advertisement
advertisement
advertisement.

গাজীপুরে যে কারণে হারলেন আজমত উল্লা

গাজীপুর প্রতিনিধি
২৬ মে ২০২৩ ০৫:২৩ পিএম | আপডেট: ২৭ মে ২০২৩ ১২:৩৬ এএম
আজমত উল্লা খান
advertisement..

গাজীপুর মহানগরে আওয়ামী লীগের দলীয় বিভাজন শুরু হয়েছে এক যুগ আগে। দীর্ঘদিনেও এর অবসান ঘটাতে পারেনি কেন্দ্র। উল্টো এক পক্ষ অপর পক্ষকে ঘায়েল করতেই ব্যস্ত থাকত অধিকাংশ সময়। এর রেশ পড়েছে এবার সিটি করপোরেশন নির্বাচনে।

গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় দল থেকে বহিষ্কার হন সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। এ সময় বিপুল সংখ্যক কর্মী-সমর্থক ছিল জাহাঙ্গীরের সঙ্গে। বহিষ্কারের পর জাহাঙ্গীরের পর তাদের ওপর খড়গ নেমে আসে। পদধারী দুই শতাধিক নেতাকে শোকজ করা হয়। পরবর্তী কমিটিতে জাহাঙ্গীরের অনুসারীদের স্থান হয়নি। দলীয় কোন্দল চলে গিয়েছিল তৃণমূল পর্যন্ত।

advertisement

এ অবস্থায়  তফসিল ঘোষণার পর দলের তৃণমূলের একটি অংশ জাহাঙ্গীরের পক্ষে চলে আসে।  তারা প্রকাশ্যে নৌকার কাজ করলেও গোপনে জাহাঙ্গীরের পক্ষে কাজ করেন। এ অভিযোগে নির্বাচনের প্রচারণার সময়ও দলের তিনজন নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। শোকজ করা হয় ৮ নেতাকর্মীকে। নির্বাচনের দিন কেন্দ্রগুলোতে নৌকার কর্মীদের আধিক্য থাকলেও দিনশেষে সেখানে জয়ী হন জায়েদা খাতুনের ঘড়ি। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ভোট দেন জায়েদা খাতুনকে। দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পরাজয়ের অন্যতম কারণ দলীয় বিভাজন।

আরও পড়ুন: ‘আমি বেঁচে থাকতে তাদের কোনো ক্ষতি হতে দেব না’

এছাড়া তফসিল ঘোষণার পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অতি আত্মবিশ্বাসী হয়ে পড়েন। তারা নিশ্চিত ছিলেন শেষ পর্যন্ত জাহাঙ্গীরের মা নির্বাচনি মাঠ ছেড়ে যাবেন। কিন্তু নানা চাপেও তিনি মাঠ ছাড়েননি। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় জাহাঙ্গীরের কর্মী-সমর্থকদের ওপর নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করা হয়। বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে পুলিশের অভিযান ছিল প্রতিনিয়ত ঘটনা। এছাড়া নৌকা প্রার্থীর বিপক্ষে ভোট না দিতে ভোটারদের হুমকি দেওয়া হয়। এতে তৃণমূল ভোটারদের মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে নেতিবাচক ধারনার জন্ম হয়।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নির্বাচনি প্রচারণায় ছিল না কোনো পরিকল্পনার ছাপ। মহানগরের স্থানীয় নেতাকর্মীদের কাজে না লাগিয়ে বিভিন্ন জেলা উপজেলার নেতাকর্মীদের নিয়ে আসা হয় নির্বাচনি প্রচারণার কাজে। বিচ্ছিন্নভাবে তারা প্রচারণা চালান।  এতে স্থানীয় ভোটারদের মধ্যে ক্ষোভের তৈরি হয়। এসব নানা ঘটনা আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পরাজয়ের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

এছাড়া একাই নানা পথসভায় বক্তব্য দিয়ে গেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খান। তিনি প্রায়ই একই ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন। তার বক্তব্যের প্রধান বিষয় ছিল জাহাঙ্গীরের দুর্নীতি নিয়ে, নগরভবনের দুর্নীতি নিয়েও তার পরিবারকে নিয়ে। সরকারের নেওয়া নানা উন্নয়ন প্রকল্প তিনি ভোটারদের সামনে তুলে ধরতে পারেননি।  নগরীর উন্নয়ন নিয়ে তার ভাবনাতে ছিল না কোনো পরিকল্পনার ছাপ। শুধু বিরোধীদলের মতো নেতিবাচক প্রচার চালিয়েছেন। তার এ ধরনের বক্তব্যে নাখোশ ছিলেন নগরীর অনেক মানুষ। প্রচারণায় ডিজিটাল পদ্ধতির ব্যবহারেও তিনি পিছিয়ে ছিলেন।  তরুণ প্রজন্ম ও নারীদের আকৃষ্ট করতে  কোনো ভূমিকায় নিতে পারেননি আজমত উল্লা খান।

আরও পড়ুন: নির্বাচনে হেরে যা বললেন আজমত উল্লা খান

আজমত উল্লার এলাকা টঙ্গীতে প্রবেশে বারবার বাধার শিকার হয়েছেন জায়েদা খাতুন। তার গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে, তার কর্মীদের রক্তাক্ত করা হয়েছে। এভাবে প্রচারণায় বাধা ভোটারদের মধ্যে একটা নেতিবাচক মনোভাব তৈরি করে। যার প্রতিফলন ঘটে নির্বাচনের নীরব ভোটে।

দলীয় প্রার্থীর পরাজয়ের বিষয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর অন্যতম নির্বাচনী  পরিচালনাকারী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লাহ মণ্ডল আমাদের সময়কে বলেন, ‘দলের অনেকেই সামনে নৌকার পক্ষে কাজ করেছেন। গোপনে অবস্থান  নিয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে। এছাড়া বিএনপির ভোটও গেছে স্বতন্ত্র প্রার্থীর বাক্সে। নানা কারণে এখানে আমাদের পরাজয় হয়েছে। তবে পরাজয়ের পেছনে মূল কারণ কি তা আমরা তদন্ত করে বের করব।’