক্তির মৃত্যু দৃশ্যের বর্ণনা দিয়ে। ওই বর্ণনা সাহিত্যে অমর হয়ে আছে। কিন্তু আজ বজ্রপাত বর্ষার এমন ব্যতিক্রমী দুর্ঘটনা নয়। বর্ষা বছরজুড়ে কিছুটা ছড়িয়ে হচ্ছে আজকাল। দেখা যাচ্ছে, বজ্রপাতের পরিমাণও বেড়েছে। এ ছাড়া মৃত্যুর হারও অনেকগুণ বেড়ে গেছে। এক তথ্যে দেখা গেছে, বাংলাদেশে বজ্রপাতে বছরে তিন শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়। এ সংখ্যা সারাবিশ্বে সবচেয়ে বেশি।

কেন বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যুর হার এত বেড়ে গেল দেশে? বিশেষজ্ঞরা বলছেনÑ জনসংখ্যা বেড়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে বজ্রপাতের পরিমাণ বেড়েছে; খোলামাঠে কৃষিকাজ এবং নদীতে মাছ ধরায় যুক্ত মানুষের সংখ্যা ও তাদের উন্মুক্ত স্থানে থাকার সময় বেড়েছে এবং বিপরীতে বাজকে টেনে নেওয়ার মতো বড় গাছের সংখ্যা কমেছে। বজ্রপাতের আশঙ্কা থাকলে কী করণীয়, এ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণার অভাবও এতে মৃত্যুর অন্যতম কারণ। একই সঙ্গে বিশেষজ্ঞরা জানান, মানুষের ওপর বজ্রপাত ঠেকাতে সারাদেশের বজ্রপাতপ্রবণ এলাকায় বেশি করে তালগাছ লাগাতে হবে। এ কথা মানতে হবে যে, আমাদের দেশে বন ধ্বংস করা ও গাছ কাটা চলছে অবাধে। এর মধ্যে এত প্রচার সত্ত্বেও তালগাছ কাটা পড়ছে অনেক। ফলে বাজ পড়ে মৃত্যুর ঘটনা বাড়ছেই।

advertisement

বাংলাদেশের মানুষ দুর্যোগ মোকাবিলা ও প্রতিকূল পরিস্থিতি সামলানো এবং জয় করার ব্যাপারে খুবই সক্রিয় ও সফল। আন্তর্জাতিকভাবে এর স্বীকৃতি রয়েছে। ফলে আমাদের মনে হয়, বজ্রপাত থেকে রক্ষা পাওয়ার বিষয়ে জনগণকে সচেতন করে তুলতে পারলে ভালো ফল পাওয়া যাবে। প্রতিকার সম্পর্কে জানলেই মানুষ নিজেরা দ্রুত উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে। আমাদের ধারণা, কৃষি ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় যৌথভাবে এ ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে। তারা এ কাজে স্থানীয় প্রশাসন এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও নাগরিক সমাজকেও যুক্ত করতে পারেন। আশা করি, সময়ক্ষেপণ না করে দেশজুড়ে তালগাছ লাগানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পাশাপাশি সচেতনতামূলক অন্যান্য কর্মসূচি হাতে নেওয়া হবে এবং প্রকৃতির এমন নিষ্ঠুর খেয়ালি আচরণের অসহায় শিকার হওয়া থেকে দেশের সাধারণ মানুষও রক্ষা পাবে।