advertisement
advertisement
advertisement.

রোহিঙ্গাদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করুন

আর কে চৌধুরী
২৬ মে ২০২৩ ১২:০০ এএম | আপডেট: ২৫ মে ২০২৩ ১১:৫২ পিএম
advertisement..

২০১৭ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা বর্তমানে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্প এবং ভাসানচরে অবস্থান করছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ সরকার বরাবরই জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু দীর্ঘ প্রায় ছয় বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি। ২০১৭ সালের নভেম্বরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশ চুক্তি স্বাক্ষর করলেও পরবর্তী সময়ে ওই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।

জানা গেছেÑ ইয়াবা, মানবপাচার ও হাটবাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে হামলা এবং সংঘর্ষের ঘটনা বাড়ছে; চলছে অস্ত্রের মহড়াও। পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ২১টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এমনকি পাহাড়ে আস্তানা গেড়ে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা অপহরণের ঘটনাও ঘটাচ্ছে। রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরে যাক, সেটি চায় না সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো। তাই প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা শুরু হলেই রোহিঙ্গা শিবিরে বেড়ে যায় সন্ত্রাসী তৎপরতা। মিয়ানমারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন যাতে বাস্তবায়িত না হয়, এ জন্য বিভিন্ন ক্যাম্পের মাঝি বা নেতাদের টার্গেট করছে আক্রমণকারীরা। এ কারণে রোহিঙ্গা নেতাদের অনেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে শিবিরের বাইরে নিরাপদ জায়গায় বাসা ভাড়া করে থাকছেন বলেও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

advertisement

সম্প্রতি চীনের চাপের কারণে মিয়ানমার পাইলট প্রকল্পের আওতায় এক হাজারের কিছু বেশি রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত ৮ মার্চ মিয়ানমারে নিযুক্ত বাংলাদেশ, ভারত, চীন ও আসিয়ানের কয়েকটি দেশসহ আট দেশের কূটনীতিকদের রাখাইনে নিয়ে যাওয়া হয়। ৮ দেশের ১১ কূটনীতিককে মিয়ানমারের মংডু ও সিতওয়ে শহরে অন্তর্র্বর্তীকালীন ক্যাম্পসহ আশপাশের এলাকাও দেখানো হয়েছে।

এদিকে কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প অপরাধীদের আখড়া হয়ে উঠেছে। সাধারণ রোহিঙ্গার সিংহভাগই তাদের কাছে জিম্মি। মাদক ব্যবসার সঙ্গে মিয়ানমারের এ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর গাঁটছড়া সম্পর্ক বহুলভাবে প্রচারিত। অপহরণ, গুম, খুন, ডাকাতিসহ হেন অপরাধ নেইÑ যার সঙ্গে তারা জড়িত নয়। মিয়ানমারের নিষিদ্ধ সংগঠন আরসা, আরএসও, ইসলামি মাহাজ, জমিয়তুল মুজাহিদিন ও আল ইয়াকিনের সশস্ত্র সদস্যরা কক্সবাজারের আইনশৃঙ্খলার জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কাছে গহিন পাহাড়ি এলাকায় তাদের তৎপরতা থাকলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষে সেখানে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে।

অপরাধী প্রতিটি গ্রুপের রয়েছে অবৈধ অস্ত্রের ভাণ্ডার। তাদের হাতে রয়েছে অত্যাধুনিক একে-৪৭সহ চায়নিজ ভারী অস্ত্র। তারা প্রত্যেকেই অস্ত্র পরিচালনায় প্রশিক্ষিত। তারা তাদের সংগঠনের সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে পাহাড়ের গহিনে। সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কখনো পৌঁছাতে পারেনি। তাদের কাছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও অসহায়। বিভিন্ন সন্ত্রাসী সংগঠনের ৩০ মাফিয়ার নেতৃত্বে রয়েছে বিপুলসংখ্যক সন্ত্রাসী। অপরাধ সংঘটনে তারা সশস্ত্র অবস্থায় প্রস্তুত থাকে। কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপের তৎপরতা রহস্যময়।

আশঙ্কাজনক খবর হচ্ছে, রোহিঙ্গা নিধনকারী বলে পরিচিত প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার সরকারও গোপনে রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র গ্রুপ সৃষ্টিতে ইন্ধন দিচ্ছে। এ খবর সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকেও ভাবিয়ে তুলছে। বর্তমানে শিবিরগুলোয় আল ইয়াকিন নামে একটি সশস্ত্র রোহিঙ্গা গ্রুপ বেশ সক্রিয়। আল ইয়াকিনের বেশিরভাগ সদস্য আগে আরএসও নামক সংগঠনে ছিল। আল ইয়াকিনকে অনেক রোহিঙ্গাই আরসা নামে অভিহিত করে। সংগঠনটি অনেকের কাছে একটি বড় ধরনের আতঙ্কের নাম। সাধারণ রোহিঙ্গারা স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে উন্মুখ হলেও সংঘবদ্ধ সশস্ত্র অপরাধীদের নিয়ে গঠিত সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো এতে বাদ সাধছে। রোহিঙ্গাদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে সন্ত্রাসীদের অপতৎপরতা রুখতে সরকারকে তৎপর হতে হবে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হত্যা, অপহরণ, ধর্ষণ, ডাকাতি, মানবপাচার ও মাদক ব্যবসা বেড়েছে। ২০২২ সালে ৩১ জন হত্যার শিকার হয়েছেন। তা গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আগেই তাদের ফিরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা হবেÑ এটিই প্রত্যাশা।

আর কে চৌধুরী : মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষাবিদ; সাবেক চেয়ারম্যান, রাজউক এবং উপদেষ্টা, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম