advertisement
advertisement
advertisement.

জাহাঙ্গীরের মায়ের ওপরই আস্থা
গাজীপুরের নতুন মেয়র জায়েদা খাতুন

আসাদুর রহমান ও ফয়সাল আহমেদ গাজীপুর থেকে
২৬ মে ২০২৩ ১২:০০ এএম | আপডেট: ২৬ মে ২০২৩ ০৯:৫১ এএম
advertisement..


গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে হারিয়ে তিনি মেয়র নির্বাচিত হন। গতকাল রাত দেড়টার দিকে এ নির্বাচনের ফল ঘোষণা করা হয়। ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন জায়েদা খাতুন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আজমত উল্লা খান। তার প্রাপ্ত ভোট ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭। রাত দেড়টায় রিটার্নিং কর্মকর্তার ঘোষিত বেসরকারির ফল অনুযায়ী ১৬ হাজার ১৯৭ ভোটে স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন জয়ী হন। ভোটাররা গতকাল ইভিএমে ভোট দেন। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী গতকালের নির্বাচনে ৪৮.৭৫ শতাংশ ভোট পড়ে।
টেবিল ঘড়ি প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা জায়েদার ছেলে গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি জাহাঙ্গীর। দলের মনোনয়ন না পেয়ে তার মা জায়েদা খাতুনকে প্রার্থী করেন। অবশ্য নিজেও প্রার্থী হয়েছিলেন। কিন্তু ঋণখেলাপির জামিনদার হওয়ায় তার প্রার্থিতা শেষ পর্যন্ত বাতিল হয়ে যায়। আওয়ামী লীগ থেকেও বহিষ্কৃত হন তিনি। কিন্তু ভোটের লড়াইয়ে কার্যত আজমত উল্লার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাহাঙ্গীর। মায়ের পক্ষে দিন-রাত প্রচার চালিয়েছেন। অন্যদিকে আজমত উল্লাও নির্বাচনী প্রচারে যা বলেছেন, এর প্রায় সবই ছিল জাহাঙ্গীরকেন্দ্রিক।
মেয়র পদে আটজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও মূল লড়াই হয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের (সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা) মধ্যে। এদিকে ফল ঘোষণার কেন্দ্র বঙ্গতাজ মিলনায়তনে আসেননি আজমত উল্লা খান। জেলার জ্যেষ্ঠ কোনো নেতাকেও দেখা যায়নি। তবে ফল ঘোষণার শুরু থেকে সেখানে অবস্থান নেন সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। সেখানে তিনি বলেন, ‘আমার মা জিতে গেছে, আমি সব কেন্দ্রে খোঁজ নিয়েছি।’
দ্রুত নির্বাচনের ফল ঘোষণার দাবি জানিয়ে জাহাঙ্গীর বলেন, ‘সেন্টার থেকে খবর পেয়ে আমি রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে এসেছি। কেন তিনি দেরি করছেন, তাড়াতাড়ি যেন রেজাল্ট দিয়ে দেন।’
ভোট শুরু হয় গতকাল সকাল ৮টায়; চলে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। সব কেন্দ্রেই ছিল ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)। ৪৮০টির মধ্যে
বেশির ভাগ কেন্দ্রে নৌকা ও হাতপাখা ছাড়া অন্য কোনো প্রার্থীর এজেন্টকে দেখা যায়নি। তবে ভোট চলাকালে বড় কোনো সহিংসতা ও কারচুপির অভিযোগ ওঠেনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের জন্যও ‘পরীক্ষা’ হিসেবে দেখছিলেন বিশ্লেষকরা। বড় কোনো গ-গোল ছাড়া সেই পরীক্ষা শেষ করতে পেরে সন্তুষ্ট নির্বাচন কমিশন। ভোটগ্রহণ শেষে নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত সন্তুষ্ট, জনগণ ও ভোটাররা সন্তুষ্ট, প্রার্থীরা সন্তুষ্ট, সাংবাদিকরা সন্তুষ্ট।’
এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘গাজীপুরের ভোট মিডিয়াসহ সবাই দেখেছেন। সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ ভোট হয়েছে। প্রার্থী সবাই সন্তুষ্ট, যেই ফলই হোক, সবাই মেনে নেবে বলেছেন।’
সিইসিসহ নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা সকাল থেকেই ঢাকার নির্বাচন ভবনে নিয়ন্ত্রণ কক্ষে বসে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে ভোটের পরিস্থিতি সরাসরি পর্যবেক্ষণ করেন।
ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী আজমত উল্লা খান শুরু থেকেই ভোটের পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে এসেছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার শাহনুর ইসলাম রনি এবং জায়েদা খাতুন তাদের এজেন্টদের ‘ভয় দেখানোর’ অভিযোগ করলেও বড় কোনো অনিয়মের অভিযোগ আসেনি। যান্ত্রিক জটিলতায় ইভিএমে ধীরগতিতে কোথাও কোথাও ভোটারদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে।
গাজীপুরে ভোটার প্রায় ১২ লাখ। ভোট পড়ে ৫০ শতাংশের মতো। তবে নারী ভোটারের উপস্থিতি ছিল বেশি।
সকাল ১০টার দিকে কানাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কেন্দ্রে ভোট দেন জায়েদা খাতুন ও তার ছেলে জাহাঙ্গীর আলম। জায়েদা খাতুন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত নির্বাচনী পরিবেশ ভালো। সুষ্ঠু ভোট হলে ফল যাই হোক, মেনে নেব।’
সকাল ৯টার দিকে টঙ্গীর দারুসসালাম মাদ্রাসাকেন্দ্রে ভোট দেন আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী আজমত উল্লা খান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘সব কিছুর ফয়সালা হয় আসমান থেকে। আমার বিশ্বাস, আমি জয়ী হব, জয়ের বিষয়ে শতভাগ আশাবাদী।’
সরেজমিন ১৬ নম্বার ওয়ার্ডের চান্দনা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজকেন্দ্রের নারী-পুরুষ মিলিয়ে ১৯ বুথের কোথাও নৌকা ও হাতপাখার এজেন্ট ছাড়া অন্য কোনো মেয়রপ্রার্থীর এজেন্ট খুঁজে পাওয়া যায়নি।
কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মো. মাঈনুদ্দিন আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমার এখানে যারা এজেন্টের জন্য আবেদন করেছেন, তাদের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এখন যদি কেউ না আসে, তা হলে তো আমার কিছুই করার নেই।’
একই চিত্র দেখা গেছে ২১ নম্বর ওয়ার্ডের জোলারপার কেন্দ্রেও। কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘আমার কাছে যেই দলের এজেন্ট এসেছে, তাদের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। কেউ না এলে কী আর করা?’
জায়েদা খাতুনের নির্বাচনী সমন্বয়ক ও সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘এজেন্ট না থাকলেও সমস্যা নেই। আমরা দুই লাখ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হব।’
৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার দিনমজুর মো. রেজাউল বিকাল ৩টার দিকে আমাদের সময়কে বলেন, ‘শুনেন, অনেকের বুকে নৌকার ব্যাচ থাকলেও তারা টেবিল ঘড়ির পক্ষে কাজ করছেন। নীরবে অর্ধেকের বেশি মানুষ ঘড়ির পক্ষে ভোট দিয়েছেন। কেউ টেরও পায়নি।’
এদিকে গোপন বুথে প্রবেশ করে ভোটারদের প্রভাবিত করার অভিযোগে ইসির নির্দেশে দুজনকে আটক করে আইনশ্ঙ্খৃলা বাহিনী। বাসন ১০১ নম্বর সোনারবান মেমোরিয়াল হাইস্কুলকেন্দ্র থেকে রিয়াদুল ইসলাম রিয়াজ ও ১০৩ নম্বর উম্মুল কুরা হিফজ মাদ্রাসাকেন্দ্র থেকে মো. আবু তাহেরকে আটক করা হয়। রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম বলেন, একজনকে তিন দিনের কারাদ- এবং একজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
সালনার নাগা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। লাটিম প্রতীকের সাইফুল ইসলাম ও করাত প্রতীকের শাহিন আলমের সমর্থকদের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের মো. আজমত উল্লা খান, টেবিল ঘড়ি প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন, লাঙল প্রতীকে জাতীয় পার্টির এমএম নিয়াজ উদ্দিন, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের গাজী আতাউর রহমান, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ এরশাদ, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের আতিকুল ইসলাম, হাতি প্রতীকে বিএনপি ঘরানার স্বতন্ত্র প্রার্থী রনি সরকার এবং আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী হারুন অর রশিদ ঘোড়া প্রতীকে লড়াই করেছেন।